Monday 21 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাবিতে ‘সিন্ডিকেট’ থেকে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের অপসারণ করতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

রাবি করেসপন্ডেন্ট
১৮ এপ্রিল ২০২৫ ০০:১০

রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সিন্ডিকেট থেকে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের অপসারণ ও শিক্ষক নিয়োগে ইউজিসি’র অভিন্ন নীতিমালা বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড়ে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।

কর্মসূচিতে বক্তারা অনতিবিলম্বে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের অপসারণ, ইউজিসি’র অভিন্ন নীতিমালার বাস্তবায়ন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত নির্ধারণে শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানান। দাবি না মানলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দেন তারা।

এ সময় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সংগঠক আকিল বিন তালেব বলেন, ‘পাঁচ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আবার রাস্তায় দাঁড়াতে হবে এটি আমরা কখনো ভাবিনি। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের যে ভূমিকা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাতে ব্যথিত হওয়া ছাড়া কিছু বলার নেই। উপাচার্য স্যারকে আমরা বলতে চাই, আপনার কাছে আমরা কতোগুলো সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আপনি পদক্ষেপ নিন, নয়তো আমরা আবারও রাজপথে নামতে বাধ্য হব।’

রাবির সাবেক শিক্ষার্থী মোহম্মদ আলী বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে সবকিছুতে যোগ্য। অথচ আমি নাকি শিক্ষক নিয়োগে আবেদন করতে পারবো না। এই বিশ্ববিদ্যালয় কারো বাপ দাদার সম্পত্তি না। এখানে ফ্যাসিবাদের দোসরদের ঠাঁই নেই। ফ্যাসিবাদের বিরোধীতা করার কারণে এই ক্যাম্পাস থেকে আমার ভাই সনদ নিয়ে বের হতে পারেননি, আমার পরিবারকে বারবার লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে। বর্তমান প্রশাসনকে বলতে চাই আপনারা ফ্যাসিস্টদের পথ অনুসরণ করবেন না। আমরা রাস্তায় নামতে জানি। আমাদেরকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করবেন না।’

বিজ্ঞাপন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আজকে যদি ৫ আগস্ট না আসতো এবং আওয়ামী সরকারের পতন না হতো, তাহলে যে শিক্ষাগুলো আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করে এখন প্রশাসনে বসে আছে, তাদের ব্যবস্থা আওয়ামী শিক্ষকরা কি করত? তারা এত সহনশীলতা দেখাতো না। যে শিক্ষকরা-শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে তাদের প্রত্যেকের অবস্থা খারাপ হতো। অথচ বিপ্লবের দীর্ঘ প্রায় নয় মাস পার হলেও আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না হয়নি। তারা এখনও বহাল তবিয়তে আছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই দ্রুত তাদের অপসারণ করতে হবে।’

আরেক সমন্বয়ক আকিল বিন তালেব বলেন, ‘উপাচার্যের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনার সঙ্গে রাজপথে আন্দোলন করেছিলাম, অথচ আজকে আপনার প্রশাসনের বিরুদ্ধে আমাদেরকে পথে নামতে হয়েছে। আমাদেরকে রাজপথে নামতে বাধ্য করবেন না। যে ফ্যাসিবাদী কায়দায় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হতো, অনতিবিলম্বে সেই নীতিমালা বাতিল করতে হবে।’

রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষক হবে সেটা এই আওয়ামী সিন্ডিকেট নির্ধারণ করে দিবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত নির্ধারণে আওয়ামী সিন্ডিকেটের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না। আপনারা রাতের বেলায় আওয়ামী সিন্ডিকেটের সঙ্গে মিটিয়ে বসেন আবার দিনের বেলায় বয়ান দেন আমরা আওয়ামীবিরোধী। আওয়ামী শিক্ষকদের ক্ষেত্রে আপনারা সুশীলগিরী দেখাবেন না। এরা শ্রেণিকক্ষে ভিন্ন মতে বিশ্বাসী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে হেনস্থা করতো, পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে দিতো।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলে দিতে চাই আপনারা ছাত্রদের মতামত গুরুত্ব দিবেন। কারণ এই ছাত্রদের মাধ্যমেই জুলাই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। সিন্ডিকেট থেকে আওয়ামী শিক্ষকদের বিতাড়িত করে ইউজিসির দেওয়া নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যকর করতে হবে। ইউজিসির প্রত্যেকটা শব্দ বাস্তবায়ন করতে হবে, কেননা আপনারা এতে সংযোজন করে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করেন। নিজেদের ছেলে, মেয়ে এমনকি জামাইকে পর্যন্ত শিক্ষক হতে সুযোগ করে দেন। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, অনতিবিলম্বে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের অপসারণ এবং শিক্ষক নিয়োগে অভিন্ন ইউজিসি নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে।’

কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবি সমন্বয়ক ও ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ছাত্র মিশন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি জি এ সাব্বির, ছাত্র অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি আমানুল্লাহ খান ও আরবি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন। এ সময় বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এইচআই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর