Saturday 12 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২০০০ কোটি টাকার পানি শোধনাগার প্রকল্প, গ্রাহক পাচ্ছে না ওয়াসা

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:২৭ | আপডেট: ৬ এপ্রিল ২০২৫ ০১:৫০

ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি পানি শোধনাগার নির্মাণ করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। যেখানে দিনে ছয় কোটি লিটার পানি পরিশোধন করা যাবে। কিন্তু সেই পানি কেনার গ্রাহক পাচ্ছে না ওয়াসা। কয়েকটি শিল্পকারখানা ও আবাসিক এলাকা মিলিয়ে মাত্র দেড় কোটি লিটার পানি সরবরাহ করতে পারছে সংস্থাটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রকল্প নেওয়ার আগে যথাযথভাবে উপযোগিতা যাচাই না করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেয়েছিল প্রকল্পটি। তখন প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে প্রকল্পের শুরুতে ভূমি জটিলতায় পড়তে হয় ওয়াসাকে। এজন্য তিন বছর ধরে আটকা পড়ে থাকে।

বিজ্ঞাপন

কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার মধ্যবর্তী জ্যৈষ্ঠপুরা এলাকায় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ শুরু করে। ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রথম সংশোধিত আকারে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে ১৯৯৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা করা হয়। প্রকল্পের ৮২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক। বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে ১১৫০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা নিজস্ব তহবিল থেকে দিয়েছে ২০ কোটি টাকা।

নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার মার্চের মাঝামাঝি থেকে ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার থেকে বাণিজ্যিকভাবে পানি সরবরাহ শুরু করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।

বিজ্ঞাপন

সূত্রমতে, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে অর্থাৎ দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়া এলাকায় গড়ে ওঠা কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, সিইউএফএল, কাফকো ও পটিয়া ইন্দ্রপোলের লবণ কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল এবং আবাসিক এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ করা।

ওয়াসার লক্ষ্য ছিল, তারা ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার থেকে ছোট-বড় মোট ১৩টি শিল্পাঞ্চলে বাণিজ্যিক সংযোগ দেবে, যাতে চার কোটি লিটার পানি সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর দুই কোটি লিটার বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার আবাসিক গ্রাহকদের মাঝে সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের পর দেখা যাচ্ছে, নির্ধারিত গ্রাহকদের অনেকের কাছ থেকেই সাড়া মিলছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণ চট্টগ্রামে মাত্র দুটি শিল্পকারখানা ও হাজারখানেক আবাসিক গ্রাহককে পানি সরবরাহ করছে ওয়াসা।

সূত্রমতে, শোধনাগার প্রকল্পের কাজ চলমান থাকার সময়ই চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহক না পাওয়ার বিষয়টি ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছিল। কারণ, প্রকল্পের শুরুতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কারখানা পানি নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়ার পর অধিকাংশই পিছিয়ে যায়। শুধুমাত্র প্রথম থেকে সাড়া দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত কাফকো এবং ড্যাপ (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট) কারখানা, যাদের এখন পানি সরবরাহ করছে ওয়াসা।

এ ছাড়া, গ্রামাঞ্চলে থাকা লোকজন এখনও ওয়াসা থেকে পানি কিনে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত নন, যার ফলে আবাসিক এলাকায় পানি সরবরাহে ওয়াসার লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম ওয়াসার এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্প চলমান অবস্থায় আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, এটা একটা লস প্রজেক্ট হচ্ছে। অন্তত শুরুতে এ প্রকল্পের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু সেসময়কার ওয়াসার নিয়ন্ত্রকদের আমরা সেটি বোঝাতে পারিনি বা বোঝালেও কোনো লাভ হতো না। কারণ, তখন প্রকল্পের কাজ অলরেডি ৫০ ভাগেরও বেশি শেষ হয়ে গেছে।’

ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা যতটুকু, তার ৮০ শতাংশ বাণিজ্যিক এবং ২০ শতাংশ আবাসিকভাবে পানি সরবরাহের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। শুরুতে পর্যাপ্ত গ্রাহক পাওয়া যাবে না, এটা আমরা জানতাম। তবে এটা একটা কন্টিনিয়াস প্রসেস। দিন যত যাবে, ডিমান্ড বাড়বে, আমাদের সরবরাহও বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিল্পাঞ্চলে আস্তে আস্তে আমাদের পানিই সরবরাহ হবে। তবে গ্রামাঞ্চলে থাকা লোকজন সাধারণত গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করে। তাদের কাছ থেকে ডিমান্ডটা পেতে হয়তো আরও একটু সময় লাগবে।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

ওয়াসা গ্রাহক চট্টগ্রাম পানি শোধনাগার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর