সংকটাপন্ন ভৈরব নদ, খননের নামে ২৭৯ কোটি টাকা অপচয়
৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:৩৭
যশোর: দখল-দূষণে সংকটাপন্ন অবস্থায় পৌঁছে গেছে যশোরের ভৈরব নদ। শুকিয়ে ‘মরা খালে’ রুপ নিচ্ছে এই নদ। যে যেভাবে পারছে— করছে দখল। এদিকে, খননের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ নয়-ছয় হওয়ার অভিযোগ উঠলেও তদন্ত-মামলা কিছুই হয়নি। ‘জলে গেছে’ ২৭৯ কোটি টাকার প্রকল্প। অনিয়ম-দুর্নীতি, দখল-দূষণের এমন পরিস্থিতিতেও নদ বাঁচাতে যথাযথ উদ্যোগ নেই। এতে সচেতন মহলে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
বছরের পর বছর অব্যাহতভাবে ভৈরব নদ দখল হতে থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে দখলদারদের প্রকৃত সংখ্যা ও তালিকা নেই। এক সময় ১২৭টি প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হলেও দিনদিন ওই তালিকা ছোট হয়ে আসছে। বর্তমানে রাজনৈতিক চাপ না থাকলেও কেনো দলখমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি তার কোনো ব্যাখ্যাও পাউবো দিতে পারেনি।
জানা গেছে, ভৈরব নদ বাঁচাতে ও জোয়ারভাটা ফিরিয়ে আনতে ২০১৬ সালে ২৭২ কোটি ও পরে আরও বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ২৭৯ কোটি টাকা ব্যায়ে ৫ বছর মেয়াদী খনন কাজ শুরু হয়। নয়-ছয়ের মাধ্যম্যে ২০২২ সালে কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। কাছ শেষ হলেও ভৈরব নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা যায়নি।
কাজ চলমান থাকাকালীন থেকে শুরু করে পরবর্তী বিভিন্ন সময় খননের অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশিত হলেও হয়নি তদন্ত। পার পেয়ে যায় অপরাধীরা।
খননের পরেও ভৈরব নদ এখন ‘মরা খাল’ মেলেনি সুফল। ‘কাজে আসেনি ২৭৯ কোটি টাকার প্রকল্প। এখন ভৈরব যেনো ‘বদ্ধ জলাশয়’।
অভিযোগ উঠেছে, পাউবোর অদূরদর্শীতায় শত কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। পকেট ভরেছে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের।রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের খুশি করে সব কিছু জায়েজ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলেছেন, এখন আর আগের মত রাজনৈতিক চাপ নেই। তবুও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ হচ্ছে না। তাদের প্রত্যাশা ছিল অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবে, টাকা লোপাটকারীরা দুদকের জালে ধরা পড়বে, বিচার হবে। কিন্তু তা না হওয়া ভৈরব নদ নিয়ে আন্দোলন করছেন যারা তাদের মনেও ক্ষোভ।
বসুন্দিয়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, খননের আগে আফ্রা ঘাট থেকে ছাতিয়ানতলা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় প্রবল জোয়ার উঠত। এখনো জোয়ার ওঠে। তবে গতি বেশ কম। নদের দুপাশে পানি বেশি, মাঝখানে কম। নদের ওপর থাকা সেতুগুলোর পাশের মাটি না কাটায় জোয়ারের পানির গতি নেই।
রাজারহাট এলাকার লোকজন জানান, এখানকার ব্রিজের কারণে এতদিন জোয়ারভাটা হয়নি বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করতো কিন্তু ব্রিজ হয়েছে বহুদিন, এখনো কেনো জোয়ারভাটা হয়না সেটি আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। ব্যাখ্যা দিতে পারবে পাউবো।
যশোর পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এমদাদুল হক বলেন, ‘ভৈরব নদের শহরের অংশে ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে দায়ি করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও জরিমানা করা হলেও কোনো লাভ হয়নি। চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আরও কয়েকটি বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
যশোর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান জানান, ভৈরব নদ খননে দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতার বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্যে তিনি এবং তৎকালীন দুর্নীতি দমন কমিশন যশোরের সমন্বিত জেলার উপ-পরিচালকের যৌথ স্বাক্ষরে ৩টি আবেদন দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে পাঠালেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। চিঠি গায়েব হয়ে যায়।
যশোর দুদুক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) আল আমিন জানান, ভৈরব নদের অনিয়মের বিষয়ে অনুসন্ধানের কোনো চিঠি দেওয়া হয়েছে কিনা তা তার জানা নেই।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, অতীতে উচ্ছেদের সময় ঝামেলা হয়েছিল। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে যাওয়া তখন দড়াটানার স্ক্যান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা করে। আবারও উচ্ছেদ অভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাজারহাটে নতুন ব্রিজ হলেও তলদেশে রয়েছে বাঁধ যা সরানোর দায়িত্ব ব্রিজ নির্মাণ কর্তৃপক্ষের। ওই বাঁধের কারণে পানি শহরের অংশে প্রবেশ করতে পারছে না।
৫ আগস্টের পর কিছু কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী।
সারাবাংলা/এসআর
অনিয়ম-দুর্নীতি টাকার অপচয় দখল-দূষণ পাউবো পানি উন্নয়ন ভৈরব নদ যশোর