সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছে ৫০ লাখ ডলার দাবি করেছিলেন মডেল মেঘনা
১৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৪০ | আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:২৫
ঢাকা: একটি চক্রের হয়ে কাজ করছিলেন মডেল মেঘনা আলম। রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তিকে ফাঁসিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করাই ছিল ওই চক্রটির মূল উদ্দেশ্য। এমন কী সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদেরও ফাঁসানোসহ নানা অভিযোগ উঠে এসেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রাথমিক তদন্তে।
ডিবি পুলিশের তদন্তে জানা যায়, কারাগারে আটক থাকা মেঘনা আলম সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের কাছ থেকে ৫০ লাখ (৫ মিলিয়ন) ডলার দাবি করেছিলেন। বিভিন্ন উপায়ে দর কষাকষির পর ওই রাষ্ট্রদূত ২০ লাখ (২ মিলিয়ন) ডলার দিতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু মেঘনা আলম কিছুতেই তা মেনে নেন নি। এমন কী অন্য একটি পক্ষ তাকে বারবার বোঝানোর পরও ৫০ লাখ ডলার থেকে সরে আসেন নি। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে ওই রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেন। বিদায়ের আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মেঘনা আলমের নামে লিখিত অভিযোগ দিয়ে যান ওই রাষ্ট্রদূত।
এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের প্রেক্ষিতে মেঘনা আলমের বিষয়ে তদন্তে নামে ডিবি পুলিশ। তদন্তে রাষ্ট্রদূতের সাথে মেঘনা আলমের যোগাযোগের বিষয়টি উঠে আসে। এমন কী ডিবি পুলিশের সাথেও মেঘনা আলম মোটামুটি দরকষাকষি করেছেন। তার চক্রের কাছে ডিবি পুলিশ হেরে যান। এক পর্যায়ে টাকা চাওয়ার বিষয়ে সত্যতা পাওয়ায় তাকে আইনের আওতায় নেয় ডিবি পুলিশ। এরপর তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
যদিও মেঘনা আলমের বাবা গণমাধ্যমে দাবি করেছেন যে, মেঘনা আলমের সাথে সৌদির ওই রাষ্ট্রদূতের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সবকিছু আয়োজন থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রদূত না আসায় বিয়ে হয়নি। মেয়েকে নির্দোষ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের কোন দোষ নেই। সৌদি রাষ্ট্রদূতের কথায় মেয়েকে ধরে পুলিশ। যা অন্যায়।’
অভিযোগ উঠেছে, মেঘনা আলম কূটনীতি পাড়ায় সবসময় বেশ সরব। বিশেষ করে রাত নামলে গুলশান এলাকায় তার আনাগোনা বাড়ে। ভারতীয় হাইকমিশন অফিসে তার সবচেয়ে বেশি ঘোরাফেরা। সৌদির শ্রমবাজার বাংলাদেশের দখলে। রেমিট্যান্সের ৬০-৭০ ভাগই আসে সৌদি আরব থেকে। সেই শ্রমবাজার ধ্বংস করতেই মূলত মেঘনা আলমকে দিয়ে একটি চক্র লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সৌদির শ্রমবাজার হারালে লাভবান হবে প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলো। মেঘনা আলম হানিট্র্যাপের মাধ্যমে সৌদি রাষ্ট্রদূতকে ফাঁসিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্রমতে, এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার একজন বিশেষ সহকারী শুরু থেকেই মেঘনা আলমকে বাঁচাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। প্রথমদিন থেকেই মেঘনা আলমের বিষয়ে আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারকে জানিয়েছেন। একটা পর্যায়ে ওই বিশেষ সহকারী গণমাধ্যমে মেঘনা আলমের পক্ষে নিউজ করানোও শুরু করেন। যে কারণে অখ্যাত মডেল মেঘনা আলম আলোচনায় চলে আসে।
জানা যায়, রাষ্ট্রদূত ঈসার একটি অনানুষ্ঠানিক অভিযোগের ভিত্তিতে মেঘনা আলমকে আটক করে পুলিশ। পরে পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়েছেন। তিনি এখন গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। মেঘনা আলমের ঘটনায় সামির নামের আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি মেঘনা আলমের সহযোগী ছিলেন।
সারাবাংলা/ইউজে/আরএস