ঢাকা: বাংলাদেশের ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক চূড়ান্তভাবে প্রত্যাহার না হলে দেশের পোশাক খাতকে অতিরিক্ত ২৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থ শুল্ক বাবদ পরিশোধ করতে হবে। এটি দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের জন্যে হবে মরার ওপর খাড়ার গা। এটি বাস্তবায়ন হলে উদ্যোক্তাদের পথে বসে যেতে হবে। তাই সরকারকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর উত্তরার জায়ান্ট বিজনেস সেন্টারে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষ্যে সম্মিলিত পরিষদের অফিস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার চৈতি গার্মেন্টস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম।
এতে সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, প্রধান সমন্বয়কারী ফারুক হাসান, সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক উপস্থিত ছিলেন। সম্মিলিত পরিষদের অন্যান্য নেতারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট ‘সম্মিলিত পরিষদ’। এবার এর প্যানেল লিডার করা হয়েছে চৈতি গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম। আগামী ২৮ মে এবারের বিজিএমইএ নির্বাচন। নির্বাচন উপলক্ষ্যে সম্মিলিত পরিষদ উত্তরায় ওই অফিস উদ্বোধন করেছে।
সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার আবুল কালাম বলেন, আমেরিকার বাজারে আমাদের রফতানিতে যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত হওয়া নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক খবর। তবে, শঙ্কা এখনো কাটেনি। এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ, যেন ৯০ দিনের সময়সীমা শেষে আমরা পুনরায় এই শুল্কের মুখোমুখি না হই—সে লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি তিনি যেন সরাসরি মার্কিন প্রশাসনের সাথে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, এই শুল্ক চূড়ান্তভাবে প্রত্যাহার না হলে দেশের তৈরি পোশাক খাতকে প্রতি মাসে গড়ে অতিরিক্ত প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক দিতে হবে। রফতানি বাড়লে এই অঙ্ক আরও বাড়বে।
আবুল কালাম বলেন, ‘সরকার ও আমাদের ক্রেতারা জানেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা গড়পড়তা ৩ থেকে ৪ শতাংশের বেশি মুনাফা করতে পারেন না। অনেক প্রতিষ্ঠান টিকে থাকার জন্য এর চেয়েও কম লাভে, এমনকি ক্ষতির সাথেও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ৩৭ শতাংশ শুল্ক দিয়ে এই খাতের টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। সাধারণভাবে, শুল্ক পরিশোধের দায়িত্ব ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের হলেও বিদ্যমান বায়িং প্যাটার্ন অনুযায়ী দেখা যায়, ক্রেতারা অতিরিক্ত খরচ সরবরাহকারীর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখায়।’
তিনি বলেন, ‘৯০ দিন পর পুনরায় শুল্ক বহাল হলে, বাংলাদেশের প্রায় এক হাজার পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বেন। এর প্রভাব পড়বে ওইসব ব্যাংকের ওপরও, যারা এসব গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে। সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিও এক বড় ধাক্কার মুখোমুখি হবে।’
এই ৯০ দিনের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এরই মধ্যে ১০ দিন পার হয়ে গেছে, হাতে আছে আর মাত্র ৮০ দিন। এই সময়ের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা, দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা, এই প্রক্রিয়ায় সরকারকে সবধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।