চারুকলায় শোভাযাত্রার প্রস্তুতি, মূল আয়োজন ডিসি হিল-সিআরবিতে
১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০০ | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:০৫
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের আঙিনাজুড়ে কাঠের ফ্রেম, প্রতিকৃতি, মুখোশ আর রঙ-তুলির ছড়াছড়ি। ছবি: সারাবাংলা
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে বাংলা বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। প্রতিবছরের মতো এবারও চট্টগ্রামে বড় দু’টি আয়োজন হবে ডিসি হিল এবং সিআরবির শিরিষতলায়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বর্ণিল শোভাযাত্রার আয়োজনে মেতেছেন। রঙ-তুলির আঁচড় আর আলপনায় উৎসবের প্রাণ এনে দিচ্ছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এবং নগর পুলিশ ডিসি হিল ও সিআরবিতে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতির বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাতে জানিয়েছে। এর পর গত দু’দিন ধরে মূলত আয়োজনের জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে এ দুই ভেন্যুতে। এর মধ্যে সিআরবিতে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আর ডিসি হিলে শুধুমাত্র বর্ষবরণের আয়োজন করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের ডিসি হিলে পহেলা বৈশাখের ৪৭ তম আয়োজন করতে যাচ্ছে ‘সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ’। পহেলা বৈশাখের দিন সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৭টায় ডিসি হিলে অনুষ্ঠান শুরু হবে, শেষ হবে বিকেল ৪টায়। দলীয় গান, নৃত্য, আবৃত্তি, যন্ত্রসঙ্গীত থাকছে এবারের আয়োজনে।

ইনস্টিটিউটের আঙিনাজুড়ে কাঠের ফ্রেম, প্রতিকৃতি, মুখোশ আর রঙ-তুলির ছড়াছড়ি। ছবি: সারাবাংলা
সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলী টিটো সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতবছর রমজানের কারণে আমাদের দলীয় পরিবেশনা কিছুটা কম ছিল। এবার বেড়েছে, মোট ৫৬টি দলকে আমরা তাদের পরিবেশনের জন্য অনুমতি দিয়েছি। আরও কয়েকটি দল আবেদন করেছিল, কিন্তু অনুমতি দেওয়া যায়নি। কারণ, ডিসি হিলে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি পাওয়া নিয়ে একটু ঝামেলা ছিল, যে কারণে আমরা এবার বর্ষবিদায়ের প্রোগ্রামটাও করতে পারছি না। যদি আমরা সন্ধ্যার পরও প্রোগ্রাম করার অনুমতি পেতাম, তাহলে হয়তো সব দলকে সুযোগ দেওয়া যেত।’
এছাড়া নগরীর সিআরবির শিরিষতলায় বর্ষবিদায়ের অনুষ্ঠান চলবে রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। আয়োজক সংগঠন নববর্ষ উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম’র সভাপতি এম এ মালেক রীতি অনুযায়ী এর উদ্বোধন করবেন। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৭টা থেকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

ইনস্টিটিউটের আঙিনাজুড়ে কাঠের ফ্রেম, প্রতিকৃতি, মুখোশ আর রঙ-তুলির ছড়াছড়ি। ছবি: সারাবাংলা
নববর্ষ উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রামের উৎসব আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব আবৃত্তিশিল্পী ফারুক তাহের সারাবাংলাকে জানান, মোট ৫৬টি দলকে সম্মিলিত গান, নৃত্য, আবৃত্তি, যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফোক, লালন, মাইজভাণ্ডারি, মরমীসহ লোকসঙ্গীত পরিবেশন হবে এবার। তবে এবার সিআরবির আয়োজনের ঐতিহ্য ‘বলীখেলা’র পরিবর্তে জাতীয় খেলা কাবাডি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। সিআরবির মাঠে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চার পর্বে ভাগ হয়ে এ আয়োজন চলবে। সবশেষে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হবে।
বর্ষবরণের দিন বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন ফারুক তাহের।
এদিকে শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে চারুকলা ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা শোভাযাত্রা আয়োজনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইনস্টিটিউটের আঙিনাজুড়ে কাঠের ফ্রেম, প্রতিকৃতি, মুখোশ আর রঙ-তুলির ছড়াছড়ি। বিবর্ণ সেইসব প্রতিকৃতির ফ্রেমে রঙ দিয়ে জীবন্ত করছেন শিক্ষার্থীরা!

ইনস্টিটিউটের আঙিনাজুড়ে কাঠের ফ্রেম, প্রতিকৃতি, মুখোশ আর রঙ-তুলির ছড়াছড়ি। ছবি: সারাবাংলা
কেউ বা সেখানে রঙ-তুলিতে ফুটিয়ে তুলছেন বাঘের অবয়ব, কেউ বা মাছের প্রতিকৃতিসহ নানা লোকজ প্রতীক। বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যের সবটুকু অনুষঙ্গ ফুটিয়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা শিক্ষার্থীদের। আর ইনস্টিটিউটের সামনে বাদশা মিয়া সড়ক গেছে যে পাহাড়ের বুক চিরে, সেই পাহাড়ের সীমানা দেয়ালে আঁকা হচ্ছে আলপনা। বর্ষবিদায়ের সন্ধ্যায় সড়কজুড়েও আলপনা আঁকা হবে বলে জানালেন শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান কাজল দেবনাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার শোভযাত্রার আয়োজনের পুরোটাই করছে ছাত্র-ছাত্রীরা। একেবারে ফার্স্ট ইয়ার থেকে মাস্টার্সের লাস্ট ইয়ার পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীরাই যুক্ত হয়েছেন। তারা যেভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেভাবে আয়োজন চলছে। আমরা শিক্ষকরা শুধু তাদের চাহিদা অনুযায়ী সহযোগিতা দিচ্ছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ‘মঙ্গল’ পরিবর্তন করে আনন্দ শোভাযাত্রা নামকরণ করা হয়েছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তও শিক্ষার্থীরাই নেবে। তারা যদি মঙ্গল শোভাযাত্রা করতে চায়, সেটা করবে আর তারা আনন্দ র্যালি করতে চাইলে সেটাই করবে। আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছি না।’

সিআরবির শিরিষতলায় বর্ষবিদায়ের অনুষ্ঠান চলবে রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। ছবি: সারাবাংলা
চারুকলার নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, সকাল ৯টায় চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে বের হবে শোভাযাত্রা। চট্টেশ্বরী মোড়-আলমাস মোড়-কাজির দেউড়ি মোড়-এস এস খালেদ রোড-প্রেসক্লাব ইউটার্ন-সার্সন রোড হয়ে আবারও চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আর সন্ধ্যায় চারুকলার মুক্তমঞ্চে থাকছে সাংস্কৃতিক আয়োজন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমিতেও বর্ষবিদায় এবং বর্ষবরণের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন নিজস্ব উদ্যোগে উৎসবের আয়োজন করেছে।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম