চলমান মার্কিন-চীন শুল্ক যুদ্ধের মধ্যে চীনা প্রস্তুতকারক ও সামাজিক মাধ্যমের কনটেন্ট ক্রিয়েটররা ইউরোপীয় বিলাসবহুল ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর উৎপাদন নিয়ে সম্প্রতি চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, বহু খ্যাতনামা ইউরোপীয় বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের পণ্য আসলে চীনেই তৈরি হয় নামমাত্র খরচে, এরপর ‘মেইড ইন ফ্রান্স’ বা ‘মেইড ইন ইতালি’ ট্যাগ লাগিয়ে বিক্রি করা হয় উচ্চ মূল্যে। এই তথ্য ফাঁস হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যম টিকটকে একটি ভাইরাল ট্রেন্ড দেখা গেছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রচারিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ইংরেজি সংবাদমাধ্যম মরক্কো ওয়ার্ল্ড নিউজ–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুচি, প্রাডা, চ্যানেল, ফেন্ডি ও হারমেসের মতো প্রথম সারির বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের বহু পণ্যই চীনের কারখানায় উৎপাদিত। এরপর সেগুলো ইউরোপীয় লেবেল দিয়ে বাজারজাত করা হয়। একজন টিকটক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘আপনি গুচি থেকে যা-ই কিনুন না কেন তার ৮০ শতাংশ চীনেই তৈরি। প্রাডার ৬০ শতাংশের বেশি পণ্য চীন থেকেই আসে। এটা যেন ‘দ্য উইজার্ড অফ অজ’ সিনেমার মতো, পর্দা টেনে দেখলেন আসলে পেছনে কোনো জাদু নেই।’
এই ট্রেন্ড এমন সময়ে এসেছে যখন বিশ্বব্যাপী ট্রাম্পের শুল্কারোপের কারণে বিলাসবহুল পণ্যের বাজার, যার মূল্য প্রায় ৩৮০ বিলিয়ন ডলার, তা বড় রকমের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালে এই বাজারে ২ শতাংশ পতন দেখা যায়, যার অন্যতম কারণ চীনা ভোক্তাদের ক্রয় অভ্যাসে পরিবর্তন। এক দশক আগে বিশ্ব বিলাসবহুল বাজারে চীনের অংশগ্রহণ ছিল ৫০ শতাংশ, বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র ১২ শতাংশে। মহামারির পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট ও জাতীয়তাবাদের উত্থানের কারণে এখন তরুণ চীনা ভোক্তারা দেশীয় ব্র্যান্ডকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, যেগুলো একই মানের পণ্য তুলনামূলক কম দামে দিচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যম টিকটকের একটি ভিডিও, যা @senbags2 নামক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছে, যেখানে এক ব্যক্তি দাবি করছেন যে, বিলাসবহুল পণ্যগুলোতে যেই দেশের লেবেলে উৎপত্তিস্থল লেখা থাকুক না কেন, ৮০ শতাংশ বিলাসবহুল হ্যান্ডব্যাগ চীনে তৈরি হয়।

টিকটকের @senbags2 অ্যাকাউন্টের ব্যবহারকারী ওয়াং সেন। ছবি: সংগৃহীত
তিনি ভিডিওতে বলেন, ‘গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা গুচি, প্রাডা, লুই ভিটন-এর মতো বেশিরভাগ বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের জন্য ওইএম (মূল সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক) ফ্যাক্টরি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা চীনা পণ্য থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছে—তাহলে আপনি কি মনে করেন বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নিচ্ছে? হ্যাঁ, তারা চেষ্টা করেছিল—কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। চীনের বাইরে ওইএম ফ্যাক্টরিগুলোর মান এক নয়। তাই আমাদের থেকে সরাসরি কেনাকাটা করুন।’
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা বিষয়টিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প প্রশাসন চীনা আমদানির উপর সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, যদিও প্রযুক্তি কোম্পানির চাপে ইলেকট্রনিক পণ্য এই শুল্কের বাইরে রাখা হয়েছে।
যত বেশি চীনা নির্মাতা ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর এই বাস্তবতা উন্মোচন করছেন, ততই বৈশ্বিক ভোক্তারা ভাবছেন বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো আদৌ কি তাদের অতি বিলাসবহুল ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারবে কিনা, নাকি পশ্চিমা ভোক্তা সংস্কৃতির আধিপত্য ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাবে।