Monday 21 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচন ইস্যুতে হঠাৎ ইউটার্ন জামায়াতের, স্বস্তিতে বিএনপি

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৬ এপ্রিল ২০২৫ ২২:২৩

নির্বাচন ইস্যুতে কাছাকাছি অবস্থানে বিএনপি ও জামায়াত। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গতবছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে নির্বাচন প্রশ্নে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের মতভিন্নতা দেখা দেয়। বিএনপি যেখানে প্রথম থেকেই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন এবং নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে সংস্কার কাজ এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে বলে আসছিল, জামায়াত সেখানে গুরুত্ব দিয়ে আসছিল সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিচার শেষে নির্বাচন আয়োজনের ওপর।

বিজ্ঞাপন

ফলে রাজনীতির মাঠে এই দুই পুরোনো মিত্রের সম্পর্ক শত্রুতার পর্যায়ে নেমে আসার উপক্রম হয়। দুই দলের শীর্ষ নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে আকমণাত্মক বক্তব্য দিতে শুরু করেন। একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা নিয়েও কথা বলতে ছাড় দেননি বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে ৫ আগস্টের পর দেশব্যাপী বিএনপি নেতাদের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়ে ওঠেন জামায়াত নেতারা।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রাষ্ট্রসংস্কার প্রশ্নে এমন পরস্পবিরোধী অবস্থানের মধ্যেই রোববার (১৩ এপ্রিল) লন্ডনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। এই সাক্ষাতের সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ছিলেন। তার সঙ্গে জামায়াত আমিরের বিস্তারিত আলাপও হয় বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পরই মূলত জাদুমন্ত্রের মতো বদলে যায় জামায়াত আমিরের বক্তব্য। তিনি তার আগের অবস্থান পরিবর্তন করেন। এখন তিনি বিএনপির সুরে সুর মিলিয়ে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে, অর্থাৎ রোজা শুরুর আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন চান। অন্তর্বর্তী সরকারকে আর সময় দিতে চান না জামায়াতের আমির।

নির্বাচন ইস্যুতে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে বুধবার দুপুরে ঢাকায় সফররত মার্কিন ডেপুটি হেড অব মিশনের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠক শেষে ড. শফিকুর রহমান বলেন, ‘তারা (মার্কিন প্রতিনিধি দল) শুধু এটাই জানতে চেয়েছেন, কখন আমরা এই নির্বাচন অনুষ্ঠানটা দেখতে চাচ্ছি। আমরা বলেছি যে, প্রধান উপদেষ্টা চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে ইলেকশন দেওয়ার কথা বলেছেন। তার কমিটমেন্টে তিনি ঠিক আছেন কি না, তা আমরা দেখতে চাই।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমাদের ভিউ হচ্ছে, এটা (জাতীয় সংসদ নির্বাচন) রমজানের আগেই শেষ হয়ে যাক। ওই জুন পর্যন্ত অপেক্ষা, কখনো বর্ষা, ঝড়ঝাপটা, বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে, তখন আবার ইলেকশনটা না হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাবে। তাই আমরা চাচ্ছি, ওই আশঙ্কার আগেই, অর্থাৎ রমজানের আগেই এইটা (সংসদ নির্বাচন) হয়ে যায়, সেটা আমাদের মতামত।’

জামায়াত তাহলে আগামী রোজার আগেই নির্বাচন চাইছে কি না?— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, শুধু আগামী না। আগামীতে অনেক রোজাই আসবে। ২০২৬ সালে যে রমজান আসবে সেই রমজানের আগেই নির্বাচনটা হয়ে যাক, সেটা আমরা চাই।’

জামায়াত আমিরের এই বক্তব্যে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, হঠাৎ এমন কী হল যে, একেবারে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গেল জামায়াত? দলীয় সুত্রগুলো বলছে, নির্বাচনহীন দেশ দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এটা আর বাড়াতে চাচ্ছে না দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলো। এরই অংশ হিসেবে রোববার খালেদা জিয়া ও তারেকর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে হয়ত দ্রুত নির্বাচনের ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে জামায়াত-বিএনপি।

জানতে চাইলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের আমির যেটা বলেছেন, সেটা হলো— প্রধান উপদেষ্টা চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে ইলেকশনের কথা বলেছেন। তার কমিটমেন্টে তিনি ঠিক আছেন কি না তা আমরা দেখতে চাই। তবে, এটা রমজানের আগেই শেষ হলে ভালো হয়। কারণ, জুনে বর্ষা, ঝড়ঝাপটা, বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে, ছাত্রদের পরীক্ষা থাকবে। তখন আবার ইলেকশন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাবে। তাই রমজানের আগেই নির্বাচনটা হয়ে গেলে ভালো হয়।’

‘‘কিন্তু, মিডিয়া পুরো বক্তব্য না দিয়ে কেবল ‘রোজার আগেই নির্বাচন চাই’ বলে চালিয়ে দিয়েছে। এটা ঠিক করেনি। তার পুরো বক্তব্যটা ব্যাখ্যাসহ উপস্থাপন করা উচিত ছিল। আমাদের আমির যে কথা বলেছেন, তার সঙ্গে আমি শতভাগ একমত। আমরা এমন রাজনীতি করি যে, আমাদের আমির এক কথা বলবেন আর আমি আরেক কথা বলব’’— বলেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।

জানা গেছে, পুরোনো মিত্র জামায়াতের এই ইউটার্নে স্বস্তি ফিরে পেয়েছে বিএনপি। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম এবং রাজনীতির মাঠে নতুন শক্তি জাতীয় নাগরিক পার্টির একমত হলেও দ্রুত নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি একেবারেই একা হয়ে পড়েছিল। নির্বাচন ইস্যুতে চার বড় শক্তি ছিল একদিকে, আর বিএনপি ছিল আরেক দিকে। সেরকম একটা পরিস্থিতিতে জামায়াতের এই ইউটার্ন বিএনপিতে স্বস্তি এনে দিয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারবাংলাকে বলেন, ‘সংস্কার শেষে নির্বাচন— এই ধারণা বাস্তবসম্মত ছিল না। তাই শুরু থেকেই আমরা বলে আসছিলাম, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জায়গায় দ্রুত সংস্কার শেষ করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য ভালো হবে। এখন অন্য দলগুলোও বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্দি করছে— এটা গণতন্ত্রের জন্য ভালো হবে, রাজনীতির জন্য ভালো হবে, দেশের জন্যও ভালো হবে।’

শুধু জামায়াত নয়, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলনও একমত। রাজনীতির মাঠে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা ধর্মভিত্তিক এই রাজনৈতিক দলটিও মনে করে প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত শেষ করে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হয়ে যাওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার এবং নির্বাচন কমিশন সেদিকেই এগোচ্ছে বলে মনে করেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সেনাপ্রধান বলেছিলেন ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন। সেই ১৮ মাস আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণ হবে। আমাদের ধারণা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ এই সময়ের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সারাবাংলা/এজেড/পিটটিএম

খালেদা জিয়া জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান ডিসেম্বর তারেক রহমান নির্বাচন ফেব্রুয়ারি বিএনপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর