Saturday 12 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমেরিকা-চীন শুল্ক যুদ্ধ, কার লাভ কার ক্ষতি

হুজ্জাতুল ইসলাম আলিফ, নিউজরুম এডিটর
১১ এপ্রিল ২০২৫ ২১:৩৬ | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৫৫

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েক ডজন দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিতের আকস্মিক সিদ্ধান্তের ফলে শেয়ার বাজারের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। তবে চীনের পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বহাল রেখেছেন। পরে পালটা মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে চীন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের চলমান শুল্ক যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি লাভবান হবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজা হয়েছে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) আল-জাজিরার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে।

বিজ্ঞাপন

এই দুই অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে গত বছর, সব মিলিয়ে প্রায় ৫৮৫ বিলিয়ন ডলার (৫৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার) মূল্যের পণ্য বাণিজ্য হয়েছে।

যদিও চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে তার তুলনায়, চীন থেকে অনেক বেশি পরিমাণে পণ্য আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হিসাব অনুযায়ী, গত বছর চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হয়েছে ৪৪০ বিলিয়ন ডলার (৪৪ হাজার কোটি ডলার) মূল্যের বাণিজ্য পণ্য আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন আমদানি করেছে ১৪৫ বিলিয়ন ডলার (১৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার) মূল্যের পণ্য।

এর ফলে ২০২৪ সালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২৯৫ বিলিয়ন ডলার (২৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলার)। এই ঘাটতি বেশ উল্লেখযোগ্য এবং এর পরিমাণ কিন্তু মার্কিন অর্থনীতির প্রায় এক শতাংশের সমান।

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চলতি সপ্তাহে এই বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ এক ট্রিলিয়ন ডলার (এক লক্ষ কোটি ডলার) বলে বারবার দাবি করলেও বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ কিন্তু তার চাইতে কমই।

যেভাবে ক্ষতিতে পড়বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

বিজ্ঞাপন

ট্রাম্প আশা করছেন, তার শুল্ক ব্যবস্থা চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্তকে কমাবে। অন্যদিকে বেইজিং তাদের প্রতিষ্ঠিত প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা থেকে উপকৃত হচ্ছে।

ফিচ রেটিং সংস্থার প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান কুলটনের মতে, চীনের শিল্প আধিপত্য থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হবে না।

ব্রায়ান কলটন বলেন, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে চীন [তার মূল উৎপাদন খাতের চারপাশে] একটি আশ্চর্যজনক সরবরাহ এবং অবকাঠামো নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। সেগুলো আশ্চর্যজনকভাবে কার্যকরী।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি উৎপাদন ঘণ্টার মজুরি খরচ প্রায় ৩০ ডলার। অন্যদিকে চীনে প্রতি ঘণ্টার মজুরি মাত্র ১২ ডলার, যা অর্ধেকের চেয়েও কম। অথাৎ শ্রম খরচ অনেক কম।

কুলটন আল জাজিরাকে বলেন, মার্কিন ‘ইলেকট্রনিক্স এবং ডিজিটাল’ প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে ট্রাম্পের সর্বশেষ দফা চীন শুল্কের ঝুঁকিতে রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপল উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

কুলটন আরও বলেন, এ শিল্পগুলো চীন থেকে তাদের প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে পণ্য আমদানি করে। সুতরাং প্রশ্ন হলো, তারা কি কম লাভে উচ্চ খরচের পণ্য ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেবে?

আরও পড়ুন-

কুলটনের মতে, উচ্চ শুল্কারোপে ব্যবসায়িক কার্যকলাপের ওপর চাপ এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। তিনি আশঙ্কা করেন, যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি এ বছর ৪ শতাংশের বেশি হবে, যা বর্তমানে ২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধীর হবে।

২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের সময়, মার্কিন-চীন ব্যবসা পরিষদে মতে ২ লাখ ৪৫ হাজার মার্কিন নাগরিক চাকরি হারিয়েছিল। যেহেতু এবার শুল্কের পরিধি আরও বেশি, তাই ধরে নেওয়া যায়, কর্মসংস্থান আরও হ্রাস পাবে।

মার্কিন অর্থনীতির জন্য একটি ধাক্কা হবে বলে মনে করেন কুলটন।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান মুডি’স অ্যানালিটিকসের সারাহ ট্যান বলেন, চীনা শুল্ক মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্র চীনকে তার বৃহত্তম রফতানির বাজার হিসেবে বিবেচনা করে। তিনি বলেন, চীনের পালটা পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব খাত বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে, তার মধ্যে অন্যতম কৃষি।

গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে আমদানি করা সয়াবিন, ফল, দুগ্ধজাত পণ্য, শূকর ও গরুর মাংসের ওপর ১০ শতাংশ এবং মুরগি, গম, ভুট্টা ও তুলার ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হয়েছিল। এর সঙ্গে নতুন করে বাড়ানো শুল্ক যুক্ত হবে। এসব শুল্কের কারণে মার্কিন কৃষকেরা শিগগিরই চীনে তাদের পণ্যের চাহিদা লক্ষণীয় হারে কমে যাওয়ার ধাক্কা অনুভব করবেন।

এদিকে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের অ্যালেক্স হোমস বলেন, যেকোনো মূল্যবৃদ্ধির ফলে মার্কিন ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। শুল্ক আরোপের ফলে চীনা পণ্য আমদানি আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে পালটাপালটি শুল্কহার এত বেশি যে জরুরি ছাড়া অন্যান্য পণ্যের ওপর এটি একরকম বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞায় রূপ নিয়েছে।

রয়টার্স/ইপসোসের করা এক নতুন জরিপ থেকে জানা গেছে,  শুল্ক আরোপের কারণে বেশির ভাগ মার্কিন বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন দেশটির নাগরিকরা।

যেভাবে লাভবান হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন যে শুল্ক মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারে এবং বিদেশি উৎপাদনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনতে পারে। তিনি আরও বলেছেন, তারা ভবিষ্যতে কর কমানোর পথ প্রশস্ত করবেন।

১৯৭৯ সালে, প্রায় ২০ মিলিয়ন আমেরিকান পণ্য উৎপাদন করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে সেটি কমে ১২ দশমিক ৫ মিলিয়নের কাছাকাছি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের বছরগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মোটরযান, বিমান এবং ইস্পাতের শীর্ষস্থানীয় উৎপাদক ছিল। অর্থনৈতিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সিইপিআইআই-এর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান ভিনসেন্ট ভিকার্ড বলেন, তখন থেকে বিদেশি প্রতিযোগিতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি উৎপাদন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপেক্ষিক অংশকে সঙ্কুচিত করেছে।

ভিকার্ড আল জাজিরাকে বলেন, যদিও ট্রাম্প ঠিক কী চান তা বলা কঠিন, তবে শুল্ক পরিকল্পনার একটি অংশ হল আয়কর হ্রাসের জন্য রাজস্ব বৃদ্ধি এবং শিল্পকে উৎসাহিত করা।

তিনি উল্লেখ করেন যে, কিছু শিল্প, যেমন গাড়ি এবং ইস্পাত বিদেশি প্রতিযোগিতা কম হলে উপকৃত হতে পারে। তবে, [তাদের নিজস্ব উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত] মধ্যবর্তী পণ্যের জন্য তাদের উচ্চ মূল্যের সম্মুখীন হতে হবে।

ভিকার্ড বলেন, দীর্ঘমেয়াদে মানে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বেশ কয়েকটি শিল্পে বিনিয়োগ হতে পারে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে ভোক্তাদের ওপর শুল্কের প্রভাব উচ্চমূল্যে গিয়ে ঠেকবে।

গত বছর চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি ডলার মূল্যের পণ্য বিক্রি করেছে। একই সময় মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো চীনের কাছে যে পরিমাণ পণ্য বিক্রি করেছে, এটি (চীনের বিক্রি) তার প্রায় তিন গুণ। এই হিসাব ইঙ্গিত দেয় যে উচ্চ শুল্ক চীনা ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও বড় ক্ষতির মুখে ফেলবে।

সারাবাংলা/এইচআই

চীন পালটা শুল্ক মার্কিন-চীন শুল্ক যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর