এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতীকী ‘ফ্যাসিবাদীর বীভৎস মুখ’
৭ এপ্রিল ২০২৫ ২১:৩১ | আপডেট: ৮ এপ্রিল ২০২৫ ০০:১২
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রধান প্রতিকৃতিটি ফ্যাসিবাদের বীভৎস রূপ হিসেবে নির্মিত হয়েছে। ছবি: সারাবাংলা
ঢাকা: নতুন বছরকে বরণ করে নিতে ব্যস্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরা। চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত নানা প্রতিকৃতি তৈরি কাজে।
চারুকলায় সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি হচ্ছে দাঁতাল মুখের এক নারীর মুখাবয়ব। মাথায় খাড়া চারটি শিং, হা করা বিকৃত মুখ, বিশাল আকৃতির নাক, ভয়ার্ত দুটো চোখ। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রধান এই প্রতিকৃতিটি ফ্যাসিবাদের বীভৎস রূপ হিসেবে নির্মিত হয়েছে।
পাশেই দেখা গেল ক্ষিপ্রতার প্রতীক বাঘের প্রতিকৃতি। তার পাশে শান্তির প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে পায়রা। বিশাল আকৃতির ইলিশের ওপর খবরের কাগজের প্রলেপ দিয়ে অবয়ব দেওয়া হচ্ছে। বাঁশ দিয়ে বানানো হচ্ছে পালকি।
এবারের পহেলা বৈশাখে ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে এসব প্রতিকৃতির মধ্য দিয়ে স্বাগত জানাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। জুলাই বিপ্লবের পর প্রথম নববর্ষ এবার। তাই এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতীকী হিসেবে থাকছে ফ্যাসিবাদ।
ভাস্কর্য বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী দীপক রঞ্জন সরকার সারাবাংলাকে বলেন, “শোভাযাত্রার মূল বিষয় হচ্ছে ‘ফ্যাসিবাদী প্রতিকৃতি’। ফ্যাসিবাদের প্রধান যে নায়ক, তার মুখাবয়ব থাকবে মিছিলের সামনে। থাকবে জাতীয় পশু বাঘ। আর মেলায় কাঠের যে বাঘ পাওয়া যায় লোকজ মোটিভের আদলে, সে ধরনের একটি বাঘ থাকবে। থাকবে লোকজ মোটিভের জাতীয় ইলিশ, কবুতর, পালকি।’’

বিশাল আকৃতির ইলিশের ওপর খবরের কাগজের প্রলেপ দিয়ে অবয়ব দেওয়া হচ্ছে। বাঁশ দিয়ে বানানো হচ্ছে পালকি। ছবি: সারাবাংলা
তিনি জানান, এবার জুলাই আন্দোলনের প্রতীক মুগ্ধর পানির বোতল থাকবে। রড দিয়ে ১৫ ফুটের এই পানির বোতল তৈরি হচ্ছে। বোতলটির ভেতরে আবার অনেক বোতল রাখা থাকবে। আন্দোলনের সময় যে প্রাণগুলো হারিয়ে গেছে, শহিদ হয়েছে খালি বোতলগুলো তাদের প্রতীক।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম চঞ্চল সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবারের শোভাযাত্রায় যুক্ত হচ্ছে নতুনত্ব। কাজেই আনন্দ শোভাযাত্রায় ফিরে যাওয়াই হবে সর্বজনীনতার কাছে যাওয়া। শুধু বাঙালি নয়, এবার সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিশুদ্ধ বাংলাদেশি শোভাযাত্রায় রূপ দেওয়াই হবে বিচক্ষণতার পরিচায়ক।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী খুবই সংস্কৃতিবোধসম্পন্ন। তারা প্রকৃতি ও পাহাড়ের জীবনের আবহকে ধারণ করে। আমরা যে, একত্রে বসবাস করি তা এবার প্রকাশ হবে। তারা র্যালির সামনের দিকেই থাকবে। তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যের নানা বিষয় সামনে আসবে। তাদের সামনে রেখেই শোভাযাত্রা এগিয়ে যেতে পারে।’
জানা গেছে, এবার শোভাযাত্রা চারুকলা, শাহবাগ, টিএসসি হয়ে শহিদ মিনারের দিকে যাবে। দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমি হয়ে ফের চারুকলায় এসে শেষ হবে। কিংবা শাহবাগ দিয়ে হাইকোর্ট হয়ে শিশু একাডেমি হয়ে দোয়েল চত্বর থেকে বাংলা একাডেমি হয়ে ফের চারুকলায় এসে শেষ হতে পারে। এ বিষয়ে শিগগিরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
হাতে সময় কম। আর তাই কাজ চলছে জোরেসরেই। চৈত্রসংক্রান্তির আগেই শেষ করতে হবে শোভাযাত্রার সব কার্যক্রম। তাই ব্যস্ত চারুকলার শিক্ষার্থীরা।
সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম