Thursday 01 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে বেতনবঞ্চিতদের আলটিমেটাম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৫৯

বেতনবঞ্চিতদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংবাদ সম্মেলন

সিলেট: সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে (ভিসি) ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন বেতন-ভাতাবঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে নগরীর চৌহাট্টাস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে এ আলটিমেটাম দেন তারা।

বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাজী মাসুদ। তিনি বলেন, আমরা অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে অত্যন্ত সূচারুভাবে যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এ জন্য এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সেশন জট তৈরি হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. এনায়েত হোসেন মুকুলের আশ্বাসে বিনা বেতন-ভাতায় আমরা কাজ করেছি। একটি দিনের জন্যও কাজ বন্ধ রাখিনি। সাবেক ভিসি আমাদেরকে একাধিকবার চাকরি স্থায়ী করার আশ্বাস দিয়েছেন। সাবেক ভিসি আমাদের বিশ্বাস জন্মাতে ২০২৩ সালের ২৬ জুন শূণ্য পদের বিপরীতে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এরপর ২০২৩ সালের ১৭ জুন আরেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।

তিনি আরও বলেন, আজ অবদি সেই দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। এ অবস্থায় আমরা চাকরি স্থায়ীকরণ ও বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলনে নামি। একপর্যায়ে সাবেক ভিসি ও রেজিস্ট্রার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আমরা আন্দোলন স্থগিত করে কাজে যোগ দেই।

কাজী মাসুদ বলেন, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হলে সাবেক ভিসি এনায়েত ও রেজিস্ট্রার গা ঢাকা দেন। সাবেক ভিসি এনায়েত স্বৈরশাসক হাসিনার ব্যক্তিগত চোখের চিকিৎসক ছিলেন। আর রেজিস্ট্রার ফজলুর রহমান ছিলেন এমসি কলেজ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও টিলাগড় গ্রুপের ক্যাডার। দুজনই ফ্যাসিস্টের দোসর হওয়ায় জনরোষ থেকে বাঁচতে লাপাত্তা হয়ে যান। একপর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যানারে আন্দোলনরতরা ফ্যাসিস্টের দোসর ভিসি এনায়েত ও ফজলুর রহমানের পদত্যাগের দাবি তোলেন। এরই প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার ফজলুর রহমান পদত্যাগ করেন। প্রায় ৪ মাস পর ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর ভিসি ডা. এনায়েত হোসেন ক্যাম্পাসে ফেরেন। খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্যাম্পাসে এসে তাদের চাকরি স্থায়ী ও বেতন ভাতার বিষয়ে ভিসির কাছে জানতে চান। একপর্যায়ে ভিসিকে অবরুদ্ধ করেন বেতন বঞ্চিতরা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র‍্যাব, এনএসআই, ডিজিএফআই ও জেলা প্রশাসকের মনোনীত প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. নূরের জামান চৌধুরীর উপস্থিতিতে ১৫ দিনের মধ্যে চাকরি স্থায়ীকরণসহ সব দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন ভিসি অধ্যাপক ডা. এনায়েত হোসেন। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার মেজর মেহেদী অবরুদ্ধ অবস্থা তুলে নিতে আমাদের অনুরোধ করেন। মেজর মেহেদীর অনুরোধে ও ভিসির আশ্বাসে আমরা অবরোধ তুলে নেই।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে কাজী মাসুদ জানান,ভিসির আশ্বাসের ১৫ দিনের ডেডলাইনের ১৪ দিনের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলামকে সভাপতি করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ইতোপূর্বে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগকৃতদের চাকরি নিয়মিতকরণ ও বেতন-ভাতাদি প্রদান প্রসঙ্গে একটি সুষ্পষ্ট প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এছাড়াও উক্ত সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত সকল সম্মানিত সদস্যের মূল্যবান আলোচনার প্রেক্ষিতে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রমের গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে আদালতের নির্দেশনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক বিধি-বিধান, মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি এর নির্দেশনা ইত্যাদি বিষয় পর্যালোচনাপূর্বক মানবিক দৃষ্টিকোণ বিবেচনা করে বর্ণিত নিয়োগের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

তিনি জানান, ২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর অনিয়মিত নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকুরি নিয়মিতকরণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে পত্রিকায় কমিটির সভাপতি প্রফেসর ডা. নাজমুল ইসলাম সই করা একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আবেদন জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ১৯ ডিসেম্বর। যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে আমরা আবেদনপত্র জমা দেই। এরপর ২০ ডিসেম্বর ভিসি এনায়েত হোসেন পদত্যাগ পত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেন। ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি আমরা ভাইভা পরীক্ষায় অংশ নেই। ভাইভা পরীক্ষার বোর্ডে কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম ছাড়াও বিএমএন্ডডিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম, ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে কোষাধ্যক্ষ মো. শাহ আলম উপস্থিত ছিলেন ।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ডা. ইসমাইল হোসেন পাটোয়ারি। তিনি যোগদানের পর গত ১৬ মার্চ উপাচার্যের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সঙ্গে চলতি বছরের ১৯ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত উমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করবেন বলে লিখিত পত্রের মাধ্যমে জানানোর পরও তার অনুপস্থিতিতে ২৩ মার্চ বর্তমান ভিসি ১২তম সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেন। তবে কমিটির সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম উপস্থিত না হওয়ায় উক্ত রিপোর্টটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ সিন্ডিকেটের পর থেকে উপাচার্য মহোদয় চৌহাট্টাস্থ কার্যালয়ে অফিস করেননি। তিনি পূর্বের ভিসির রেখে যাওয়া স্বৈরাচার দোসরের মতালম্বী মানুষ দিয়ে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ওসমানী মেডিকেল কলেজে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

ভাইস চ্যান্সেলরকে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে কাজী মাসুদ বলেন, তাই আমাদের দাবি আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করে উক্ত রিপোর্টের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করছি । এ ছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলরকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় বিদ্যমান কর্মকর্তা- কর্মচারীরা দাবি আদায়ে ব্লকেড কর্মসূচিসহ অন্যান্য কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন বলে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সিলেট মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ভাতাবঞ্চিত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এইচআই

ফ্যাসিস্ট হাসিনা বেতনবঞ্চিতদের আলটিমেটাম সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর