সরকারি চাকরি আইনে আসছে সংশোধনী, বন্ধ হচ্ছে আন্দোলনের পথ
১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:২৫ | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৩২
ঢাকা: যোগ্য হয়েও কেউ হয়েছেন পদবঞ্চিত, কেউ দীর্ঘ দিনে পাননি পদোন্নতি, আবার কাউকে করা হয়েছে বিনা কারণে বদলি। এমন শত অভিযোগ নিয়ে গত কয়েকমাসে অন্যান্য পেশাজীবীদের মতো আন্দোলন করেছেন সরকারি কর্মজীবীরা। প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়েও হয়েছে বিক্ষোভ মিছিল ও মিটিং। প্রশাসন ও অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারাও জড়িয়েছেন মুখোমুখি দ্বন্দ্বে। এছাড়া, ফেসবুকে পরস্পরবিরোধী লেখালেখির কারণে সাময়িক বহিষ্কারের মতো শাস্তিও পেয়েছেন কর্মকর্তারা।
এই প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে নতুন একটি অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খসড়াটি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন পেলে এ বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হবে। জানা গেছে, নতুন অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন হলে সরকারি চাকরিজীবীরা আন্দোলনের সুযোগ হারাবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগ নতুন এ অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করেছে। জরুরি ভিত্তিতে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে অধ্যাদেশটি প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ওপরে নির্দেশ ছিল, সরকারি চাকরি আইনটি সংশোধন করে দ্রুত খসড়া অধ্যাদেশ প্রস্তুত করা। আমরা এরই মধ্যে সেটা প্রস্তুত করেছি। এখন উপদেষ্টা পরিষদে এটি উপস্থাপন করা হবে। উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন দিলে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।’
আইনটিতে কী ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন জারির পরেই বিস্তারিত জানতে পারবেন। তবে নতুন অধ্যাদেশে আইনটি থেকে কিছু বিষয় বাদ দিয়ে নতুন কিছু যোগ হবে। সেখানে সরকারি চাকুরিজীবীদের কর্মসূচি গ্রহণ ও অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে থাকছে। যেমন কোনো কর্মসূচিতে তিনজনের বেশি কর্মচারী অংশ নিতে পারবেন না।’
বিষয়টি নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানকে প্রশ্ন করা হলে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। এটি হলে সবাই জানতে পারবেন। এ বিষয়ে এখনই বলার মত কিছু নেই আমার কাছে।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে সরকারি চাকুরিজীবীদের মধ্যে কানাঘুষো চলছে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমন আইন যদি সত্যিই করে থাকে, তাহলে সেটা অন্যায় হবে। দাবি-দাওয়া, আন্দোলন ছিল, থাকবে। এমন আইন হলে সরকারি চাকরিজীবীদের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমাদের কথা বলার সুযোগ থাকবে না।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর গঠন করা হয় বর্তমান অন্তর্বতী সরকার। অন্তবর্তী সরকার গঠনের পর নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নামে বিভিন্ন পেশাজীবীরা। বিভিন্ন দাবি তুলে আন্দোলনের কর্মসূচিও দেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু তো বটেই, এর বাইরেও আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন তারা। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বঞ্চিত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন সচিবের কার্যালয় ঘেরাও করেন কয়েক দফা। বিক্ষোভ মিছিল করেন সচিবালয়ে।
এই আন্দোলন আরও জোরালো হয় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পর। প্রশাসন ক্যাডার ও আন্তঃক্যাডার বৈসম্য নিরসন পরিষদের ব্যানারে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে উভয়পক্ষ কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামেন। পরস্পরের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য করায় শাস্তির মুখেও পড়েন অনেকে। তারপরও সরকারি কর্মচারী দাবি আদায়ে কর্মসূচি চালিয়ে যান।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম