ঋণের দুই কিস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জুনে
মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল, রিজার্ভ প্রত্যাশার তুলনায় বেশি: আইএমএফ
১৭ এপ্রিল ২০২৫ ২০:১২
ঢাকা: বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে এবং রিজার্ভের পরিমাণ প্রত্যাশার তুলনায় বেশি বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল। তবে ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক অর্থায়ন ঘাটতি মোকাবিলা এবং মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে স্বল্পমেয়াদি নীতিগত কড়াকড়ি গ্রহণ অপরিহার্য।
এ প্রেক্ষিতে আগামী জুনে ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি ছাড় করা হবে কি না- তা আইএমএফ’র বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে নির্ধারিত লক্ষ্যের ভিত্তিতে আলোচনা চলবে।
ঢাকা সফর শেষে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ প্রতিনিধি দল এসব কথা জানায়।
উল্লেখ্য, গত ৬ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সফরকালে আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ), এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)–এর আওতায় তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতিসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
আইএমএফ বলেছে, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমলেও তা এখনও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। মূল্যস্ফীতি (৯ দশমিক ৪ শতাংশ) এখনও উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের আলোচনা চলমান। বাংলাদেশও সঠিক পথে আছে। বাংলাদেশকে দেওয়া ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের ৪র্থ ও ৫ম কিস্তি পাওয়ার বিষয়ে আগামী জুনে সিদ্ধান্ত হবে।
আইএমএফের বাংলাদেশের মিশন প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, সঠিক সময়ের আগে মুদ্রানীতি যেন আগাম শিথিল না করা হয় সেজন্য সেটি সতর্কভাবে পুনঃসমন্বয় করতে হবে। এটি মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস পূরণে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে বিনিময় হার আরও নমনীয় হলে মূল্য প্রতিযোগিতা বজায় থাকবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠিত হবে এবং বাহ্যিক ঝুঁকির বিরুদ্ধে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বাড়বে।
পাপাজর্জিও বলেন, কর সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি, যাতে অপ্রয়োজনীয় কর সুবিধা তুলে দিয়ে করব্যবস্থাকে আরও সরল ও কার্যকর করা যায়।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে পাপাজর্জিও বলেন, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এখনো একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৩ শতাংশ, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ৫.১ শতাংশ। গণঅভ্যুত্থান, কঠোর নীতিগত সমন্বয় এবং বিনিয়োগে অনিশ্চয়তার কারণে এই মন্থরতা দেখা দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মিশন প্রধান পাপেজোরজিউ বলেন, স্বচ্ছতা, সুশাসন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। ব্যাংক খাতে সুসংগঠিত সংস্কার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সুশাসন ও স্বচ্ছতা বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে ও রপ্তানি খাতের বৈচিত্র্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জলবায়ু-সহনশীল অর্থনীতিতেও বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি। ওয়াশিংটনে আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা চলবে বলে তিনি জানান।
আইএমএফ বলেছে, বড় আকারের বৈদেশিক অর্থায়নের ঘাটতি পূরণ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালার প্রয়োজন রয়েছে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে কর সংস্কারের ত্বরান্বিত বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, বিনিময় হারে নমনীয়তা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনের দিকেও দৃষ্টি রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/আরএস