Saturday 12 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এক স্কুলে ‘২ প্রধান শিক্ষক’, দ্বন্দ্বের খেসারত দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা!

আব্দুর রউফ পাভেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১২ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:০৮

বরইল উচ্চ বিদ্যালয়। ছবি: সারাবাংলা

নওগাঁ: জেলার পত্নীতলা উপজেলার বরইল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের খেসারত দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন নিয়ে আব্দুর রউফ ও গৌর চন্দ্র মাহাতো নামের দুই শিক্ষকের মধ্যে শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব। এতে দুই দলে বিভক্ত হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। এমনকি দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। আর এর প্রভাব পড়ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের গেটে তালা। এলাকাবাসীর জানান, এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন ২০২০ সালের দিকে অবসরে যাওয়ার পর জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে শিক্ষক গৌর চন্দ্র মাহাতো ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শ্যামল দত্ত যোগসাজশ করে টাকার বিনিময়ে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের মাধ্যমে আব্দুর রউফ নামে একজনকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে মামলা ঠুকে দিয়েছেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গৌর চন্দ্র।

বিজ্ঞাপন

এর আগে ৫ আগস্টের পর আব্দুর রউফ পদত্যাগ করে গৌর চন্দ্র মাহাতোকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের সম্মতি দেন। পরবর্তী সময়ে সরকারি এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেকে ফের প্রধান শিক্ষক দাবি করে বসেন রউফ। শুরু হয় উত্তেজনা। এমনকি এসব বিষয় নিয়ে হাতাহাতির মতো ঘটনাও ঘটে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের মধ্যে শুরু হয় দলাদলি। যার খেসারত দিচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছে, আমরা শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখতে চাই না। আমরা চাই পড়াশোনার সুন্দর পরিবেশ। তাই প্রশাসনসহ স্থানীয়দের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে তারা। এমনকি স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চান না এলাকাবাসী ও অভিভাবকরাও। তাদের দাবি, স্কুলের শিক্ষকরা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে। একাধিক অভিভাবক শিক্ষকদের এমন দ্বন্দ্বের কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে মামলা করতেও চান।

নিজেকে প্রধান শিক্ষক দাবি করা আব্দুর রউফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে গত ২৭ জুলাই বিধি মোতাবেক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পটপরিবর্তনের পর ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে সই নেওয়া হয়েছে। আমি ভয়ে পদত্যাগ করেছি এবং গৌরকে দায়িত্ব বুঝে দিয়েছি। ওই পদত্যাগপত্রে কী লেখা ছিল আমি পড়েও দেখিনি। এখন পরিপত্র অনুযায়ী আমি প্রধান শিক্ষক। তাই স্কুলে এসে দায়িত্ব নিতে চাইলে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া, আওয়ামী লীগের সময়ে আমার নিয়োগ হওয়ায় তারা আমাকে আওয়ামী লীগ মনে করছে।’

এদিকে প্রধান শিক্ষক দাবি করা গৌর চন্দ্র মাহাতো সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেনের পদ শূন্য হলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তৎকালীন সভাপতি শ্যামল দত্ত আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে আমাকে সরিয়ে জুনিয়র শিক্ষক প্রবীর কুমার দাসকে দায়িত্ব দেন। এর পর তাদের যোগসাজশে আরও জুনিয়র শিক্ষক আব্দুর রউফকে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। যেটা আইনবহির্ভূত। তাই এলাকাবাসী মেনে নিতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে সকলের সম্মতিক্রমে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রত্যয়ন দেন।’

পত্নীতলা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম জিল্লুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিধি মোতাবেক রউফকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিক্ষক গৌর সেটা মেনে নেয়নি। তাই মামলা করেছে। এদিকে পট পরিবর্তনের পর ছত্র-শিক্ষক এলাকাবাসীসহ সকলের সম্মতিক্রমে গৌরকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রত্যয়ন দেওয়া হয়েছে। এখন উভয়পক্ষই জটিলতা সৃষ্টি করছে। ইউএনও স্যার বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি। আশা করছি, খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।’

জানতে চাইলে পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বরইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আলীমুজ্জামান মিলন সারাবাংলার এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘উভয়পক্ষকে নিয়ে সমাধানের একটা চেষ্টা করা হবে।’ তবে যেকোনো অবস্থায়, যেকোনো উপায়ে স্কুল খোলা থাকবে এবং পাঠদান চলবে বলেও জানান তিনি।

সারাবাংলা/পিটিএম

২ প্রধান শিক্ষক দ্বন্দ্বের খেসারত প্রধান শিক্ষক বরইল উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর