বান্দরবানে শুরু হয়েছে পাহাড়িদের প্রাণের উৎসব সাংগ্রাই
১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১১:০৭ | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৩৪
বান্দরবান: বান্দরবানে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী পাহাড়িদের প্রাণের উৎসব সাংগ্রাই।
রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে এ উপলক্ষে উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে স্থানীয় রাজার মাঠ থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালী বেরা করা হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বর্ণাঢ্য র্যালীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মিজ শামীম আরা রিনি। র্যালীতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএসমং মারমা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিরামনীসহ বিভিন্ন দফতর ও প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তরা।
এই সময় মারমা,চাকমা-তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, বম, ত্রিপুরাসহ বান্দরবানে বসবাসরত ১১টি পাহাড়ি সম্প্রদায়ের আদিবাসী নারী-পুরুষরা নিজস্ব বিভিন্ন পোশাক ও ঐতিহ্যবাহী পরিচ্ছদ নিয়ে র্যালীতে অংশগ্রহণ করে। র্যালীটি শহরের প্রধান সড়ক পদক্ষীণ করে ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে বয়স্ক পূজার আয়োজন করা হয়।
নতুন বছরকে বরণ এবং পুরাতন বছর বিদায়কে ঘিরে পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি স্বত্বা সমূহ নিজস্ব সামাজিক ঐতিহ্য নিয়ে সমন্বিতভাবে সাংগ্রাই উৎসব পালন করে থাকে।
মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাইং, ম্রো সম্প্রদায় চাংক্রান, খেয়াং সম্প্রদায় সাংগ্রান, চাকমা সম্প্রদায় বিজু, তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় বিষু ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় বৈসু, এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের এই উৎসবকে সমষ্টিগত ভাবে বৈসাবি বলা হয়। বান্দরবানে মারমাদের সাংগ্রাই এর মূল আকর্ষণ জলকেলি উৎসব।
সকল পাপাচার ও গ্লানী ধুয়ে মুছে নিতে তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানো উৎসবে মেতে উঠে। পুরাতন বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণের জন্য মূলত এই উৎসব।
পুরাতন বছরের সব গ্লানী, দুঃখ, বেদনা ধুয়ে মুছে নতুন বছর যাতে সুন্দর এবং স্বাচ্ছন্দময় হয় সে জন্যই এসব প্রয়াস। এই উৎসব শুধু পাহাড়ীরা নয় বাঙ্গালীরাও নানা ভাবে পালন করে থাকে। সাংগ্রাই উৎসবটিকে দেখার জন্য বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বহু পর্যটকের আগমন ঘটে।
তবে বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায়ের লোকজনের সংখ্যা বেশি হওয়াতে সাংগ্রাইয়ের নানা অনুষ্ঠানগুলো ব্যাপক ঝাঁকজমকভাবে পালন করা হয়। এবার উৎসব উদযাপন কমিটি ৭দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন পরিষদ সভাপতি চুনুমং মারমা।
তিনি জানান, রোববার সকাল ৭টায় ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠ থেকে সাংগ্রাই বর্ণাঢ্য র্যালির মাধ্যমে বর্ষবরণ উৎসব সাংগ্রাইয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু। সাত দিনব্যাপী সাংগ্রাই উৎসবে রয়েছে, সমবেত প্রার্থনা, বৌদ্ধ মন্দিরে মন্দিরে ভান্তে (ধর্মীয় গুরুদের খাবার দান) সোয়াইং দান, তিন দিনব্যাপী জলকেলি উৎসব, পিঠা তৈরি, বৌদ্ধ মূর্তি স্নান, হাজারো প্রদীপ প্রজ্জলন, বয়স্ক পূজা এবং সম্প্রদায়গুলোর নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী নৃত্য-গান নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। সাংগ্রাইয়ের অন্যতম মূল আকর্ষণ জলকেলি উৎসব (পানি খেলা)। যুবক-যুবতীরা একে অপরের প্রতি পানি বর্ষণ করে। পানিকে পবিত্রতার প্রতীক মেনে মারমা তরুণ-তরুণীরা পানি ছিটিয়ে নিজেদের শুদ্ধ করে নেন। পাহাড়ের প্রতিটি পল্লীতে আয়োজন করা হচ্ছে জলকেলি উৎসবের। কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ এই খেলায় মেতে উঠেন।
এদিকে পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহি বর্ষ বিদায় ও বরণের প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবের আদি অনুষ্ঠানমালা দেখতে ইতোমধ্যে বান্দরবানে আসতে শুরু করেছে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। হোটেল-মোটেল ও কটেজগুলো অগ্রীম বুকিং হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জেলার মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম।
আগামী ১৮ এপ্রিল মৈত্রী পানি বর্ষন (জলকেলী) ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে সপ্তাহব্যাপী সাংগ্রাই উৎসব।
সারাবাংলা/এমপি