৮ থেকে ১৪ এপ্রিল জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ, প্রজনন বাড়ার আশা মৎস্য উপদেষ্টার
৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৩৩ | আপডেট: ৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:২০
ঢাকা: আগামী ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ- ২০২৫’ পালন করবে সরকার। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, যদি জাটকা সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে ইলিশের উৎপাদন অনেক গুণে বাড়বে। উৎপাদন বাড়লে বাজারেও এর প্রভাব পড়বে, সরবরাহ বাড়বে, দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ -২০২৫ উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ইলিশকে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল পালন করা হবে।
তিনি বলেন, এ বছরে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে ‘জাটকা ধরা বন্ধ হলে, ইলিশ উঠবে জাল ভরে’। জাটকা হচ্ছে ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের ছোট আকারের ইলিশ। এক কেজি ওজনের ইলিশ কমপক্ষে ৪০-৫০ সেন্টিমিটার এবং ২ কেজির অধিক হলে ৬০-৬২ সেন্টিমিটার হবে। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের মাধ্যমে জাটকাকে ইলিশ রূপান্তর করা হবে।
এ সময় তিনি বলেন, বিগত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে দেশে ৫ লাখ ২৯ হাজার মে.টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান প্রায় ১১ শতাংশ। দেশজ জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশের বেশি। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি আহরিত হয় এ দেশের নদ-নদী, মোহনা ও সাগর থেকে। ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ স্থানে রয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ -২০২৫ উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, সরকার জাটকা রক্ষায় কেবল আইন প্রয়োগ করছে না বরং এই মাছ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের জন্য ভিজিএফ খাদ্য সহায়তার পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে। জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালীন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাটকা আহরণে বিরত ৩ লাখ ৬১ হাজার ৭১টি জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি হারে ৪ মাসে ২৮ হাজার ৮৮৫ মে.টন ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হয়েছে। ইলিশের প্রধান মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬৫টি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি হারে খাদ্য সহায়তা হিসেবে মোট ১৩ হাজার ৭০৭ মে.টন ভিজিএফ (চাল) দেওয়া হয়েছে। ভিজিএফ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ এর মাধ্যমে জেলেদেরকে তাদের চাহিদানুযায়ী বকনা বাছুরসহ নানা প্রকার উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
উপদেষ্টা জাটকা রক্ষায় সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ইলিশ ধরা বন্ধ থাকলেও উৎসব থেমে থাকবে না। বরং আমাদের ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সচেতনতার এই সুযোগটাও বড় উৎসবের অংশ হতে পারে।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালা-২০২৩ এর ৩(১) বিধি অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সব প্রকার মৎস্য নৌযান কর্তৃক যেকোনো ধরনের মৎস্য ও ক্রাস্টাশিয়ান্স আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর ফলে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণ ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়ার রেকর্ড রয়েছে।
তিনি বলেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়, যাতে সামুদ্রিক মৎস্য বিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী, মৎস্য অধিদফতরের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এ কমিটি বিজ্ঞানসম্মত তথ্যাদি যাচাই করে বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকাল আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন নির্ধারণের সুপারিশ করে। এ সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গত ১৬ মার্চ ২০২৫ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।
তিনি বলেন, সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালা ২০২৩ সংশোধন করে সামুদ্রিক মৎস্য সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য প্রতিবছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন সব প্রকার মৎস্য নৌযান কর্তৃক বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ এটা কোনো সংস্কৃতির অংশ নয়। যারা ঢাকায় থাকেন তারা এটা চালু করেছেন। এটা আরোপিত সংস্কৃতি। উপদেষ্টা এ বছর পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, দেশের ইলিশ সমৃদ্ধ ২০টি জেলায় (ঢাকা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠী, চাঁদপুর, লক্ষীপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট ও সিরাজগঞ্জ) ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৫’ উদযাপন করা হবে। এ বছর জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠান ৮ এপ্রিল বরিশাল বিভাগের ইলিশ সমৃদ্ধ অন্যতম জেলা বরিশাল জেলার সদর উপজেলার বেলস পার্কে অনুষ্ঠিত হবে এবং বরিশাল সদর উপজেলার ডিসি ঘাট সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে নৌ র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব মো. ইমাম উদ্দীন কবীর, অতিরিক্ত সচিব আমেনা বেগম, অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা নওয়ারা জাহান ও মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. আবদুর রউফসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সারাবাংলা/জেআর/এইচআই
ইলিশ জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ মৎস্য উপদেষ্টা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা