উন্মুক্ত খাল-নালা যেন ‘মরণফাঁদ’, তালিকা করছে চসিক
২০ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৩২ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:৫৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীজুড়ে উন্মুক্ত খাল-নালাগুলো মরণফাঁদ হয়ে আছে দীর্ঘসময় ধরে। বর্ষায় এই খাল-নালায় পড়ে প্রাণহানি ঘটেছে একের পর এক। তীরে নিরাপত্তা বেস্টনি ও স্ল্যাব না থাকায় খাল-নালাগুলো মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে বলে নগরবাসীর অভিযোগ।
সর্বশেষ ছয় মাসের এক শিশুর মৃত্যুর পর টনক নড়েছে সিটি করপোরেশনের। উন্মুক্ত, অরক্ষিত খাল-নালাগুলো চিহ্নিত করে তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এরই মধ্যে চসিকের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু খাল-নালার তীরে বাঁশের বেস্টনি দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
চসিক সূত্রমতে, নগরীতে নালা-নর্দমা ও খালের পরিমাণ এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) আওতায় আছে ৩০০ কিলোমিটার। বাকি ১৩০০ কিলোমিটার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।
সূত্রের তথ্যানুযায়ী, নগরীর নালা-খালে পড়ে গত পাঁচ বছরে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে পাঁচজন, ২০২২ সালে একজন, ২০২৩ সালে তিনজন, ২০২৪ সালে চারজন। খাল-নালায় পড়ে নিখোঁজ দুজনের কোনো খোঁজ এখনো মেলেনি।
সর্বশেষ গত শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) নগরীর চকবাজারের কাপাসগোলায় নালায় পড়ে নিখোঁজ হয় ছয় মাসের শিশু সেহরিশ। ১৪ ঘণ্টা পর তার লাশ মেলে ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার দূরে চাক্তাই খালে।
এ অবস্থায় নগরীর অরক্ষিত খাল-নালা চিহ্নিত করে আগামী বৃহস্পতিবারের (২৪ এপ্রিলের) মধ্যে তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। রোববার (২০ এপ্রিল) নগরীর টাইগারপাসে অস্থায়ী নগর ভবনে চসিকের প্রকৌশল ও পরিচ্ছন্ন বিভাগের সঙ্গে বিশেষ সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
সভায় মেয়র শাহাদাত বলেন, ‘এই দুঃখজনক ঘটনায় আমরা কেউ দায় এড়াতে পারি না। একজন নগরবাসী হিসেবে ও মেয়র হিসেবে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে আমাদের কাজ করতে হবে।’
‘মাঠপর্যায়ে কর্মরত প্রকৌশলী, পরিচ্ছন্ন বিভাগের জোনপ্রধান আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে স্ব-স্ব আওতাধীন ওয়ার্ডের কোথায় ম্যানহোলের ঢাকনা নেই, কোথায় স্ল্যাব খোলা আছে, কোথায় উন্মুক্ত নালা-খাল আছে তা চিহ্নিত করে রিপোর্ট দেবেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সভায় মেয়র শাহাদাত আরও বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ খাল বা নালাগুলোতে আপাতত বাঁশ দিয়ে ঘিরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পরে স্থায়ী ঘেরাও দেওয়া হবে। আমরা চাই না আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক। এ শহরকে নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত ও বাসযোগ্য রাখতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের প্রত্যেককে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। ম্যানহোল খোলা থাকলে, নালার পাশে নিরাপত্তা না থাকলে যে কেউ আমাকে বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানাতে পারেন।’
সভায় নাগরিকদের কাছ থেকে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ খাল, নালা, ম্যানহোলের তথ্য সংগ্রহে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। সভায় সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমান, উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম