চলনবিলে ২৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী তিসিখালি মেলা
৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৫২ | আপডেট: ৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:১২
সিংড়া (নাটোর): চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়ায় হযরত ঘাসী দেওয়ান (রহ:) এর মাজারে দুইদিন ব্যাপী ২৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী তিসিখালি মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সকাল থেকে মেলা চলবে শনিবার (৫ এপ্রিল) দিনব্যাপী।
তিসিখালি মেলা ২৫০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে বয়ে চলা এক প্রাণবন্ত উৎসব। ‘তিসিখালি মেলা’ প্রতি বছর হাজারো মানুষের সমাগমে পরিণত হয় এক মিলন মেলায়। সিংড়া উপজেলার চলনবিলের সবুজ ফসলি মাঠের বুকচিরে বয়ে চলা খালের পাশে ঘাসী দেওয়ান (রহ:) মাজার চত্বরে শতাব্দী প্রাচীন এই মেলায় প্রতি বছর আশেপাশের গ্রাম ও দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত, দর্শনার্থী এবং ব্যবসায়ী এখানে সমবেত হন।
এই মেলা শুধু একটি বিনোদনের স্থান নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্থানীয় আচার-অনুষ্ঠানের এক অনন্য মিশেল ঐতিহ্যবাহী এ মেলাকে কেন্দ্র করে উৎসব পালন করে আসছেন ডাহিয়া, হিজলী, সাতপুকুরিয়াসহ এ অঞ্চলের অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ। গ্রামীণ এই মেলাকে কেন্দ্র করে বাপের বাড়িতে নাওর আসে মেয়েরা।

দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত, দর্শনার্থী এবং ব্যবসায়ী এখানে সমবেত হন।
প্রতি বছর চৈত্র চন্দ্রিমার ৬ ও ৭ তারিখে দুই দিনব্যাপী নাটোরের সিংড়া উপজেলা সদর হতে ৮ কিলোমিটার পূর্বে চলনবিল অধ্যুষিত তিসিখালি পীর ঘাসী দেওয়ান (রহ:) মাজার চত্বরে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার (৪ মার্চ) সকাল থেকে শুরু হলেও মেলায় অত্যাধিক লোকের আগমণ ঘটে শনিবার (৫ মার্চ) দিনব্যাপী। মেলাকে ঘিরে প্রতিবছর রাতভর চলে বাউল গান। স্থানীয় ও অতিথি শিল্পীরা বাউল গান পরিবেশন করেন, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
এছাড়া বিচ্ছেদ গান এবং অন্যান্য লোকগীতির পরিবেশনাও মেলায় দেখা যায়। এই মেলা স্থানীয় সংস্কৃতি ও সঙ্গীতের সমৃদ্ধি তুলে ধরে, যা দর্শকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়। ভিন্ন ভিন্ন এসব গানের আসর থেকে গানের মোহনীয় সুর মুখরিত করে মেলা প্রান্তর।
এ মেলার আরেকটি বড় আকর্ষণ মাজার প্রাঙ্গণে মানত করে হাঁস, মুরগী, ছাগল ও কবুতর দান করা। মাজার ভক্তদের দান করা এসব হাঁস, মুরগী ও কবুতর ধরতে অনেক দর্শনার্থীরা মরিয়া হয়ে উঠেন।

এই মেলা স্থানীয় সংস্কৃতি ও সঙ্গীতের সমৃদ্ধি তুলে ধরে, যা দর্শকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়।
নাটোর সদর থেকে আসা কিশোর মাইনুল ইসলাম বলেন, মেলায় এসে অনেক আনন্দ করেছি। একটি ব্যাটারিচালিত গাড়ি কিনেছি খেলার জন্য। সিংড়া পৌর শহরের রকি ও মাজিদুল নামের দুজন দর্শনার্থী জানান, দর্শনার্থী ও দোকানপাট প্রতি বছরের তুলনায় কম। তবে মেলার পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো।
রাহাত আহমেদ ও মো. লিটন নামের দুজন দর্শনার্থী জানান, এ বছর মেলার পরিবেশ খুবই সুন্দর। প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর সুন্দর একটি আয়োজনে মেলা সম্পন্ন হচ্ছে। তারা উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাজার কমিটির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, মেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উপজেলা প্রশাসনের একটি পরিচালনা কমিটি মাঠে রয়েছে। তাছাড়া পুলিশ, সেনাবাহিনী, গ্রামপুলিশ ও আনসার সদস্যরা নিযুক্ত রয়েছেন। এখানে কোনো অনৈতিক ও অবৈধ কার্যক্রম চলবে না।
সারাবাংলা/এনজে