Tuesday 15 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৭৪’র দুর্ভিক্ষের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত প্রধান উপদেষ্টা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:৪৬ | আপডেট: ৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৫৫

ড. মুহাম্মদ ইউনুস।

ঢাকা: চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তিনি বেশ কিছুক্ষণ নীরব থাকেন। কোনো কথা বলতে পারেন নি। তার চোখ ছলছল করছিল।

বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ এর তৃতীয় দিনে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত এই সামিট শুরু হয়েছে গেল ৭ এপ্রিল। চার দিনের এই সম্মেলন শেষ হবে আগামী ১০ এপ্রিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। বক্তব্য রাখেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরাও।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘১৯৭১ সালে প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশের সূচনা হয়। এখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৮ কোটি, তখন ছিল এর তিন ভাগের একভাগ। এরপর আসে ১৯৭৪।’ একথা বলেই আবেগপ্লুত হয়ে নীরব হয়ে যান প্রধান উপদেষ্টা। পরে তিনি আবার কথা শুরু করেন। বলেন, ‘ক্ষুধায় মানুষ মারা গেছে। আমাদের দেশের অনেক বড় একটা দুর্ভিক্ষ ছিল। ১৫ লাখ মানুষ মারা গেছে। তখন এমন ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘বছরে আমরা তখন একটিই ফসলই ফলাতাম। আমাদের অন্য কোনো উপায় জানা ছিল না। আমাদের দেশের মানুষ কৃষক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। কারণ তাদের আর কোনও পেশা ছিল না। আর তাদের মধ্যে তিন চতুর্থাংশের নিজের কোনও জমি ছিল না। জীবন নির্বাহের জন্য একটিই ফসল ফলাতো। জীবন অনেক কঠিন ছিল। যদি আপনি ১৯৭৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের এই যাত্রা খেয়াল করেন, দেখবেন অনেক চমৎকার একটি সফর। বড় বড় শিল্প নিয়ে আমরা আলাপ করছি, বিদেশি অনেক কোম্পানি আরও শিল্প কারখানা এখানে গড়ে তুলতে চায়, বড় বড় বাজার নিয়ে কথা হয়, তরুণ জনগোষ্ঠী নিয়ে আলাপ হয়। খুব অল্প সময়ে অনেক পথ পেরিয়ে, এটি এখন বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি যে দেশেই বসবাস করেন না কেন, আপনার ভেতর ছোট একটি ১৯৭৪ বসবাস করে। আপনারা দেখতে চান না, লুকিয়ে রাখেন মানুষকে অর্থ সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে। আমি সবসময় বলে আসছি জনগণের অর্থ গরীব মানুষকে দেওয়ার মধ্যে কোনও সমাধান নেই।’

বৈশ্বক বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শুধু ব্যবসার জন্য নয়, বিশ্বকে পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে হবে। বিশ্বকে বদলে দেওয়ার মতো দুর্দান্ত আইডিয়া বাংলাদেশের কাছে রয়েছে।

প্রসঙ্গত, বিডার আয়োজনে এ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৪০টি দেশের বিনিয়োগকারী অংশ নিচ্ছে। সম্মেলনে শীর্ষস্থানীয় কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব ছাড়াও বহু সংখ্যক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত বৃহৎ কর্পোরেশন অংশগ্রহণ করছে।

এদিকে, বিনিয়োগে অবদান রাখার জন্য ৪ প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিনিয়োগ সম্মেলনের তৃতীয় দিনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এই পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কর পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ওয়ালটন (দেশি বিনিয়োগকারী), বিকাশ (বিদেশি বিনিয়োগকারী), স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ও ফেব্রিকস লাগবে। এছাড়া বিশেষ ক্যাটাগরিতে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের চেয়ারম্যানকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এমপি

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা)