খুরুশকুলে কিশোরকে অপরহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, আটক ১
৫ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৫৪
কক্সবাজার: জেলার সদর উপজেলায় ইমাম হোসেন (১৭) নামে এক কিশোরকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দিয়েছে অপহরণকারীরা। পরে মুক্তিপণের টাকা পাঠানো সেই মোবাইল নাম্বারের সূত্র ধরে মোবারক হোসেন (২০) নামে এক অপহরণকারীকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় জনতা।
শনিবার (৫ এপ্রিল) সকালে উপজেলার খুরুশকুলের পূর্ব হামজার ডেইল এলাকার ইসলামাবাদের বওনাকাটায় এ ঘটনা ঘটে। তবে এ অপহরণের ঘটনার মূলহোতা হৃদয় (২০) ও জোসেল প্রকাশ বুলু (২১) নামে দুই জন পলাতক রয়েছে।
কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মুক্তিপণ দিয়ে অপহরণ থেকে উদ্ধার হওয়া কিশোর ইমাম হোসেন বওনাকাটায় মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনের ছেলে। আর অপহরণের ঘটনায় জনতার হাতে আটক হওয়া মোবারক হোসেন টেকনাফের কাঞ্চর পাড়া বটতলী এলাকার মৃত ফরিদ আলমের ছেলে। সে বওনাকাটা এলাকায় বোনের বাসায় অস্থায়ীভাবে অবস্থান করছে। অপহরণের ঘটনার মূলহোতা পলাতক হৃদয় হলেন ওই এলাকার ইলিয়াছ বাবুর্চির ছেলে আর জোসেল প্রকাশ বুলু হলো একই এলাকার শুক্কুরের ছেলে।
মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার হওয়া ইমাম হোসেনের বাবা জালাল উদ্দিন জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই এলাকার হৃদয় ও তার সহযোগিরা বওনাকাটা স্টেশন থেকে ছুরি ধরে তার ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। তাকে পাহাড়ের একটি ঘরে আটকিয়ে রাখে নির্যাতন করে। রাতে পরিবাকে ফোন করে প্রথমে ১ লাখ, পরে ৫০ হাজার। শেষে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। নয়ত তার ছেলেকে খুন করার হুমকি দেয়। পরে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়া হয় (০১৮৩৭৩৮২০৬৩) নগদ নাম্বারে। অপহরণকারীরা তাকে রাতে ছেড়ে দেয়। কিশোর ইমাম হোসেনকে পরিবার তাকে রাত ৩ টায় বওনাকাটা স্টেশনে পায়।
এদিকে যেই নাম্বারে মুক্তিপণের টাকা দেওয়া হয়েছে সেই নাম্বারের ট্রুকলের মাধ্যমে সিম ব্যবহারকারীর ছবি পাওয়া যায়। সেই সূত্র ধরে ভোরের দিকে বওনাকাটা স্টেশন থেকেই মোবারক হোসেনকে জনতা আটক করে।
মোবারক হোসেনও স্বীকার করে অপহরণের ঘটনা। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হৃদয় হচ্ছে এই অপহরণের মূলহোতা। হৃদয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী মোবারক ও জোসেল প্রকাশ বুলু অপহরণের সঙ্গে ছিল। মুক্তিপণের টাকা মোবারকের নগদ নাম্বারে গ্রহণ করা হলেও তা হৃদয়ের কাছে।
ওই পুনর্বাসিত এলাকার সচেতন যুবক নুর মোহাম্মদ জানান, তারা প্রতিনিয়ত অপহরণসহ নানা অপরাধ আতঙ্কে রয়েছে। ওখানে পুনবাসিত লোকজনের বহুমুখি সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা হচ্ছে দ্রুত প্রশাসনের সহায়তা না পাওয়া। এই অপহরণের ঘটনাতেও তারা পুলিশের সহযোগিতা পেয়েছে অনেক দেরিতে।
জাকির হোসেন নামে আরেক পুনবাসিত বাসিন্দা জানান, এটি পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে অপহরণকারীরা সক্রিয়। তারা নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলেও পাওয়া যায় অনেক দেরিতে। এ ঘটনায় ৯৯৯ এ রাতে ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা পাওয়া গেছে সকাল ৮ টায়।
ইসলামাবাদের সমাজ কমিটির সভাপতি জসিম উদ্দিন জানান, তাদের এলাকা অনিরাপদ। ওখানে প্রতিনিয়ত অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটে। ঝুঁকি নিয়ে এলাকার যুবকেরা পাহারা দেয়। তাদের ওই এলাকায় একটা ন্যুনতম পুলিশ বক্স হলেও প্রয়োজন।
ঘটনাস্থলে যাওয়া কক্সবাজার সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুমন জানান, এলাকাবাসীর দেওয়া খবরের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ইমাম হোসেন নামে অপহৃত কিশোরকে উদ্ধার অবস্থায় পায়। এ ছাড়া অপহরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত মোবারক হোসেন নামে একজনকে জনতা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। প্রাথমিকভাবে ওই যুবকও স্বীকার করেন সে এই অপহরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া হৃদয় ও জোসেল নামে দুই জনের নাম প্রকাশ করে। মোবারক হোসেনকে আটক করা হয়েছে এবং এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের আইনের আওতায় আনাসহ পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া চলছে।
সারাবাংলা/এইচআই