বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বৈঠক
দ্রুত অর্থ ছাড় ও সহজ শর্তে বাড়তি ঋণ চাইবে বাংলাদেশ
২০ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:১৮
ঢাকা: ওয়াশিংটনে ছয়দিনব্যাপী (২১-২৬ এপ্রিল) বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বসন্তকালীন বৈঠক আগামীকাল সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী ও অর্থ বিভাগের সচিব খায়রুজ্জামান মজুমদারসহ একটি প্রতিনিধিদল অংশ নিচ্ছেন।
অর্থ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা যায়, অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রতিশ্রুত বাজেট সহায়তার অবশিষ্ট ৫০ কোটি ডলার দ্রুত ছাড় করার অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া সংস্থাটির তিন বছর মেয়াদি নতুন সহজ শর্তের ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাড়তি ঋণও চাইবে। এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিনিময় হার ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত সুস্পষ্ট একটি সংস্কার পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হবে, যা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্যাকেজের অন্যতম শর্ত।
প্রসঙ্গত: প্রতিশ্রুত ঋণের বিপরীতে এ পর্যন্ত তিনটি কিস্তিতে মোট ২৩০ কোটি ডলার ছাড় করেছে আইএমএফ। এটি মোট প্রতিশ্রুত অর্থের অর্ধেক।
এদিকে চলতি বছরের জুনের মধ্যে প্রত্যাশিত ১৩০ কোটি ডলার ছাড়ের বিষয়টি নিশ্চিত না করেই অতি সম্প্রতি ঢাকা ছেড়েছে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল।
সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রতিশ্রুত অর্থ দ্রুত ছাড় করার অনুরোধের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিনির্ভর অবকাঠামো প্রকল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মানব উন্নয়ন প্রকল্পে বাড়তি অর্থায়নও চাওয়া হবে।
এছাড়াও প্রস্তাবিত বে টার্মিনাল গভীর সমুদ্র প্রকল্পের জন্য সামুদ্রিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৬৫ কোটি ডলারের একটি ঋণ চুক্তি সই হতে পারে। গত বছরের জুনে অনুমোদন পাওয়া এই ঋণের অর্থে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ জলবায়ু-সহনশীল ব্রেকওয়াটার নির্মাণ করা হবে, যা জোয়ারের প্রভাব থেকে বন্দরকে রক্ষা করবে।
আলোচনায় ঢাকার চারপাশের নদী রক্ষায় বিশ্বব্যাংকের ১০০ কোটি ডলারেরও প্রতিশ্রুতিও গুরুত্ব পাবে। আলোচনা সন্তোষজনক হলে অক্টোবরের মধ্যে চুক্তি সই হতে পারে।
সূত্রমতে, বাংলাদেশ এখন মিশ্র অর্থায়নের (ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্সিং) জন্য যোগ্য হলেও বিরাজমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে সরকার ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত চলমান আইডিএ-২১ ‘সফট-লেন্ডিং’ ধাপের আওতায় সহজ শর্তের ঋণ আদায়ের ওপরই জোর দেবে।
বিশ্বব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ৫১টি চলমান প্রকল্পে মোট আইডিএ প্রতিশ্রুতি ১ হাজার ৪৫০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৯২০ কোটি ডলার এখনও ছাড় করা হয়নি। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রকৃত ছাড় হয়েছে ৯৭৯ মিলিয়ন ডলার।
বৈঠক উপলক্ষ্যে অর্থ বিভাগের প্রণীত এক প্রতিবেদনে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যেগুলো মোকাবিলায় কৌশলগত নীতিগত হস্তক্ষেপের প্রয়োজন। আগামী বছর প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে নামতে পারে, তবে ২০২৭-২৮ অর্থবছর নাগাদ প্রবৃদ্ধি ফের ৬ শতাংশের ওপরে উঠবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজস্ব আদায় প্রত্যাশার নিচে থাকায় এবং ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের আর্থিক পরিসর সংকুচিত হচ্ছে। রাজস্ব আয় বাড়াতে সরকার ত্রিমুখী কৌশল নেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ডিজিটাল রূপান্তর; প্রত্যক্ষ করজালের আওতা বৃদ্ধি এবং কর প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও করছাড় কমানো।
অন্যদিকে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগেও গতিমন্থরতা রয়েছে। এর অন্যতম কারণ: জ্বালানি ঘাটতি, চড়া সুদহার, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং দুর্বল ঋণমানদণ্ড, ব্যাপক খেলাপি ঋণ, তারল্য সংকট, সুশাসনের ঘাটতি ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অদক্ষতার মতো আর্থিক খাতের নানা দুর্বলতা।
অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্পগুলো বাদ দিয়ে সামাজিক খাতে বিনিয়োগ, বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে চায়।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ ও ফেডারেল রিজার্ভ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে।
সারাবাংলা/আরএস