Tuesday 08 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আজই যাচ্ছে দুই চিঠি
যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ বাংলাদেশের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৫৯ | আপডেট: ৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:০৯

ঢাকা: রফতানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উত্থাপিত ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ারগুলো তুলে নেওয়ার অঙ্গীকারসহ বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার অঙ্গীকার থাকছে চিঠিতে, যা ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ৩ মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে সরকার।

বিজ্ঞাপন

অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আজ সোমবারের (৭ এপ্রিল) মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরে (ইউএসটিআর) এ-সংক্রান্ত পৃথক দুই চিঠি পাঠানো হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠি দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ইউএসটিআর-এ চিঠি পাঠাবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

সূত্র জানায়, ইউএসটিআর বরাবর পাঠানো চিঠির খসড়া ইতোমধ্যে তৈরি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর জন ফে’র নেতৃত্বে দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে চিঠি চূড়ান্ত করে সোমবার সন্ধ্যার মধ্যেই তা ইউএসটিআরকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের তৎপরতা অবহিত করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা শুরু করতে দ্রুত টিকফা বৈঠকের আয়োজনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

জানা যায়, চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে শুল্কছাড় দেওয়া, মার্কিন তুলার জন্য কেন্দ্রীয় ওয়্যারহাউজ সুবিধা চালু করা, জি-টু-জি ভিত্তিতে এলএনজিসহ জ্বালানি আমদানি বাড়ানো এবং অশুল্ক বাধা দূর করার পরিকল্পনা করছে সরকার।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বর্ধিত শুল্ক আরোপের প্রেক্ষিতে রোববার (৬ এপ্রিল) বিকেলে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, খলিলুর রহমান, লুৎফে সিদ্দিকী এবং বেজা’র এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরসহ সরকারের শীর্ষ নীতি-নির্ধারক ও বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

বিজ্ঞাপন

ওই বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

এর আগে গত শনিবার (৫ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘বাণিজ্য ঘাটতি’ কমানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও রোববার (৬ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, বাংলাদেশের পাঠানো চিঠিতে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর অঙ্গীকার করা হবে না। বরং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে।

কারণ, নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন যে, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়লেও যদি বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ এর চেয়ে বাড়ে, তাহলে বাণিজ্য ঘাটতি কমবে না। এ কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

রোববার অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো যাতে ঠিকাদারি কাজে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়, সেজন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসকেও জানানো হয়েছে।

রোববার যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে— তা তুলে ধরেন উপদেষ্টারা। একইসঙ্গে বাংলাদেশে বিদ্যমান ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ারগুলোর মধ্যে যেগুলো যুক্তরাষ্ট্র সমস্যা মনে করছে, সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য সহায়ক ইস্যুগুলো দ্রুতই সমাধান করার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত যেসব বিষয় বাংলাদেশের জন্য সহায়ক নয়, সেসব বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা হবে বলে জানান তারা।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, আমাদের ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব জায়গায় সমস্যা হচ্ছে, সেগুলো বুঝার চেষ্টা করেছি। তার মধ্যে যেগুলো আমাদের অর্থনীতির জন্য সহায়ক, সেগুলো তো আমরা করতেই চাই। আর যেগুলো সহায়ক নয়, সেগুলো নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে উপায় বের করা হবে।

বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। এ জন্য রপ্তানিকারকদের পদক্ষেপে সরকার সহায়তা দেবে।এছাড়া, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বৃহৎ অর্থনীতিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কহারের প্রেক্ষাপটে কী পদক্ষেপ নেয় এবং তার প্রভাব বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে জানান তিনি।

সারাবাংলা/আরএস

প্রধান উপদেষ্টা ও বাণিজ্য উপদেষ্টার চিঠি যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্ক