২ বার প্রধানমন্ত্রী হলে রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না: নাহিদ
১৯ এপ্রিল ২০২৫ ২১:৪৩ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৩৩
ঢাকা: দুইবারের প্রধানমন্ত্রী পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না বলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টায় সংসদ ভবনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব প্রস্তাব দেন। পরে বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর নাহিদ ইসলাম বলেন, এক ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী নয়, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার চায় এনসিপি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সংবিধানে মূলনীতি থাকার দরকার আছে কিনা সে বিষয়ে সংস্কার কমিশনের কাছে প্রশ্ন রেখেছে এনসিপি।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) ফরমেশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আইনসভার ক্ষেত্রে আমরা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভাকে সমর্থন করেছি। উচ্চ কক্ষ হতে হবে ভোটের আনুপাতিক, আসনের আনুপাতিক নয়। নির্বাচনের আগেই উচ্চ কক্ষ প্রার্থী ঘোষণা দিতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। আমরা ১০০ আসনে নারী প্রার্থী প্রত্যক্ষ ভোটে প্রতিযোগিতা করে সংসদে যাবে, এ প্রস্তাবকে নীতিগতভাবে সমর্থন করেছি। কিন্তু এটার পদ্ধতি কী সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ আলোচনা চলমান আছে।
সাবেক এ উপদেষ্টা আরও বলেন, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোট করা লাগবে। উচ্চ কক্ষ ও নিম্ন কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ হওয়ার পরও গণভোটে যেতে হবে। আমরা বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা নিয়ে আলোচনা করেছি। সেক্ষেত্রে কয়েকটি প্রস্তাবনা এসেছে। বিচার বিভাগের জন্য আলাদ সচিবালয় করা, আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া, বিভাগীয় বেঞ্চ তৈরি করা এবং জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা এবং সেক্ষেত্রে উচ্চ কক্ষের মতামত নেওয়া যায় কিনা সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, আমরা সংবিধানের মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা দেখেছি, বিভিন্ন সময়ে সংবিধানে মূলনীতির মাধ্যমে দলীয় রাজনৈতিক অবস্থানকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে সংবিধানের মূলনীতির প্রয়োজন আছে কিনা, সেই প্রশ্ন রেখেছি। তবে আমরা বলেছি বাহাত্তরের মূলনীতি এবং পরবর্তীতে সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানে যে দলীয় মূলনীতিগুলো প্রবেশ করানো হয়েছে, সেগুলো বাতিল করতে হবে। সংবিধানে প্রত্যেক জাতিসত্তার স্বীকৃতি এবং অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট প্রাপ্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। মৌলিক অধিকার আদালত দ্বারা বলবৎযোগ্য করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীর বয়স ২৩ বছর বলেছি। ভোটারের বয়স ১৬ বছর বলেছি। ডেপুটি স্পিকার আমরা একজন বলেছি, সেটা বিরোধী দল থেকে হবে। এ ছাড়া আমরা বিতর্কিত ৭০ এর অনুচ্ছেদের সংস্কারের কথা বলেছি। এবং স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে আমরা নতুন করে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছি। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো না দেওয়া নিয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। এ ছাড়া দুদক, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বিষয়ে আজ কোনো আলোচনা হয়নি।
সকালে বৈঠকে নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশে যেন আর স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হয় সে জন্য জুলাই সনদ প্রয়োজন। তিনি বলেন, শুধু একটি দলকে সরিয়ে অন্য দলকে ক্ষমতায় বসানো জুলাইয়ের উদ্দেশ্য ছিল না; বরং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করে রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তই ছিল জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা।
তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের পরে জনমনে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে তা পূরণ করা আমাদের অঙ্গীকার।
বৈঠকে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির ৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেন। এনসিপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, আক্তার হোসেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারোয়ার তুষার, নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, জাবেদ রাশেল, নিভা ও সামান্তা শারমিন।
সারাবাংলা/এফএন/এইচআই
এনসিপি জাতীয় নাগরিক পার্টি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নাহিদ ইসলাম