ওয়াকফ বিল নিয়ে বিক্ষোভে উত্তাল ভারত, বিজেপি নেতার বাড়িতে আগুন দিল জনতা
৭ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৩৭ | আপডেট: ৭ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৪৬
ভারতে ওয়াকফ সংশোধনী বিল ঘিরে বিক্ষোভে উত্তাল রাজপথ। এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের হাজারো মানুষ। ধর্মীয় সম্পত্তির ওপর হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে পুড়িয়েছেন কুশপুত্তলিকা। এর ধারাবাহিকতায় মণিপুরে এক বিজেপি নেতার বাড়িতে আগুন দিয়েছে জনতা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, রোববার (৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় স্থানীয় জনতা আসকার আলীর নামের এক নেতার বাড়িতে আগুন দেয়। তিনি বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার মণিপুরের সভাপতি। ওয়াকফ সংশোধনী আইনকে সমর্থন করার অভিযোগে তার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যমটি। এর আগে সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাসের বিরুদ্ধে রোববার রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখান। এদিন থৈবাল জেলার লিলং এলাকায় ১০২ নম্বর জাতীয় সড়কের সমাবেশে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশ নেন। পরে সন্ধ্যার পর আসকার আলীর বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। সমাজসেবক এবং সম্প্রদায়ের নেতা সাকির আহমেদ সমাবেশে অংশ নিয়ে বলেন, ওয়াকফ সংশোধনী বিল ভারতীয় সংবিধানের নীতির পরিপন্থী কারণ এটি সম্প্রদায়ের কাছে সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।
এদিকে, ইম্ফল পূর্বের ক্ষত্রী আওয়াং লেইকাই, কাইরাং মুসলিম এবং কিয়ামগেই মুসলিম এলাকা এবং বিষ্ণুপুর জেলার সোরা থেকেও প্রতীকী প্রতিবাদের খবর পাওয়া গেছে।
এই ঘটনার পর ওই অঞ্চলে আধা-সামরিক এবং অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
ওয়াক্ফ কী
ওয়াক্ফ হলো ইসলামি দানের একটি প্রাচীন ব্যবস্থা। ওয়াক্ফের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি স্থায়ীভাবে সাধারণত জমির মতো কোনো সম্পত্তি ধর্মীয় বা জনহিতকর কাজে ব্যবহারের জন্য দান করেন। এ ধরনের ওয়াক্ফ সম্পত্তি বিক্রি করা বা কারও নামে হস্তান্তর করা যায় না।
ভারতে ওয়াক্ফ বোর্ডগুলোর অধীন প্রায় ৮ লাখ ৭২ হাজারটি সম্পত্তি আছে। এগুলোর মোট আয়তন প্রায় ১০ লাখ একর। এসবের মোট মূল্য প্রায় ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার বলে ধারণা করা হয়। এসব সম্পত্তির অনেকগুলোর ইতিহাস শত শত বছর পুরোনো। অধিকাংশই ব্যবহার করা হয় মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও এতিমখানার মতো জনকল্যাণমূলক কাজে।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন (ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলেজিয়াস ফ্রিডম) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানায়, ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত নির্বাচনের সময় মোদি ও তার দল মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে ‘ঘৃণা ছাড়ানো বক্তব্য’ ও ‘ভুল তথ্য’ ছড়িয়েছে।
তবে ভারতের সরকার বলছে, দেশটি গণতান্ত্রিক নীতিতে পরিচালিত হয় এবং সেখানে কারও সঙ্গে কোনো বৈষম্য নেই।
ভারতের মোট ১৪০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১৪ শতাংশ মুসলমান। তারা ভারতের সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী হলেও অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে। ২০১৩ সালের এক সরকারি জরিপে দেখা গেছে, মুসলমানরা দেশটির সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটি।
সারাবাংলা/এনজেড/এসআর