চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা
৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:৫৬ | আপডেট: ৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:০৮
রোববার দুপুরে রাজধানীর জিগাতলায় বিজিবির ৪নং গেটের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা
ঢাকা: ক্ষতিপূরণসহ চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা এবং তাদের পরিবার।
রোববার (৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর জিগাতলায় বিজিবির ৪নং গেটের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে স্মারকলিপি প্রদানে অবস্থানকারীদের পাঁচ প্রতিনিধি বিজিবি মহাপরিচালকের দ্বারস্থ হন। কিন্তু তার সাক্ষাৎ না পেয়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পক্ষে সাবেক হাবিলদার মো. মাহাবুবুর রহমান দাবি না মানা পর্যন্ত এবং সশরীরে সাক্ষাৎ কিংবা বিজিবির ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা অবস্থান কর্মসূচিতে এসে দেখা না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, আমরা ২০০৯ সালে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য। আপনার জ্ঞাতার্থে, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিডিআরের ৫৭ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ১০ জন বিভিন্ন পদবির বিডিআর সৈনিক এবং ৭ জন বেসামরিক নাগরিকসহ মোট ৭৪ জন শহীদ হন। এটি আমাদের জাতির ইতিহাসে অন্যতম মর্মান্তিক অধ্যায় এবং আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর এক ভয়াবহ আঘাত। আমরাও এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, তৎকালীন সরকার পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড এবং পিলখানার বাইরে অবস্থানরত অন্যান্য ব্যাটালিয়ন/সেক্টর/ট্রেনিং স্কুলে কর্মরত বিডিআর সদস্যদের বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করার লক্ষ্যে গণহারে নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের বিনা বিচারে জেলখানায় বন্দী রাখা হয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যাদের ফৌজদারি মামলায় কোনোভাবে জেল দিতে পারেনি, তাদের বিশেষ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে জেল-জরিমানাসহ সাজা প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় যখন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, তখন পিলখানার বাইরে দেশের অন্যান্য ইউনিটের বিডিআর ক্যাম্পগুলো ছিল পুরোপুরি শান্ত এবং ওই দিন বিভিন্ন ইউনিটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত জোয়ানদের অস্ত্র অস্ত্রাগারে জমা নিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার বাইরে দেশের বিভিন্ন ইউনিটে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ঘটনা ঘটে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে সারাদেশে বিডিআরের বিভিন্ন ব্যাটালিয়নে সেনা সদস্যরা অবস্থান নেয়। রাজশাহী সেক্টরে জোরপূর্বক অস্ত্রাগারের চাবি নেওয়ার জন্য কিছু সেনা সদস্যের সাথে সেক্টরের গেটে ধস্তাধস্তি হয়। আনুমানিক সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে পিলখানার বাইরের শুধুমাত্র দু-একটি ইউনিট বাদে বাকি সকল ইউনিট থেকে সেনা কর্মকর্তাদের ইউনিট ত্যাগের পরিকল্পিত নির্দেশনা প্রদান করা হয়; যা ইউনিটগুলোর ‘চেইন অব কমান্ড’ বিলুপ্ত করে সেখানে অভিভাবকশূন্য করা হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিভিন্ন স্থানে, যেমন- খাগড়াছড়ি, ফেনীর বিডিআর ক্যাম্পে অবস্থান নেয়।উপরোক্ত ঘটনাগুলো টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয় যা দেখে বিডিআর সৈনিকরা উদ্বিগ্ন হয়ে যায়। এই ঘটনাগুলো দ্বারা দেশের সকল বিডিআরের ইউনিটে অবস্থানরত সৈনিকদের মনে ভীতি সঞ্চার হয় যা দুই বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। যার কারণে নিরাপত্তাহীনতার তাগিদ থেকে কিছু সংখ্যক বিডিআর সদস্য আমাদের পরিবার, সরকারি সম্পদ ও নিজেদের সুরক্ষার জন্য প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যা অন্যায়ভাবে ‘বিদ্রোহ’ হিসেবে চিহ্নিত করে হাজারো নিরীহ বিডিআর সদস্যকে গ্রেপ্তার, জেল-জরিমানা এবং চাকরিচ্যুতির মতো কঠোর শাস্তির সম্মুখীন করা হয়। যা ছিল বিচারের নামে চরম প্রহসন ও স্বেচ্ছাচারিতার এক নগ্ন নিদর্শন। এ ধরনের প্রহসনমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হাজার হাজার নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের চাকরিচ্যুত করে তৎকালীন সরকার পরিস্থিতিকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছে এবং প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, আমরা বিডিআর সদস্যরা শুধুমাত্র পেশাগত জীবনেই ক্ষতিগ্রস্ত হইনি বরং সামাজিক, পারিবারিক এবং অর্থনৈতিক জীবনেও ভয়াবহ বিপর্যয়ের শিকার হয়েছি। আমাদের পরিবারগুলো মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আমাদের পরিবারগুলোর মানসিক শান্তি ও স্থিতি পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে। এ ঘটনার ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সদস্যরা এখনও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়ে যাচ্ছি, যা আমাদের নাগরিক অধিকার, সম্মান ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করছে।
সারাবাংলা/এমএইচ/আরএস