Monday 07 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজনীতির মাঠে এনসিপিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে বিএনপি

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০০ | আপডেট: ৬ এপ্রিল ২০২৫ ১০:২৩

বিএনপি ও এনসিপি। লোগো কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: হালের আলোচিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) রাজনীতি মাঠে হালকাভাবে নিচ্ছে না দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর গঠিত এনসিপিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে তারা। তারুণ্যনির্ভর এনসিপিকে ভোটের মাঠেও শক্ত প্রতিপক্ষ মনে করছে বিএনপি। এ কারণে এনসিপির কর্মকাণ্ডের ওপর চোখ রাখছে দলটি।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতে রাজনীতিতে যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে, প্রকৃতির সাধারণ নিয়মে সেটি কোনো না কোনো পক্ষ বা শক্তির দ্বারা পূরণ হবে। এই মুহূর্তে সেই শক্তিটাই হচ্ছে এনসিপি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র ও তরুণদের সমন্বয়ে গঠিত এনসিপি তাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ঠিক রেখে গণতান্ত্রিক রীতি-রেওয়াজ মেনে রাজনীতি করলে সামনের দিনগুলোতে বিএনপির জন্য শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্র ও তরুণদের সমন্বয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। আমাদের কাছে সবদলই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এনসিপির গুরুত্বটা একটু বেশি। কারণ, স্বৈরাচার পতনে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন এই দলের নেতৃত্ব পর্যায়ে আছেন। মেধার সঙ্গে অভিজ্ঞতা যোগ হলে এরা ভালো কিছু করতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে বিকল্প কোনো দল বা শক্তি রাজনীতির মাঠে সক্রিয় না থাকায় সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়েই নৌকা-ধানের শীষ থেকে একটাকে বেছে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে সারাদেশে প্রভাব সৃষ্টি করার মতো রাজনৈতিক দল, শক্তি ও নেতৃত্বের সন্ধান তারা পায়নি। চব্বিশের দুর্বার গণআন্দোলনের পর জন্ম নেওয়া এনসিপি হতে পারে সেই বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি, যার প্রতীক্ষায় ছিল দেশের সাধারণ মানুষ।

বিজ্ঞাপন

অবশ্য এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ে থাকা নেতাদের কিছু কর্মকাণ্ড, বিলাসী জীবন, অনর্থক কথা-বার্তা, বাগারম্বড়তা, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ, অহেতুক শো-ডাউন, প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ব্যাপারে অসম্মানজনক উক্তি, টিকা-টিপ্পনী- সর্বোপরি দলটির কোনো ‘কর্মসূচি’ না থাকায় রাজনীতির দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়া তাদের জন্য কঠিন হবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ওদের তো কোনো কর্মসূচি নেই। ওরা কী করতে চায়, কীভাবে করতে চায়, সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার না। যেমন- দল গঠনের সময় শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও নিজস্ব কর্মসূচি আছে। কিন্তু, এনসিপির কোনো কর্মসূচি আমরা দেখছি না। এই বিষয়গুলো নিয়ে ওদের কাজ করতে হবে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এনসিপির আহ্বায়ক পদে থাকা নাহিদ ইসলাম ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কের পদে থাকা সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব জুলাই আন্দোলনের সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এদের মধ্যে নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টার পদ ছেড়ে এনসিপির নেতৃত্ব নিয়েছেন। তার এই সাহসী সিদ্ধান্ত তরুণদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে রাষ্ট্রীয় পদ, সুযোগ-সুবিধা জলাঞ্জলি দিয়ে রাজনীতির মাঠে নেমে পড়া নাহিদ ইসলাম ভোটের মাঠে তরুণ ভোটাদের সমর্থন পাবেন, যা মোট ভোটের এক চতুর্থ অংশ।

সদস্য সচিব পদে থাকা আখতার হোসেন এবং সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিবের পদে থাকা তাসনিম জারা ও নাহিদা সারওয়ার নিবাও ভোটের মাঠে পিছিয়ে থাকবেন না- এমনটিই ধারণা অনেকের। তারা বলছেন, এদের মধ্যে আখতার হোসেন জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে তরুণ ভোটারদের বড় একটি অংশের আইডল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা করেছেন। নিজ এলাকায় শো-ডাউনের সময় বিপুল সংখ্যক তরুণকে পাশে পেয়েছেন তিনি। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও ছিল তার সঙ্গে। আগামী নির্বাচনে তার আসনে তিনি বড় একটা ফ্যাক্টর হতে পারেন বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।

এদিকে রাজনীতির মাঠে নামার আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব উপস্থিতি দিয়ে নিজেকে ইনফ্লুয়েন্সারে পরিণত করেছেন তাসনিম জারা। একজন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে তার লাখ লাখ ফ্যান ফলোয়ার আছে। নিজে নির্বাচন করুন অথবা দল মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন দিন- ভোটের মাঠে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন তাসনিম জারা, এমনটিই ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ছাড়া, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সমন্বয়ক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমও রাজনীতির মাঠে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। আগামী নির্বাচনে নিজ নিজ আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির ভোটে ভাগ বসাতে পারেন তারা। যেসব ভোটার আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিকল্প খুঁজছিল, তাদের প্রথম পছন্দ হতে পারে হাসনাত-সারজিসরা- এমনটিই ভাবছেন বিএনপি নেতারা। অবশ্য উদীয়মান এসব তরুণ নেতা একটু ফার্স্ট এগোচ্ছেন বলে মনে করেন বিএনপির কোনো কোনো নেতা। তাদের মতে, সারজিস-হাসনাতদের আরেকটু ধীর পদক্ষেপে এগোতে হবে, নইলে রাজনীতি বন্ধুর পথ থেকে ছিটকে পড়তে পারেন তারা।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাজনীতি তো হান্ড্রেড মিটার রেস না, এটা ম্যারাথন রেস। রাজনীতির পথটা দীর্ঘ। তাই ধীরে ধীরে এগোতে হয়। মাত্র তারা রাজনীতি এলো। ১০/১৫ বছর পরিশ্রম করুক। ভালো একটা ফল পাবে। রাজনৈতিক দল গঠন করেই যদি ক্ষমতায় যেতে চায়, অথবা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চায়, তাহলে তো লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না।’

‘তবে তাদের প্রচেষ্টা, উদ্যম ও মানুষকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা আছে। এ কারণে আগামী নির্বাচনে তাদের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ থাকবে। সেদিক বিবেচনায় রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা তাদের গুরুত্বের সঙ্গেই নেব’— যোগ করেন গয়েশ্বর চন্দ্র।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

এনসিপি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নাগরিক পার্টি নাহিদ ইসলাম নির্বাচন বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর