চীন-যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক যুদ্ধ
পরস্পর সেসব পণ্য আমদানি-রফতানি করে
১৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৩৬ | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৫০
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে মোট ৪৩৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য কিনেছে, যেখানে তারা চীনে রফতানি করেছে মাত্র ১৪৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এই বিশাল ২৯৫ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি বা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এই ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশে উন্নীত করেছেন। এর অর্থ, চীনা পণ্য এখন যুক্তরাষ্ট্রে মূল দামের প্রায় আড়াই গুণ কর দিয়ে বিক্রি হচ্ছে, ফলে তা বাজারে প্রতিযোগিতা হারাচ্ছে। জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ হারে শুল্কারোপ করেছে।
বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনৈতিক শক্তির এই পালটা-পালটি শুল্কারোপ নীতির ফলে মোবাইল ফোন, সেমিকন্ডাক্টর, পোশাকসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ও উৎপাদন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করেছে।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে দুই দেশের মধ্যে চলমান আমদানি-রফতানি সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র চীনে যা রফতানি করে—
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীনে মোট ১৪৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করে। এর মধ্যে প্রধান পণ্যগুলো ছিল— খনিজ জ্বালানি, তেলবীজ ও তৈলজাত ফল, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, মেশিনারি ও যান্ত্রিক যন্ত্র, বিমান ও মহাকাশ যান।
চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্র যা আমদানি করে—
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে ৪৩৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। প্রধান পণ্যগুলো হল— বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর, বয়লার, মেশিনারি, খেলনা, গেমস ও ক্রীড়া সামগ্রী, প্লাস্টিক সামগ্রী, আসবাবপত্র ও কুশন।
সবচেয়ে বেশি চীনা পণ্য কিনেছে ক্যালিফোর্নিয়া, যা প্রায় ১২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইলিনয়স, যা ৪২ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে টেক্সাস, যা ৩৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তবে চীনে সবচেয়ে বেশি পণ্য বিক্রি করে টেক্সাস, যার মূল্যমান ২২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো যেসব পণ্য আমদানি করে—
যুক্তরাষ্ট্রের ১৫টি অঙ্গরাজ্যে প্রধান আমদানি পণ্য হল— গয়না, খেলনা, স্পোর্টস সামগ্রী ইত্যাদি। ৬টি অঙ্গরাজ্যে (ফ্লোরিডা, ইলিনয়স, ইন্ডিয়ানা, নেভাডা, পেনসিলভানিয়া, টেনেসি) প্রধান আমদানি পণ্য যোগাযোগের যন্ত্রাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য যেসব পণ্য চীনে রফতানি করে—
৬টি অঙ্গরাজ্যের (কলোরাডো, আইওয়া, কানসাস, নেব্রাস্কা, সাউথ ডাকোটা ও উটাহ) প্রধান রফতানি করা পণ্য পশু জবাই ও প্রক্রিয়াকরণ পণ্য।
৫টি অঙ্গরাজ্যের (অ্যারিজোনা, কানেকটিকাট, ফ্লোরিডা, কেনটাকি, ও ওহাইও) প্রধান রফতানি করা পণ্য মহাকাশ যান পণ্য ও যন্ত্রাংশ।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসন প্রথম শুল্কারোপ করে ১ ফেব্রুয়ারি। ট্রাম্প চীনা পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্কারোপের নির্বাহী আদেশে সই করেন, সঙ্গে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যেও ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হয়। এরপর ২ এপ্রিল সব দেশের ওপর ১০ শতাংশ আর চীনের ওপর ৩৪ শতাংশ বাড়তি শুল্কারোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন।
এরপর ৪ এপ্রিল চীন পালটা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করে। আর ৭ এপ্রিল ট্রাম্প আরও ৫০ শতাংশ শুল্কারোপের হুমকি দেন, ফলে চীনা পণ্যে কর বেড়ে দাঁড়ায় ১০৪ শতাংশ। পালটা ৯ এপ্রিল চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ৫০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক বসায়, ফলে মোট শুল্ক হয় ৮৪ শতাংশ। সবশেষ ১০ এপ্রিল চীনের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আগের ২০ শতাংশের সঙ্গে মিলিয়ে ১৪৫ শতাংশ হয়।
গত ১১ এপ্রিল ট্রাম্প ঘোষণা দেন, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ও কিছু প্রযুক্তিপণ্য শুল্কের আওতামুক্ত থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস বিভাগ জানায়, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ডাটা প্রসেসিং যন্ত্রপাতি, সেমিকন্ডাক্টর, চিপ, ডিসপ্লে ইত্যাদি ২০টি ক্যাটেগরির পণ্য শুল্কমুক্ত। তবে তিন দিন পরেই ট্রাম্প ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর নতুন ট্যারিফ হুমকি দেন, বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর ও ওষুধসামগ্রীতে।
সারাবাংলা/এনজে