মার্চ ফর গাজা: উত্তাল চট্টগ্রাম
৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৩৩ | আপডেট: ৭ এপ্রিল ২০২৫ ২০:২৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা ও পদযাত্রা করেছে বিভিন্ন দল, সংগঠন ও স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে নগরীর ওয়াসার জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। বিক্ষোভ মিছিলটি ওয়াসা থেকে নগরীর দামপাড়ার নার্সারি মোড় গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় হেফাজতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা ‘ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন, ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন, ইহুদিদের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও, ফিলিস্তিনে গণহত্যা, বন্ধ কর, ফিলিস্তিনের স্মরণে, ভয় করি না মরণে, বিশ্ব মুসলিম ঐক্য গড়ো, ফিলিস্তিন স্বাধীন করো’- সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘আজ বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বিশ্বের সবচেয়ে বড় খুনিবাদী। এ খুনিবাদী আমাদের মা-বোনদের ওপর নির্যাতন করছে। মানুষ মারছে। পুরো গাজাকে আজ তছনছ করে দিয়েছে। আল আকসাকে ধ্বংস করার জন্য ওরা বারবার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে বিশ্বের সকল মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রয়োজনে আমরা সবাই ফিলিস্তিনে জিহাদে যাব। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মুসলমানকে জিহাদে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য আমরা আহবান জানাচ্ছি। আমরা মার্কিনীদের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বয়কট করছি।’

ছবি: সারাবাংলা
এদিন বিকেল চারটার দিকে নগরীর দুই নম্বর গেইট বিপ্লব উদ্যানের সামনে থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলার প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যেগে ‘মার্চ ফর গাজা’ ব্যানারে পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়।
খন্ড খন্ড মিছিলগুলো একসঙ্গে হয়ে বিপ্লব উদ্যান থেকে জিইসি মোড় হয়ে সেখান থেকে ঘুরে আবার দুই নম্বর গেইট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় মিছিল পরবর্তী সমাবেশ থেকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয় এবং সবাইকে ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের জন্য আহবান জানানো হয়।
গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে সোমবার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিন সকালে নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার পক্ষ থেকে ‘মজলুম গাজাবাসীর ডাকা বিশ্বব্যাপী হরতালে’র সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি মাদরাসা প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে মুরাদপুর মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

ছবি: সারাবাংলা
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপরে ইসরাইলি বর্বরোচিত হামলার কারণে গাজা অঞ্চল ধুলিস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য ইহুদিরা গভীর ষড়যন্ত্র করছে। তারা নির্মমভাবে বর্বরোচিত হামলা করছে। বাংলাদেশ প্রশাসনের কাছে আমরা আহবান রাখছি, ফিলিস্তিনে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ তৈরি আছে। অতি শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে মুজাহিদ বাহিনী ফিলিস্তিনে যাওয়ার জন্যে, মুসলমানদের পক্ষে জিহাদ করতে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে করে দেওয়া হয়।’
সোমবার (৭ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে গাজার নির্যাতিতদের পক্ষে প্রতীকী জিহাদের অঙ্গীকার হিসেবে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়। আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের উদ্যেগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর একটি কুশপুত্তলিকা তৈরি করে সেটাতে জুতা মেরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মাহমুদা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফিলিস্তিনের গাজায় হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন অনেকে। পুরো নগরজুড়েই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন।’
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে ও গণহত্যা বন্ধের দাবিতে সোমবার বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহবান জানানো হয়। গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের সব দেশে একসঙ্গে ‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল কর্মসূচি’ অর্থাৎ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত বন্ধ রাখার য়াহবান জানানো হয়। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের সব জায়গায় কর্মসূচি পালনে সড়কে নেমেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ।
সারাবাংলা/আইসি/এনজে