‘প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে প্রয়োজন মিশ্র পদ্ধতি’
৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৩৩ | আপডেট: ৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৫৬
ঢাকা: প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে, পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ও প্রক্সি ভোটিং-এ তিনটি পদ্ধতির সমন্বয় প্রয়োজন। আজ বিশেজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি অ্যাডবাইজরি টিম গঠন করবে নির্বাচন কমিশন। কারিগরি টিমের পরামর্শের পর চূড়ান্ত হবে প্রবাসীদের ভোটাধিকার পদ্ধতি।
বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন নির্বাচন কশিনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা ১৭৮টি দেশে স্টাডি করে দেখেছি ১১৫টি দেশ তাদের প্রবাসী নাগরিকদের জন্য ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে। সবচেয়ে অনুশ্রিত পদ্ধতি হচ্ছে দূতাবাসে, এরপর পোস্টাল ব্যালট, এরপর হচ্ছে অনলাইন বা প্রক্সি ভোটিং।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রবাসীদের যে বিস্তৃতি তাতে দূতাবাসে সেটা সীমিত। এজন্য তিনটিকে শর্ট লিস্ট করেছি। পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ও প্রক্সি ভোটিং। তিনটিরই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, কিছু সুবিধাও আছে। কমিশনের কাছে বিষয়টি উত্থাপনের পর নির্বাচন, আইন, কারিগরি ও নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) কর্মশালা করি। যেখানে ১০টি টিম তাদের উপস্থাপনা উপস্থাপন করেছে।’ এ সময় ঢাবি, বুয়েট, এমআইএসটি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ইসি বলেন, ‘১০টি উপস্থাপনার মধ্যে তিনটা পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা দেখেছি। আমরা যে পদ্ধতিই অনুসরণ করি না কেন, তা বাংলাদেশের প্রবাসীদের বিস্তৃতসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনা সাপেক্ষে করতে হবে। যে পদ্ধতিতেই করি না কেন, প্রবাসীকে প্রথমে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। বাংলাদেশের জন্য কোনো একটা পদ্ধতি নয় বরং মিশ্র পদ্ধতি করতে হবে। কেননা একেক দেশের পরিস্থিতি একেক রকম। সকল পদ্ধতির সফলতা ও দুর্বলতা আছে। সকল পদ্ধতির জন্য মক টেস্টিং প্রয়োজন হবে। সম্ভবত সকল পদ্ধতির জন্যই পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত পরিসরে করতে হবে। এটা অনেক দেশ করছে।’
নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘তিনটি পদ্ধতির সফলতা, দুর্বলতা পর্যালোচনা করে কি করে দুর্বলতা কাটানো যায়, সে ব্যবস্থা তারা করবেন। এরপর আমরা অংশীজনদের সঙ্গে বসবো। আমরা যাই করি না কেন যে সময়টা আমরা পাবো তার মধ্যেই কাস্টমাইজ করতে হবে। তাই সময় না পেলে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এজন্য আমরা একটা দিনও সময় নষ্ট করছি না। ইনশাআল্লাহ এবার প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনতে পারব। তবে কোন পদ্ধতিতে হবে সেটা কারিগরি টিম কাজ করার পর চূড়ান্ত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রক্সি ভোটকে আমরা বলেছি, যদি সব ভোটারকে আনতে চাই তাহলে প্রক্সি একমাত্র অপশন। এখনো কমিশনের অবস্থান একই আছে। প্রক্সি ভোটের দুর্বলতা অনেকে তুলে ধরেছেন। সফলতাও তুলে ধরেছেন। অন্যগুলোর ক্ষেত্রেও তাই। কোনো অপশনকেই আমরা সিঙ্গেল আউট করছি না। বাংলাদেশের জন্য কোনো একটি সিঙ্গেল অপশন অ্যাপলিকবেল না। কমবাইন্ড অপশনের দিকে যেতে হবে। তিনটা পদ্ধতিকেই যদি আনা যায়, তাহলে আমরা তিনটা পদ্ধতিকেই আনবো। পাশাপাশি নিবন্ধন পার্টটা অনলাইন হবে। যে ধরণের ভোটই হোক না কেন অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। এখন প্রবাসী যে দেশে থেকে ভোট দিতে চান, সেই দেশে ওই পদ্ধতি কার্যকর কিনা সেটা দেখতে হবে। অনলাইন ভোটিংয়ে যেতে হলে সময় আরও বেশি লাগবে।’
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার আওতায় আনতে চাই তাহলে কোনো না কোনো পদ্ধতি আনতে হবে। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও।’
পৃথিবীতে ২৫টির মতো দেশ প্রক্সি ভোট পদ্ধতি কার্যকর আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডিজেবল বা হসপিটালে আছে, গর্ভবতী, শিক্ষার্থী, ফোর্সেসদের জন্য, কারাগারের জন্য, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিতরা, বিদেশে অবস্থান করছে, ডিপ্লোমেটদের জন্য অনলাইন পদ্ধতি কার্যকর আছে। তবে কিছু কিছু দেশ সবার জন্য প্রক্সি ভোটের ব্যবস্থা করছে। নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ইউকে সবার জন্য উনুক্ত রেখেছে। আর অন্যরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে রেখেছে। প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে চাইলে সব পদ্ধতিতেই সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমাদের সেই সীমাবদ্ধতা কমিয়ে আনতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গতকাল কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো কিছু প্রভাবিত হয়নি। আমরা চেয়েছি সবাই খোলামেলা মতামত দিই। এজন্য আমরা কর্মশালা করেছি। যেন গবেষকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ভালো মন্দ দিক তুলে ধরেন।’
ইসি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাত জেগে ছাত্রদের নিয়ে কাজ করে উপস্থাপনা দিয়েছেন। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে যদি বড় পরিসরে অনেক প্রবাসীকে আনতে চাই তবে প্রক্সি হচ্ছে অনলি ওয়ান অপশন। তবে বাস্তবতার নিরীখে আমাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অ্যাডভাইজরি কমিটি কী পরামর্শ দেয় সেটা আগে দেখি। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে তিন স্তরে মক ভোট করা, তারপর নির্বাচনে। পৃথিবীর সকল দেশ জাতীয় নির্বাচনে রেখেছে। আমরা আগে জাতীয় নির্বাচন করি। তারপর স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে বলতে পারব। যেখানে প্রবাসীরা একটা ভোটও দিতে পারে না, সেখানে আমরা এমন পদ্ধতি আনবো না, যেখানে প্রবাসীরা হোচট খায়। ইনশাল্লাহ সব টাইমলি হয়ে যাবে।’
সারাবাংলা/এনএল/এসডব্লিউ