Tuesday 15 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফ্যাসিবাদের নাগপাশ কাটিয়ে মুক্ত আবহে বাঙালির বৈশাখ বরণ

ফারহানা নীলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৫২ | আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:৩১

ঢাকা: ফ্যাসিবাদের নাগপাশ কাটিয়ে এ বছর এক মুক্ত আবহে, মুক্ত বাতাসে বাঙালির জীবনে এসেছে পহেলা বৈশাখ। আর তাই ফ্যাসিবাদ মুক্ত ঐকতান নিয়ে পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২।

এবারের বর্ষবরণ শোভাযাত্রার মূল প্রতীকী ‘ফ্যাসিবাদীর বীভৎস মুখ’। কিন্তু শোভাযাত্রার একদিন আগে, দৃষ্কৃতিকারীরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় প্রতীকিটি। তবুও দমে যায়নি শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা। চারুকলার শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে, মাত্র ৪০ ঘণ্টায় তৈরি করা হয় নতুন প্রতীক।

বিজ্ঞাপন

নেই কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা। নিজের পছন্দমতো, বর্ণিল মুখোশ, রঙিন পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ও ঐতিহ্যবাহী সাজসজ্জায় উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।

শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া শিল্পী আক্তার বলেন, ‘‘আগে যখন এই শোভাযাত্রায় অংশ নিতাম, তখন হাতে নৌকার প্লাকার্ড বা অন্য কোনো নির্দিষ্ট প্লাকার্ড হাতে ধরিয়ে দেওয়া হতো। এবার আমি বেলুন বাঁশি নিয়ে র‌্যালিতে দাঁড়িয়েছি। আমাকে কেউ অন্য কিছু হাতে নিত বলেনি। তাই আমার মনে হচ্ছে, নতুনভাবে মনের মতো করে, মুক্ত নববর্ষ পালন করছি।’’

বাংলাদেশের ২৮টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে ভিন্ন রূপ পায় এবারের নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রা-১৪৩২। সাদ-লাল-কালো রঙের বাহারি আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। তাদের নিজস্ব দেশীয় পোশাকে, দেশীয় সাজে র‌্যালিতে আসেন তারা। সঙ্গে বহন করেছেন তাদের জীবনযাপনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন উপাদান।

তাদের একজন মধ্যে থেকে একজন বলেন, ‘‘সবসময় আমরা আমাদের পাহাড়ে নিজেদের মতো করে বৈসাবি পালন করি। এবার প্রথম ঢাকায় এসে পালন করছি। ঢাকায় এই ‘‘নববর্ষ আনন্দ শোভাযাত্রা’’ টেলিভিশনে দেখেছি। কিন্তু এবার আমাদেরকে এখানে সম্মানজনকভাবে অংশগ্রহণ করতে দিয়েছে। এতে আমরা অনেক খুশি। এবার নিজেকে বাংলাদেশের একজন নাগরিক বলে মনে হচ্ছে।’’

বিজ্ঞাপন

রেলির সম্মুখভাগে ছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) সুসজ্জিত ১৮টি ঘোড়া। ২৮টি নৃগোষ্ঠী, ব্যান্ডদল, বিশেষ অতিথিবৃন্দ, কৃষক দল, সাধু ও বয়াতি, জাতীয় নারী ফুটবল দল, ফ্যাসিবাদের মোটিফসহ অন্যান্য মোটিফ, রিকশা বহর, পুরান ঢাকার ৫টি ঘোড়ার বহরসহ সব শ্রেণি–পেশার মানুষ শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, দুই উপ-উপাচার্য, প্রক্টর, কোষাধ্যক্ষ প্রমুখ অংশ নেন শোভাযাত্রায়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা–কর্মীরাও এতে অংশ নেন।

ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এতে ফিলিস্তিনের পতাকা ও প্রতীকী মোটিফ তরমুজের ফালি ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের পতাকা ও ফিলিস্তিনি পতাকা পাশাপাশি রেখেই মুক্তির বাণি ছড়িয়ে দেয়া হয় শোভাযাত্রার মাধ্যমে।

শোভাযাত্রায় মুগ্ধর আলোচিত পানির বোতল প্রদর্শণ, আবেগ প্রবণ করে তুলেছিলো অনেককেই। জুলাই গণঅভ্যূথ্থানের স্মৃতি, হৃদয়ে নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেয় বাঙালি।

এরা আগে সকালে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে মানুষের ঢল নামে। বর্ণিল মুখোশ, রঙিন পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ও ঐতিহ্যবাহী সাজসজ্জায় হাজির হন তরুণ-তরুণীরা। পুরুষদের অনেকেই পাঞ্জাবি পরে আসেন, নারীরা আসেন বাঙালির চিরাচরিত শাড়িতে। অনেকের মাথায় শোভা পায় ফুলের টায়রা, গালে আঁকা ছিল আলপনা।

শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া মানুষকে বৈচিত্র্যময় জলরং, সরা চিত্র, মুখোশ, পুতুল ইত্যাদি বহন করতে দেখা যায়। এসো হে বৈশাখ, শুভ নববর্ষ ইত্যাদি লেখা সংবলিত টিশার্ট পরে, প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশ নেন অনেকে। শাড়ি-পাঞ্জাবি ছাড়াও ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পোশাকে দেখা যায় অনেককে। হাতে ন্যায্যতার; মিলনের নানা স্লোগান, কণ্ঠে নববর্ষকে বরণ করে নেওয়ার ঐতিহ্যবাহী নানা গান গাইতে গাইতে এগিয়ে চলেন তাঁরা।

শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া মানুষ এবারের নববর্ষকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখছেন। তাঁদের প্রত্যাশা আবহমানকালের মিলনের এ সংস্কৃতি সদা বহমান থাকবে। তাঁরা মনে করছেন, প্রশাসনিক উদ্যোগ বড় হলেও আধুনিকতার বিষবাষ্পে মানুষের হৃদয়ে কমছে এ সংস্কৃতির আবেদন। তাদের প্রত্যাশা এ সংস্কৃতি মানুষের হৃদয়ে আরও বেশি প্রোথিত হবে।

শোভাযাত্রায় রাজধানীর উত্তরা থেকে এসেছেন রেহেলা বেগম। তিনি সারাবাংলা’কে জানান, ‘এবার স্বাধীন দেশে স্বাধীন বাংলা বছর পালন করবো। অনেক দিন পর, মুক্ত পরিবেশে । তাই এই শোভাযাত্রায় অংশ নিবো, আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম। বলা যায়, ১০ বছর পর, আবার অংশ গ্রহণ করলা। খুব ভালো লাগছে। ’

আর এভাবেই, নানা আবহ নিয়ে পালিত হলো, ‘‘নববর্ষ আনন্দ শোভাযাত্রা’’ ।

সারাবাংলা/এফএন/এসআর

ফ্যাসিবাদ বৈশাখ বরণ মুক্ত আবহে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর