২০ হাজার মানুষের দুঃখ ঘুচালো ২০০ ফুটের ড্রামসেতু
৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৫:২২
লালমনিরহাট: পাটগ্রাম উপজেলার সানিয়াজান নদীতে ড্রামের ওপর ভাসছে ২০০ ফুট দীর্ঘ ভাসমান সেতু। সেই সেতু দিয়ে মানুষের পাশাপাশি বাইসাইকেলের মতো হালকা যানও পার করা হচ্ছে। এ ছাড়া, পার হচ্ছে গবাদি পশুও। মূল কথা হলো ড্রাম দিয়ে সেতু নির্মাণের ফলে দুঃখ ঘুচেছে তিন গ্রামের ২০ হাজার মানুষের।
স্থানীয় সবার সহযোগিতায় প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর বাঁশের চাটাই জোড়া লাগিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন সেতুটি দেখতে প্রতিদিন এখানে অনেকের ভিড় বাড়ছে। এমন ভাসমান ড্রামের সেতু সবার নজর কেড়েছে, ভোগান্তি কমেছে প্রায় তিন গ্রামের ২০ হাজার মানুষের। ড্রাম সেতুটি নির্মাণ করেছেন ১৫ জন সাধারণ মানুষ। সেতু নির্মাণের ব্যবহার হয়েছে প্লাস্টিকের ড্রাম, বাঁশ, লোহার অ্যাঙ্গেল, দরি ও কুনা। আর নির্মাণে খরচ প্রায় তিন লাখ টাকা।
গত ৩ মার্চ বাউরা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সানিয়াজান নদীর ওপর ড্রামের সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা যাতায়াত শুরু হয়েছে। এতে তিন গ্রামের মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে।
জানা যায়, সানিয়াজান নদীর ওপর ব্রিজ না থাকায় প্রতিবছর তিন গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে কষ্টে চলাচল করতে হতো। বাঁশের সাঁকো থাকলেও প্রতিবছর বন্যায় ভেঙে যেত। দীর্ঘদিন ধরে এই জাগায় ব্রিজ বা সাঁকো না থাকায় হাঁটু বা কোমর পানিতে নেমে নদী পার হতে হতো মানুষদের। শিক্ষার্থীসহ সবার এই ভোগান্তি দেখে স্থানীয় বাউরা ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে সবার সহযোগিতায় শুরু হয় সেতু নির্মাণ। সংগৃহীত কিছু বাঁশ বিক্রি করে কেনা হয় রাবারের ড্রাম। এর পর ১০০টি ড্রাম ও শতাধিক বাঁশের সমন্বয়ে একটি ভাসমান ব্রিজ নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, গেল বন্যার পর থেকে এই নদীতে কোনো ব্রিজ ছিল না। ফলে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষদের ভোগান্তিতে পড়তে হতো। পরে স্থানীয় বিএনপির উদ্যোগে ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তৈরি হয় ভাসমান ড্রাম ব্রিজ। স্থানীয় বাসিন্দা রিফাত হোসেন বলেন, ‘বন্যায় প্রতিবছর এখানকার মানুষের কষ্ট পোহাতে হয়। তাই সবার সহযোগিতায় এবার ড্রাম দিয়ে ভাসমান সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যাতে বন্যার সময় কষ্ট করতে না হয়।’
স্থানীয় আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যার সময় নদীর পানি যতই বাড়বে ড্রামগুলো ততই ভেসে উঠবে। এতে চলাচলের কোন কষ্ট হবে না। তাই আমরা ড্রাম কিনে এই সেতুটি তৈরি করেছি।’ হামির উদ্দিন গ্রামার স্কুলের শিক্ষার্থী আয়ান বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণে আমরা খুব সহজেই স্কুল কলেজে যেতে পারি। আগে এই পথ দিয়ে অনেক কষ্টে ভিজে স্কুলে যেতাম, এখন আর ভিজে যেতে হয় না। খুব কম সময়ে আমরা স্কুলে যেতে পারি।’
এ বিষয়ে বাউড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শামসুল আলম বলেন, ‘এখানে ব্রিজ না থাকায় প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষ কষ্টে পড়েন। তাই আমরা সবার সহযোগিতায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে এই ভাসমান সেতুটি নির্মাণ করেছি। এই সেতু দিয়ে শত শত সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করছে।’ পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এই উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। তাই, ভাসমান সেতুটির বিষয়ে কিছু জানি না। তবে খোঁজ-খবর নেব।’
সারাবাংলা/পিটিএম