সুনামগঞ্জের ৯ খেয়াঘাটে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার
১৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:০৭
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ পৌর শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ ৯টি স্থানে খেয়া পারাপারে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন হাজার-হাজার মানুষ। জেলা পরিষদ ও পৌরসভার আওতায় থাকা এসব খেয়াঘাটগুলোর অধিকাংশের ওঠা-নামার পথ কাঁচা। পাকা ঘাটেও নানান ভোগান্তি। ঘাটগুলো উঁচু-নিচু এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া খেয়াঘাটের আশপাশে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ট সবাই।
ওয়েজখালী এলাকায় নদীর পশ্চিম পাড়ের একাধিক গ্রামকে সংযুক্ত রেখেছে ওয়েজখালী খেয়াঘাট। পৌর শহরের বড়পাড়া এলাকার খেয়াঘাট, সাহেববাড়ী খেয়াঘাট দুইটি বেদে পল্লীসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা। এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার-হাজার মানুষ পারাপার হন। বড়পাড়া ঘাঁটটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং ওঠা-নামার কাঁচা পথে ভোগান্তি পোহাতে হয়। বছরের পর বছর ঘাটটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকলে যেন দেখার কেউ নেই।
এছাড়াও শহরের চাঁদনীঘাট, পাইকারি সবজি বাজার এলাকার খেয়াঘাট, লঞ্চঘাট, রিভারভিউ এলাকার খেয়াঘাট, হালুয়ারঘাট, খাইমতর খেয়াঘাটে খুবই জনবহুল। এসব ঘাট নিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে জনসাধারণকে।
খেয়া নৌকার মাঝিরা বলেন, ভোর থেকে রাত পর্যন্ত মানুষকে পারাপার করতে হয়। রোগী, বৃদ্ধ ও শিশু শিক্ষার্থীসহ সবাই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। অনেকেই মোটরসাইকেলসহ ঘাট পারাপার হন। সবসময় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকেন এ পথের মানুষ।
এ বিষয়ে হালুয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা মো. ওলি মিয়া বলেন, মানুষজনকে খেয়াঘাট দিয়ে যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নদীর অপরপ্রান্তে ঘাটটি পাকাকরণ করা হয়েছে, কিন্তু এই পাড়ের ঘাটটি ঝুঁকিপূর্ণ— কাঁচা অবস্থায় আছে। হেমন্তে ধুলোবালি মাড়িয়ে চলাচল করতে হয়। বর্ষায় মেঘ— বৃষ্টিতে ঘাট পিছলা হয়ে যায়, পা পিছলে অনেকেই দুর্ঘটনায় পড়েন। এ ঘাটটি চলাচলের অনুপযোগী। এটি পাকাকরণ জরুরি।
ওয়েজখালী এলাকার গুচ্ছ গ্রামের শীলা রাণী দাস বলেন, আমরা গুচ্ছগ্রাম থেকে শহরে বাজার-সদাই করতে আসা লাগে। ওয়েজখালী ফেরিঘাটে খেয়া পারাপারের সময় খুব কষ্ট হয়। ঘাটে ব্লক নাই। দুঘটনায় আশঙ্কায় আমরা আতঙ্কে থাকি।
ওয়েজখালী ফেরিঘাটের মাঝি ইসলাম উদ্দিন বললেন, বর্ষাকালে ফেরিঘাট ঝঁকিপূর্ণ থাকে, উঠা-নামা করতে দুর্ভোগে পড়তে হয়। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে, সবজি বাজার এলাকায় খেয়াঘাটের অবস্থা আরও নাজুক। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিঁড়ির ওপর ভেঙে গেছে। সিঁড়ির দুই পাশে ময়লা আবর্জনার স্তূপ।
সবজি বাজার এলাকার খেয়াঘাটের নৌকার মাঝি আলতাফ মিয়া বলেন, ভাঙ্গা সিঁড়ির আশপাশে ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ।
যাত্রীরা নৌকায় যাওয়া-আসাা সময় গালাগালি করে।
ইব্রাহীমপুরের বাসিন্দা কবির মিয়া বলেন, ‘আমরা দৈনন্দিন ব্যবসার জন্য শহরে আসা যাওয়া করি। ভাঙা সিঁড়ি দিয়ে আসা যাওয়া খুবই সমস্যা হয়। দুইপাশে ময়লা আবর্জনা জমে আছে। দুর্গন্ধে নাক চেপে চলাচল করতে হয়। বর্ষাকালে আরও বেশি সমস্যা হয়। পা পিছলে দুর্ঘটনা ঘটে। এই সমস্যা দেখার যেন কেউ নেই।’
খাইমতর এলাকার লিটন দাস বলেন, ‘আমাদের ফেরিঘাটটি খুবই ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ঘাটের কিছু অংশ পাকা থাকলেও অনেক জায়গায় ভাঙন রয়েছে। ঘাটটি মেরামত করা দরকার।’
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কালী কৃষ্ণ পাল বলেন, ‘পর্যাপ্ত বাজেট না থাকায় এবার শুধু লঞ্চঘাট এলাকায় খেয়াঘাটের কাজ হচ্ছে, পরবর্তীতে চাঁদনি ঘাটসহ অন্যান্য খেয়াঘাটগুলোর কাজ করা হবে।’
জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘জেলা পরিষদের আওতায় যে খেয়াঘাটগুলো আছে— সেগুলোর যাতায়াত ভোগান্তি দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/এসআর