আগামীর বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন নতুন গঠনতন্ত্র: ফরহাদ মজহার
১৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:০৭ | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৪৬
ঢাকা: আগামী বাংলাদেশের জন্য নতুন সংবিধান না, নতুন গঠনতন্ত্রের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে প্রেসক্লাবে ইমাজিনেক্সট আয়োজিত জাতীয় সংস্কৃতি: প্রেক্ষিত নতুন বাংলাদেশ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এই সংবিধানের অধীন গঠিত সরকারকে আমি বৈধ মনে করি না। আমি জনগণের পক্ষে কথা বলি, এই সরকারের পক্ষে সবসময় থাকব–প্রশ্নই আসে না। সকল প্রকার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের সংস্কৃতিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক মানদণ্ডে পৌঁছাতে হলে জাতীয়ভাবে সকল সম্প্রদায় ও বিশ্বাসের মানুষকে এক হতে হবে এবং একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ফলে এখনকার যে লড়াই হবে সাংস্কৃতিক লড়াই। যেটা অপূর্ণ যা আমরা করতে পারিনি সেটাকে সম্পূর্ণ করার লড়াই।’
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘কেন আমি বারবার গণঅভ্যুত্থানে জোর দিচ্ছি, বিপ্লব বলছি না। বিপ্লব বিদ্যমান আইন বা সংবিধান বাতিল করে নতুন ব্যবস্থা পত্তন করে। কিন্তু এই গণঅভ্যুত্থান আমাদেরকে নতুন রাষ্ট্র গঠনের দিকে নেয়নি, বরং শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধানকেই বহাল রেখেছে।’
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘গঠনতন্ত্র মানে জনগণ নিজেরাই অংশগ্রহণ করবে। তারা পরস্পরের সঙ্গে কীভাবে বাস করবে এটা তারা তৈরি করে। আর এখানে তারা সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেয় এবং সেখান থেকে শিক্ষা নেয়, কোনটাকে বর্জন করবে কোনটাকে রাখবে। এ সরকার দুটি বিষয় করে দেখিয়ে দিয়েছে। একটি হচ্ছে চৈত্র সংক্রান্তি এবং অপরটি হচ্ছে নববর্ষ।’
তিনি বলেন, ‘নববর্ষের পরে আমি অনেক পত্রিকা দেখেছি, অধিকাংশ পত্রিকা বুঝতে পারেনি এ সরকার এ দুইটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে জনগণকে কী বার্তা দিতে চাচ্ছে।’
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এখন বলা যায় যে, চৈত্র সংক্রান্তি এটা আসলে কেন গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চৈত্র সংক্রান্তি আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত। আমাদের কৃষকরা সংক্রান্তি করে। বৈশাখ মাস যখন আসে তখন চৈত্র যে নক্ষত্র এবং গ্রহের যে নক্ষত্র তার সঙ্গে তাদের (কৃষকদের) জীবনটা যুক্ত। ফলে সৌরমণ্ডলের ওই রাশিটা চলে যায় এবং মেষ রাশিতে প্রবেশ করে। এ যে পরিবর্তনটা এটার সঙ্গে ঋতুর পরিবর্তন হয়। আর এ ঋতুর পরিবর্তনটা তারা (কৃষকরা) উৎসব করে পালন করে।’
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতিতে কোনো ক্যালেন্ডার নেই। আমাদের সংস্কৃতিতে ঋতু আছে। ঋতু কিন্তু বারবার ফিরে ফিরে আসে। আর আপনি যখন বৈশাখ করে বলেন, সমস্ত অতীতের ময়লা ধুয়ে যাক মুছে যাক। তখন কিন্তু আপনি আপনার ঐতিহ্যকে অস্বীকার করছেন। আপনার ট্রেডিশনকে অস্বীকার করছেন। আপনার ধর্মকে অস্বীকার করছেন। ফলে পুরোনো বলে কিছু নেই। এগুলো আমরা কলোনিয়াল যুগ থেকে শিখেছি যে পুরোনো মানে আবর্জনা এগুলোকে ফেলে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ফলে এ সংক্রান্তি করার মধ্য দিয়ে আমাদের নতুন যে সংস্কৃতির উদ্বোধন করেছি তার মানে হচ্ছে, আমরা নতুনভাবে নিজেদের জানার চেষ্টা করছি। বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে গড়ে ওঠা যে বিনোদন সংস্কৃতি, এটাকে আমরা সংস্কৃতি বলি না।’
তার মতে, বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান ও শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি নয় এবং এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে জনগণকেই সোচ্চার হতে হবে। তিনি বাংলাদেশকে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরের আহ্বান জানান।
সারাবাংলা/এফএন/এইচআই