তফসিলের আগে বয়স ১৮ হলেই ভোটের সুযোগ দিতে চায় ইসি!
১৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:২৭
ঢাকা: জুলাই আন্দোলনের পর এ এক অন্যরকম সময়, যেন নতুন বাংলাদেশ। আর এই নতুন বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা ও দেশ গঠনে ভূমিকা রাখার চায় অনেকেই। তাদের-ই একজন মিরপুরের ১০ নম্বরের বাউন্ডারি রোডের বাসিন্দা ইশফাত জাহান। তবে তার বয়স এখনো ১৮ হয়নি। কিন্তু আগামী নির্বাচনে একজন ভোটার হিসেবে ভোট দিতে চায় সে।
নির্বাচন কমিশন আসছে ডিসেম্বরকে সামনে রেখে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নিবাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর আগেই অবশ্য ইশফাতের বয়স ১৮ পেরিয়ে যাবে। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘এর আগে আমি দেখেছি, আমাদের বাসার সবাই একসঙ্গে সকালবেলা রেডি হয়ে ভোট দিয়ে যায়। এখন আমার বয়স ১৭ চলছে, আসছে সেপ্টেম্বরে ১৮ হবে। তাই এবারও আমি ভোট দিতে পারব না।’
ইশফাতের মতো রেজওয়ান সিদ্দীক এখনো ১৮ পেরোয়নি। তারও ইচ্ছে জাতীয় র্নিবাচনে ভোট দেওয়ার। কিন্তু জানুায়ারির ১ তারিখের তার বয়স ১৮ না হওয়ায় সেও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ র্নিবাচনে ভোট দিতে পারবেন না। ইশফাত ও রেজওয়ানের মতো অনেকেই আছেন যাদের বয়স গত ১ জানুয়ারি ১৮ পেরোয়নি। আগামী ডিসেম্বরের আগে হয়তো তাদের বয়স ১৮ হবে। তবে ভোটার তালিকা হাল নাগাদ হয়ে যাওয়ায় তারা আসন্ন নির্বাচনে আর ভোট দিতে পারবেন না।
সেক্ষেত্রে তরুণদের একটি বিরাট অংশ ভোটের বাইরে থেকে যাচ্ছে। কেননা, বর্তমান আইন অনুযায়ী ভোট যে বছর হয়, সেই বছরের ১ জানুয়ারি যারা ১৮ বছর পূর্ণ করেন তাদেরই কেবল ভোটার তালিকায় যুক্ত করতে পারে ইসি। এতে অনেকেই নির্বাচনের সময় বয়স ১৮ হলেও ভোট দিতে পারেন না। তবে এবার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে চাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিন কারও বয়স ১৮ বছর হলে তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে চাচ্ছে ইসি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিন কারও বয়স ১৮ হলে যেন তিনি ভোট দিতে পারেন সে পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।’ তিনি জানান, এক্ষেত্রে আইনেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। তফসিল ঘোষণার আগেও অনেকের বয়স ১৮ হবে। তারাও ভোট দিতে চায়। এবার এই তরুণরা নতুন ভোটার হবেন। নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে, তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ হবে তাদের যেন ভোটার তালিকায় যুক্ত করা যায়।
ইসির এই নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে অনেক তরুণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। তাই এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ নতুন ভোটারদের আগ্রহ আরও বেশি বাড়াবে। ভোটের প্রতি ফের সবার উৎসাহ বাড়বে।’ নির্বাচন কমিশনকে আইন পরির্বতন করে হলেও এ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার কথাও বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, কমিশন সভায় অনুমোদন পেলে তা অধ্যাদেশ আকারে জারির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সরকারের কাছে এমন প্রস্তাব গেলে তা খুব দ্রুতই পাস হবে। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তরুণ সমাজ নেতৃত্ব দিয়েছে। তাই যতটা পারা যায় তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আর সরকার এ বিষয়ে একমত হবেন।’
ইসির তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১২ কোটি ৩৭ লাখ ভোটার। এদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ তরুণ, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। ভোটার তালিকা হালনাগাদের পর তরুণ ভোটারের এই সংখ্যা আরও বাড়বে। এদিকে, নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ভোটার তালিকা আইনের সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশনের আইন সংস্কার সংক্রান্ত কমিটি। ওই কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ।
ভোটার তালিকা আইনের ৩-এর দফা ‘জ’ এবং ১১(১) ধারায় সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে ইসির এ সংক্রান্ত কমিটি। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ধারা-৩ এর উপধারা (জ) ‘ভোটার যোগ্যতা অর্জনের তারিখ অর্থ এই আইনের অধীনে প্রতিটি ভোটার তালিকা প্রণয়ন, সংশোধন, পুনঃপরীক্ষিত বা হালনাগাদের ক্ষেত্রে যেই বৎসর উহা এইরূপে প্রণীত, সংশোধিত, পুনঃপরীক্ষিত বা হালনাগাদকৃত হয় সেই বৎসরের জানুয়ারি মাসের পহেলা তারিখ অথবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত তারিখ’ প্রতিস্থাপন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
আর ধারা ১১-এর ১ উপধারায় উল্লেখিত ‘০২ জানুয়ারি হইতে ০২ মার্চ পর্যন্ত’ এরপর ‘অথবা কমিশন কর্তৃক স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত’ শব্দসমূহ এবং ‘পূর্বের বৎসরের ০২ জানুয়ারি’-এর পর ‘বা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ভোটার যোগ্যতা অর্জনের তারিখ’ শব্দসমূহ যুক্তের সুপারিশ করা হয়েছে। এই বিধান যুক্ত হলে বছরের যেকোনো সময়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পাবে নির্বাচন কমিশন। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে অর্থাৎ চলতি বছরের যেকোনো সময়ে খসড়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে পারবে।
এদিকে সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে ৪৩ লাখের ওপরে বাদ পড়া ভোটার নিবন্ধিত হয়েছে। নতুন হয়েছে ১৯ লাখ ৬৬ হাজার। এনিয়ে মোট ৬৩ লাখ ভোটার নিবন্ধিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংশোধনী আইনের মাধ্যমে যদি ইসি নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তির ক্ষমতা পায়, তাহলে আগামী জাতীয় নির্বাচন আরও অধিক অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য হবে।
সারাবাংলা/এনএল/পিটিএম