এরদোয়ান: সমর্থকদের কাছে বিশ্বনেতা, প্রতিপক্ষের কাছে স্বৈরশাসক
২৫ জুন ২০১৮ ২০:০৮
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
আংকারায় দলীয় কার্যালয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে নবনির্বাচিত তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, ‘আমাদের গণতন্ত্র জয়ী হয়েছে, জনগণের ইচ্ছা জিতেছে, তুরস্ক জিতেছে।’ প্রিয় নেতার এমন সৌজন্যমূলক বার্তার প্রতিদানে উল্লাস আর স্লোগানে ফেটে পড়েন তার সমর্থকেরা।
তবে এর বিপরীত আভাসও পাওয়া গেছে। আগাম অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়ায় এরদোয়ান যখন সমর্থকদের কাছে অন্যতম প্রভাবশালী বিশ্বনেতা, তখন ঠিক এর বিপরীত মত প্রতিপক্ষের। তারা একবাক্যেই বলে দিচ্ছেন— এরদোয়ান একজন স্বৈরশাসক।
সমালোচকরা বলছেন, ফের ক্ষমতা পেয়ে এরদোয়ান আরো বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারেন। এরই মধ্যে জানা গেছে, নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এরদোয়ান সরাসরি যেসব ক্ষমতা পেতে যাচ্ছেন তা হলো— মন্ত্রী ও ভাইস প্রেসিডেন্টসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা, দেশের আইনি ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা, জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা।
নির্বাচনের পরে তুরস্কে যে নতুন সংবিধান বলবৎ হতে যাচ্ছে, সেখানে প্রেসিডেন্টের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচিত সরকারের নতুন সংবিধান অনুযায়ী দেশ শাসন করবেন এরদোয়ান। নতুন সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর পদ বাতিল করার বিধান রেখে বলা হয়েছে, তুরস্কের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হবেন প্রেসিডেন্ট।
এর আগে নির্বাচনি প্রচারণার সময় এরদোয়ানের বিরুদ্ধে তার প্রধান প্রতিপক্ষ মুহাররেম ইনজের অভিযোগ করেছিলেন, তিনি (এরদোয়ান) কর্তৃত্ববাদী শাসন চালাচ্ছেন। মূলত ইসলামকে হাতিয়ার করেই একে পার্টির আদর্শিক কাজকর্ম পরিচালিত হয়। এরদোয়ানের প্রধান সমর্থক হচ্ছেন রক্ষণশীল ও অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ধার্মিক তুর্কিরা। অন্যদিকে মধ্য-বামপন্থী ধারায় দল চালান ইনজের। নির্বাচনের আগেই বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন, কুর্দি ও জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে বিরোধ এবং ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির মাঝে বিভক্তি তৈরি করতে পেরেছেন এরদোয়ান।
এরই মধ্যে ভিশন ২০২৩-র রূপরেখা দিয়েছেন এরদোয়ান। তুরস্ককে বিশ্বের সেরা ১০ অর্থনীতির দেশে উন্নীত করার ঘোষণাও দিয়েছেন। তারপরও সংশোধিত সংবিধানের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পাশাপাশি ব্যর্থ অভ্যুত্থানকে বিরোধীদের দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন তিনি। তার রোষানলে পড়েছেন সামরিক-বেসামরিক বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে বিরোধী দলীয় নেতৃত্ব, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি; গণমাধ্যমকর্মীরাও বাদ পড়েননি। তার নির্দেশে অনির্দিষ্টকাল ধরে কারাগারে আটক আছেন বহু মানুষ। তুরস্কে এখনও জারি রয়েছে জরুরি অবস্থা।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন এরদোয়ান। এরপর ২০০৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৪ সালেই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালের এক ‘ব্যর্থ গণঅভ্যুত্থানের’ পর ২০১৭ সালে এক গণভোটে সামান্য ব্যবধানে জয়লাভ করেন এরদোয়ান। এতে তিনি দেশটিকে সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে প্রেসিডেন্ট শাসিত ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে জনরায় পান।
রবিবারের নির্বাচনেও ৫৩ শতাংশ ভোটে জয় পেয়ে ফের তুরস্কের সর্বময় ক্ষমতার আসনে বসেন এরদোয়ান। নির্বাচনি কর্মকর্তারা বলেছেন, এই ফলের মধ্য দিয়ে একদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়ছে, অন্যদিকে এরদোয়ানই হচ্ছেন দেশটির প্রথম কার্যনির্বাহী প্রেসিডেন্ট।
আরও পড়ুন-
আবারও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান, সমর্থকদের উল্লাস
সারাবাংলা/এএস/টিআর