চট্টগ্রাম বারের নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক: এডহক কমিটির সদস্যের পদত্যাগ
১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:০২ | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৪৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একতরফা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিতর্কের জেরে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটি থেকে একজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছভাবে নির্বাচন পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছেন, এর দায়ভার থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তিনি পদত্যাগ করেছেন।
শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে জেলা আইনজীবী সমিতির ২১টি পদে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়। কোনো পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী নেই। এর ফলে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী ২১ জনকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করে সমিতির গঠিত নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগ, এলডিপি ও বাম সমর্থিত আইনজীবীদের অভিযোগ, বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের বাধায় তারা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারেননি।
এ অবস্থায় রোববার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন সদস্য আইনজীবী সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
এডহক কমিটির আহ্বায়ক বরাবর লেখা চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হওয়ায় ব্যক্তিগত মর্মপীড়ায় ভুগে বিবেকের তাড়নায় তিনি এডহক কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জানতে চাইলে আইনজীবী সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ১৩২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি এডহক কমিটি গঠিত হয়েছিল এবং এতে আমাকে একজন সদস্য করা হয়েছিল। এই দায়িত্ব আমি সম্মানের সাথে গ্রহণ করেছিলাম। নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনার জন্য আমরা একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছিলাম। আশা করেছিলাম, কমিশন স্বচ্ছতার সঙ্গে সকলের জন্য অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন পরিচালনা করবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নির্বাচন কমিশন তাদের যা করার কথা ছিল সেটা করতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘বারে কে নেতৃত্বে আসবে, কে যাবে- সেটা নির্বাচন কমিশনের বিষয় নয়। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ছিল স্বচ্ছতার সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা। কিন্তু আমরা কী দেখলাম ! একটি ময়লা কাপড়কে যদি আপনি ময়লা পানি দিয়ে ধুতে থাকেন, সেখান থেকে তো ময়লাই বের হবে। অথচ আমাদের সেটাই দেখতে হল। এ অবস্থায় এ ধরনের কর্মকাণ্ডের দায়ভার থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমি পদত্যাগ করেছি।’
জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেয়ার জন্য গত ১০ এপ্রিল সময় নির্ধারিত ছিল। সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য আওয়ামী লীপন্থী আইনজীবী আবদুর রশিদ এবং এলডিপি নেতা ও জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালের পিপি শাহাদাত হোসেন মনোনয়ন ফরম নিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। একইভাবে অন্যান্য পদেও আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম নিতে গেলে বাধা দেয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
এ অবস্থায় সমিতির ২১টি পদের প্রতিটিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের সংগঠন ‘জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের’ একজন করে প্রার্থী হন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১৪ পদে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা প্রার্থী হন। আর একটি সহ-সভাপতি পদ ও দুটি সম্পাদকীয় পদসহ মোট সাতটি পদে প্রার্থী হয়েছেন জামায়াত অনুসারী আইনজীবীরা।
প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি পদে আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক পদে মোহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সিরাজ, সহ-সভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুস, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলুল বারী, অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন, লাইব্রেরি সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফী বিনতে মোতালেব, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মনজুর হোসাইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে আবদুল জব্বার।
কমিটির নির্বাহী সদস্য পদের প্রার্থীরা হলেন- আহসান উল্লাহ মানিক, আসমা খানম, বিবি ফাতেমা, হেলাল উদ্দিন, মেজবাহ উল আলম আমিন, মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, মো. রোবায়তুল করিম, মো. শাহেদ হোসাইন, মোহাম্মদ মোরশেদ, রাহেলা গুলশান ও সাজ্জাদ কামরুল হোসাইন।
এদের মধ্যে সহ-সভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুস, সহ-সাধারণ সম্পাদক ফজলুল বারী, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুল জব্বার এবং নির্বাহী কমিটির চার সদস্য হেলাল উদ্দিন, মো. শাহেদ হোসাইন, মো. রোবায়তুল করিম ও মোহাম্মদ মোরশেদ জামায়াত সমর্থিত।
১৬ এপ্রিল নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনো পদে প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় আর ভোট নেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। এর ফলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে এবারই প্রথম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুরো কমিটি নির্বাচিত হতে যাচ্ছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কোণঠাসা হয়ে পড়েন দলটির সমর্থক আইনজীবীরা। এরপর প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এবারও জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের জন্য গত ১০ ফেব্রুয়ারি সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ভোটের মাত্র ৬ দিন আগে ৪ ফেব্রুয়ারি সেই সময়ের নির্বাচন কমিশনের ৫ সদস্য পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্রে বিভিন্নভাবে ‘হেনস্থা, ভয়ভীতি ও হুমকির সম্মুখীন’ হওয়ার কথা উল্লেখ করেছিলেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা।
এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি সমিতির নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি সমিতির সাধারণ সভায় ৫ সদস্যের একটি এডহক কমিটি গঠন করা হয়। পরদিন ১৭ ফেব্রুয়ারি এডহক কমিটিকে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুসারে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ১৮ মার্চ নির্বাচন কমিশন গঠন করে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটি।
সারাবাংলা/আরডি/এমপি