Tuesday 08 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭% শুল্ক, রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:০৫ | আপডেট: ৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:১৬

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে রফতানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেদেশের মানুষের ভোগ হ্রাস ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে পোশাকের রফতানিতে বড় ধাক্কা আসতে পারে। পোশাক রফতানিকারকসহ ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা বড় ধরণের হুমকিতে পড়বে। আমেরিকার বাজারে রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাবের ধাক্কা লাগতে পারে ইউরোপসহ অন্যান্য বাজারেও। অর্থনীতিবিদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালাগ (সিপিডি) এর গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সারাবাংলাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের ফলে উচ্চমূল্যের কারণে মার্কিন ভোক্তারা তূলনামুলক পণ্য কম কিনবেন। সেখানে উচ্চমূল্যস্ফীতি হবে। ক্রয়ক্ষমতাতেও তা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশের মতো অন্য দেশ যারা এ ধরণের পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করে, তাদের পণ্য রফতানিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমরা যে সব পণ্য রফতানি করে থাকি সেসব নিম্নমানের পণ্য, কিনে থাকেন স্বল্প আয়ের মানুষেরা। মূল্যস্ফীতি বা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হলে এ ধরণের ক্রেতারা তাদের কেনাকাটায় কাটছাট করবেন। উচ্চকর আরোপের ফলে বেশি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের রফতানিকারদের উপর।

তিনি আরও বলেন, যারা আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, শুল্ক আরোপের ফলে যদি তারা আরও দাম কমিয়ে দিতে চান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি রফতানিকারকদের উপর বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে হয়। উচ্চশুল্কের কারণে যেহেতু মার্কিন বাজারে সব দেশের রফতানিই কমবে, ফলে সব দেশই চাইবে ইউরোপসহ অন্য দেশে রফতানি বাড়াতে, ফলে এর প্রভাবও পড়বে বাংলাদেশের উপর। সামগ্রিকভাবে আমরা ইউরোপে যে রফতানি করি সেখানেও একটা প্রভাব পড়বে।

গবেষণা পরিচালক আরও বলেন, বলা হচ্ছে মার্কিন পণ্যের শুল্ক উঠিয়ে নিলে তারা শুল্ক কমিয়ে দিতে পারে। কিন্তু শুল্ক তুলে নিলেই যে আমাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি অনেক কমে আসবে তা মনে হয়না। কারণ এ ধরণের পণ্য আমরা অন্যান্য দেশ থেকেও আমদানি করে থাকি। ফলে শুল্ক তুলে নেওয়া বা বিবেচনা করার কথা যেটি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সেটি আমার কাছে মনে হয় অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত হবে। বরং অন্যান্য দেশ কিভাবে এই প্রভাব মোকাবিলা করে তা আমাদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী দেখেশুনে উদ্যোগ নিতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. মাসরুর রিয়াজ সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের অর্থনীতির মূল কৌশল যেহেতু এক্সপোর্ট রিলেটেড গ্রোথ, রফতানিকারক দেশ হিসাবে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে একেবারে শুল্ক ৩৭ শতাংশে বেড়ে যাওয়া, তৈরি পোশাক খাততো বটেই, উদীয়মান খাত চামড়া ও ওষধ এগুলোর প্রকৃত রফতানিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।

তিনি বলেন, ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পরপরই আমাদের আসলে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিলো, অর্থনৈতিক কৌশল বিশ্লেষণ করে কোথায় কতো শতাংশ বাড়লে কি ধরণের ক্ষতি হতে পারে, পালটা সৌজন্যমূলক পদক্ষেপ নিলে বা আগে থেকেই আমেরিকান পণ্যের উপর শুল্ক কমিয়ে নিলে বা আমেরিকার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করলে, হয়তো কিছুটা হলেও শুল্ক কম আরোপ করা হতো। জরুরিভিত্তিতে এখন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালাতে হবে, প্রথম বুঝতে হবে তাদের মনোভাবটা কি, কোন জায়গায় কোন ধরণের উদ্যোগ নিলে সেটা তাদের কাছে গ্রগণযোগ্য হবে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সেই ধরণের উদ্যোগ নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বেসরকারি খাত ও সরকার মিলে যারা আমাদের পোশাকের আমদানিকারক ও বড় বড় ব্রান্ড, যতোক্ষণ আমেরিকা শুল্ক না কমায়, ততোক্ষণ যাতে দাম না বাড়ায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ দাম বাড়লে এসব পণ্যের চাহিদা কমে যাবে। এই ৩৭ শতাংশ শুল্ককে কিভাবে আমরা এভসর্ভ করে নিতে পারি, কেউ এককভাবে সেটা এভসর্ভ না করে রিটেলার ব্রান্ড ও রফতানিকারক মিলে এভসর্ভ করা যায় কিনা, কিভাবে এই চাপটা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়, সেই কৌশল নির্ধারণ করা যেতে পারে। মধ্যমেয়াদে আমাদের বেশ কিছু সক্ষমতা বাড়াতে হবে যাতে ব্যবসা ও বাণিজ্যের খরচ কমে আসে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের (সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশের উপর ৩৭ শতাংশ পালটা শুল্ক আরোপ করেছে, এটি খুবই উদ্বেগের ব্যাপার। আমেরিকার সঙ্গে যে দেশগুলোর বাণিজ্য ঘাটতি আছে, সেই দেশগুলোকেই টার্গেট করা হয়েছে। ঘাটতির বাইরেও যে দেশগুলো রয়েছে, সেই দেশগুলোর উপরেও সমান হারে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। আমাদের বড় বাজার ইউএস-এ। বড় বাজারের বড় অংশই গার্মেস্টস রফতানি। এ ধরণের একটি অতিরিক্ত শুল্কের প্রভাব আমাদের দেখতে হবে, কারণ বিভিন্ন দেশের উপর বিভিন্ন হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। কমবেশি দৌড়ের মধ্যে কোন দেশের সাথে কোন দেশের তুলনা হবে, কোন দেশ একটু বাড়তি সুবিধা পাবে, ডাটা এনালাইস করে কিংবা বাস্তব অভিজ্ঞতা দেখে, তা আমাদের বুঝতে হবে।

তিনি বলেন, কমন সিদ্ধান্তে আমরা পৌছতে পারি যে, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তাময় বৈশ্বিক ব্যবস্থায় পড়তে যাচ্ছি, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যে এটি কোনভাবেই সহায়ক হবেনা। এখন যে কোনো দেশ ইউএস এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে অন্য দেশের উপর শুল্ক আরোপ করতে পারে। রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অসম্ভব রকমের পোশাক নির্ভর। ইউএস এর বাজারে বড় ধরণের ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইউএস এর বাজারে পোশাক রফতানি কমবে। শুধু পোশাক নয়, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং ওষুধ পণ্যের রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, এসব ক্ষেত্রে বড় ধরণের ধাক্কা খেতে পারে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ঘোষণা করেছিলেন শুল্ক আরোপ করবে, অনেক দেশ সেভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক ইস্যু সমাধানে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে বলে দৃঢ় আশা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। যেহেতু এটি আলোচনাযোগ্য, তাই আমরা আলোচনা করব এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা সর্বোত্তম সমাধানে পৌঁছাতে পারব।’ বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) ব্যাংককে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে বাসসকে এ কথা জানান।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রধান দুই রফতানি বাজারের একটি যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকের একটি বড় অংশ রফতানি হয় দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে বাংলাদেশের রফতানি হয় প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলার, যা প্রধানত তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানি দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (৭৩৪ কোটি) ডলারে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এনজে

নেতিবাচক প্রভাব যুক্তরাষ্ট্র রফতানি শুল্ক

বিজ্ঞাপন

খুলনায় ৩ যুবককে কুপিয়ে জখম
৮ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৫৪

আরো

সম্পর্কিত খবর