Saturday 17 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দশ বছর ধরে নির্মাণ হচ্ছে ঢাবি জিম!


২২ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৬:০২ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ১৬:১৫

তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশেই তিনতলা সমান উঁচু ছাদের একতলা একটি নির্মাণাধীন ভবন। ছাদ এখনো পড়েনি। ছাদ কেনো? দেয়ালও বসে নি চারধারে। একদিকের একটি দেয়াল গাঁথা হয়েছে। সেটিরও এখন শ্যাওলাধরা দশা। পলেস্তরা খসে পড়েছে। সব কিছু ছাপিয়ে চারদিকে চারটি পিলার অনেকখানি উঁচুতে উঠে তবে থমকে আছে। আকাশের দিকে বের হয়ে যাওয়া রডগুলোর অবশিষ্টাংশই জানান দিচ্ছে ভবনটি নির্মাণাধীন।

বিজ্ঞাপন

ওই দিকটায় লোকজনের যাতায়াত কম তাই পথেও জন্মেছে ঘাস-লতাপাতা। অথচ এর পিঠ ঘেঁসে দাঁড়িয়ে থাকা কেন্দ্রীয় সুইমিং পুল সব ঋতুতেই বেশ সরগরম। খেলার মাঠেও তার কমতি নেই।

ভবনটির নিরাপত্তায় থাকা একজনের দেখা মিললো। তিনি জানালেন, এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম ভবন। দশ বছর আগে শুরু হয়েছে এর নির্মাণ কাজ। আর তা বন্ধ হয়ে আছে সেও বেশ কবছর ধরে। ঠিক কবে থেকে বন্ধ, কবেই বা শুরু হয়েছিলো এই নির্মাণযজ্ঞ, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি। জিমনেশিয়ামের দায়িত্বরত কর্মকর্তারাও দিতে পারেননি সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য।

সারাবাংলা.নেট এর অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয় নতুন জিমনেশিয়াম নির্মাণের কার্যক্রম। কাজ পায় প্রভাতী নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ব্যয়ে গাফিলতির অভিযোগে একবছর পর প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ কাজ বন্ধ করে সরে যায়। এরপর আসে নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিছুদিন পর তারাও নির্মাণ কাজে ইস্তফা ঘোষণা দেয়। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলীসহ চারজনের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আনে প্রতিষ্ঠানটি।

বিজ্ঞাপন

এই ঘটনা জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বহিষ্কার করা হয় অভিযুক্ত চারজনকে। সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় এর নির্মাণ কাজ। তখন পর্যন্ত জিমনেশিয়ামের নির্মাণ ব্যায় দেখানো হয় ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পরবর্তীতে অর্থব্যায়ে অস্পষ্টতা ও ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলেও বহিষ্কৃত দুজনকে আবারও কাজে ফিরিয়ে আনা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা করে দেয়া হয় ‘দোষীসাব্যস্ত’ প্রধান প্রকৌশলীকেও। অবসরের সময় ক্ষমা পান তিনি। তবে এতকিছু হয়ে গেলেও, নতুন করে শুরু হয়নি কেবল ভবনটির নির্মাণ কাজ।

কেন শুরু হয়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী আফজালুল হক বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। এর আগে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও কাজটি শুরু  করা যায়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা বললেন, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে আবার নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর জন্য কাগজপত্র তৈরি করে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান নিশ্চিত করে কিছুই জানালেন না। বিষয়টি নিয়ে প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

এদিকে নতুন যন্ত্রপাতি না কেনা, আধুনিকায়নের অভাব, ইন্সট্রাক্টরের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে বর্তমান জিমনেশিয়ামের প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অযত্ন, অবহেলা এবং অতি ব্যবহারের কারণেও নষ্ট হয়ে গেছে অনেক যন্ত্রপাতি। ফলে একটি নতুন জিমনেসিয়ামের প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকট।

রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আকিব জাভেদ বলেন, ‘জিমনেসিয়ামের ছয়টি সাইকেলের সবকটিই নষ্ট। রানিং মেশিনসহ দেশের বাইরে থেকে আনানো ব্যায়ামের যন্ত্রপাতিগুলোও নষ্ট। এখানে ফ্রি-হ্যান্ড ছাড়া তাই কিছুই তেমন করা যায় না। নতুন জিমটি হলে ভালোই হতো।’

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের জায়েদ রহমান বলেন, ‘এতো ছাত্রের বিপরীতে ইন্সট্রাক্টরও মাত্র একজন। জিমনেশিয়ামে নিয়মিত জায়গাও পাওয়া যায় না। ফলে এখানে শরীরচর্চা করে উপকারের বদলে বরং সময় নষ্ট হয়।’

জিমনেশিয়ামের ইন্সট্রাক্টর জসিম উদ্দিন অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা। সারাবাংলা.নেট-কে তিনি বলেন, ‘এখানে যন্ত্রপাতি গুলোর বেশীর ভাগই ভালো। নতুন করে আরো যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। তবে বাস্কেটবল, টেবিল টেনিস, লন টেনিস, ব্যাডমিন্টনের মতো ইনডোর গেমগুলো এখানেই খেলা হয় বলে আমরা শিক্ষার্থীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাই।’

তবে ছাত্র-শিক্ষক উভয়েরই দাবি নতুন জিমনেসিয়াম।

‘জিমের নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে,’ বলেন জসিম উদ্দিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. মো. কামাল উদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, নতুন জিমনেসিয়ামের নির্মাণ কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের। সেই সঙ্গে পুরনো জিমনেসিয়ামেরও আধুনিকায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।

সারাবাংলা/তুসা/এমএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর