Sunday 13 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাচারকারীদের সম্পদ ৬ মাসের মধ্যে জব্দ করা হবে: বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১১ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:০৩ | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৪১

মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আহসান এইচ মনসুর

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিদেশে থাকা পাচারকারীদের সম্পদ আগামী ছয় মাসের মধ্যে জব্দ করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে নগরীর কোতোয়ালীতে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশের সম্পদ জব্দ করা। জব্দ হওয়ার পরে আদালতে তোলাসহ বিভিন্ন কাজ করতে এক বছর সময় লেগে যাবে। এরপর আমরা সম্পদগুলো ফিরিয়ে আনতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামেরই একটি বড় শিল্পগ্রুপ অন্তত সোয়া এক লাখ বা দুলাখ কোটি টাকার মতো অর্থ পাচার করেছে, শুধু ব্যাংকিং খাত থেকে। সেরকম আরও বেশকিছু আছে। বেক্সিমকো পাচার করেছে ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো। সব মিলিয়ে আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে।’

‘এগুলো বড় গ্রুপ। ছোটগুলো আমি ধরছি না। অপরিশোধিত ঋণ আছে প্রায় পাঁচ লাখ কোটি টাকার মতো। সব পাচার হয়ে গেছে আবার তাও নয়। দেশের ভেতরেই আছে। সেগুলো উদ্ধার করতে হবে অন্যভাবে।’

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যেগ বাংলাদেশের জন্য নতুন। সিস্টেমেটিকলি এরকম প্রোগ্রাম আগে মুখোমুখি করা হয়নি। মুখোমুখি হলেও প্রচেষ্টা করা হয়নি। এ প্রথম আমরা করছি। এটার জন্য আমরা নিজেরাই শিখছি কীভাবে করতে পারি। এটা তো আর দেশের আইনে হবে না। বিদেশিদের সঙ্গে আমাদের সংযোগ স্থাপন করতে হবে। তাদের আইনের সঙ্গে সংগতি রেখেই আমাকে কাজগুলো করতে হবে। এভাবেই পাচার করা অর্থ আনতে হবে।’

পাচার করা অর্থ আপোষের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার কোনো ব্যবস্থা করা হবে কি না সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই আউট অব কোর্ট সেটেলমেন্ট বলে একটা কথা আছে। আমাদেরও করতে হবে। সবসময় মামলায় জড়িয়ে দীর্ঘসূত্রিতায় যাওয়ার কোনো মানে হয় না। যদি প্রতিপক্ষকে ভালোভাবে ধরা যায়, তাহলে আপোষটা ভালোভাবে হয়। ধরতে না পারলে ভালোভাবে ধরা যাবে না। আপোষে যেতে হলে তথ্য ভালোভাবে নিতে হবে। তথ্যের কোনো গরমিল থাকা যাবে না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম ধাপে চেষ্টা করতে হবে, সম্পদগুলো কীভাবে জব্দ করা যায়। সে ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করার করছি। মিউচুয়াল ও লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্সের ব্যাপারে ভাবে এসব করতে চিঠি পাঠাচ্ছি। বিভিন্ন আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলছি। তাদেরকে এসব কাজে নিয়োগ করবো। তারা সেসব সম্পদগুলোর খোঁজ করবে। কার সম্পদ কোথায় আছে সেগুলো তো আমরা জানি না। জানলেও সেটা ভাসা ভাসা। সুনির্দিষ্টভাবে জানি না।’

‘যদি সুনির্দিষ্ট তথ্য না পাই তাহলে আবার সেটা আদালত গ্রহণ করবে না। আমাকে সেভাবে তথ্য নিয়ে আসতে হবে বিদেশ থেকে। আমরা যথেষ্ট সহযোগিতা পাচ্ছি বিদেশিদের কাছ থেকে। তারপরেও জিনিসটা সহজ নয়। সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো এখন অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমরা আশা করি ব্যাংকগুলো।একটি সুদৃঢ় অবস্থানে চলে যাবে। ইসলামী ব্যাংক বিশালভাবে ঘুরিয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে ডিপোজিট গ্রোথ খুব ভালো। এখানে যে বোড় আছে তারাও ভালোভাবে কাজ করছে। রেমিটেন্সের প্রবাহ আবার বাড়া শুরু করেছে।’

দেশে আগে মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে দেখানো হতো জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ৯ থেকে ১০ শতাংশ দেখানো হত। কিন্তু প্রকৃতভাবে দেখা গেছে ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ। গত মাসে সেটা দেখা গেছে ৮ থেকে ৯ শতাংশে আছে। সামগ্রিকভাবে মুদ্রাস্ফীতি স্বস্তির দিকেই আছে৷ আগামী বছর সেটাকে ৫ শতাংশ বা তার নিচে নামিয়ে আনতে পারব বলে ধারণা করছি।’

অর্থ পাচারে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেকে জড়িত আছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে গভর্নর বলেন, ‘অমূলক তথ্যের ভিত্তিতে কাউকে চাকরিচ্যুত করার পক্ষে আমি নই। সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেব। দুদক বা রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা যদি তথ্য প্রমাণ দেয় যে কেউ জড়িত আছে আমরা ব্যবস্থা নেব। যাদের বিরুদ্ধে তথ্য আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রামের উপ পরিচালক জোবাইর হোসেনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রামের নির্বাহী পরিচালক জামাল উদ্দিন, পরিচালক সালাহ উদ্দীন, আরিফুজ্জামন, আশিকুর রহমান, স্বরুপ কুমার চৌধুরী ও ফাইন্যান্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের পরিচালক আনিসুর রহমান।

সারাবাংলা/আইসি/এসআর

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বিদেশে থাকা সম্পদ সম্পদ জব্দ

বিজ্ঞাপন

বাঙালিয়ানা কি কেবল মুখোশের?
১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর