Thursday 01 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গ্রীষ্মে লোডশেডিংয়ের শঙ্কা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে চায় সরকার

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২১ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৩৪

ব্ল্যাকআউট। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: বাংলা বর্ষপুঞ্জি অনুযায়ী বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য গ্রীষ্মকাল। যা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। গ্রীষ্মকাল মানেই তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। একদিকে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে সেচ মৌসুম শুরু। এই দুই কারণেই এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে। এবার এই চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। তবে জ্বালানি সংকটের কারণে এই পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেজন্য চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে উৎপাদন ও সরবরাহ ঘাটতি মিটিয়ে গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টার কথা জানিয়েছে সরকার।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে যে সংখ্যক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে তাতে ৩১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রাখে। যদিও সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট গড়েছিল গেল বছরের ৩০ এপ্রিল। তথ্যানুয়ায়ী এই এপ্রিলে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। সেই হিসেবে ভরা গ্রীষ্ম মৌসুমে এই পরিমাণ বা এর চেয়ে বেশি কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে। অর্থাৎ চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে ৪ হাজার বা তার চেয়ে কিছু কম-বেশি বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকবে। তাই, এই পরিমাণ লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

যদিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, লোডশেডিং কিছু হবে, তবে তা নির্ভর করবে আবহাওয়ার উপরে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-বিপিডিবির সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ ১৮ হাজার মেগাওয়াট ধরা হয়েছে। আমাদের চেষ্টা থাকবে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা। সেখানে যদি কোনো কারণে জ্বালানি স্বল্পতা বা খরচ কমানোর বিষয় আসে, তাহলে সামান্য কিছু লোডশেড করতে হতে পারে।’

বিপিডিবির তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৪৩টি। এর মধ্যে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র ৫৮টি, আর সাতটি কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। ১৪৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের খাতা কলমে উৎপাদন সক্ষমতা ৩১ হাজার মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ)। যদিও প্রকৃত উৎপাদন সক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াট। গত বছরের ৩০ এপ্রিল সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড রয়েছে। মোট উৎপাদনের ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াট আসে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। আর সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। বাকি বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গ্যাস। এর পর কয়লা, হাই ফার্নেস অয়েল এবং হাই স্পিড ডিজেল।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এখন তিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথমে রয়েছে তেলভিত্তিক উৎপাদন; এটি ব্যয়বহুল, তাই এর ব্যবহার কমানোর চেষ্টা। এরপর কয়লার সরবরাহের সমস্যা। যেমন কয়লার মান খারাপ হওয়ায় মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা কয়লা ফেরত পাঠাতে হয়। পরবর্তী সময়ে কয়লার ব্যবস্থা করতে সময় লেগে যায়। তখন উৎপাদন সংকট সৃষ্টি হয়। আর তৃতীয় হচ্ছে অর্থ সংকটে গ্যাস আমদানি ব্যহত এবং প্রাকৃতিক গ্যাস কমে আসা। এই ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জ এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে।

যদিও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, ‘এই সংকট মোকাবিলা করেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা থাকবে সরকারের।’ সম্প্রতি তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রোজার সময়ের মতো হয়তো এতটা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ গ্রীষ্মে হবে না। তবে চেষ্টা করব নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের। এবার লোডশেডিং যতটুকু হবে তা শুধু গ্রামে নয়, সর্বত্র। ঢাকাতে লোডশেডিং হবে আগে, তারপর অন্যত্র।’

এদিকে এই রোদ, এই বৃষ্টি নিয়ে চলছে দেশের আবহাওয়া। একদিকে তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে বৃষ্টিপাত। আবহাওয়ার এই তারতম্যও বিদ্যুতের চাহিদার ওপরে প্রভাব ফেলে। সরবরাহের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা বলছেন, বৃষ্টিপাত থাকলে গরম কম থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে। কিন্তু প্রচণ্ড গরম থাকলে চাহিদা বেড়ে যায়। আবহাওয়া যেমনই থাকুক না কেন এবার চাহিদার পূর্বাভাস ১৮ হাজার মেগাওয়াট।

তথ্যানুযায়ী, শনিবার (১৯ এপ্রিল) দিনের চাহিদা ছিল ১০ হাজার ৯৯০ মেগাওয়াট আর সন্ধ্যায় এই চাহিদা বেড়ে পৌাঁছায় ১৩ হাজার মেগাওয়াটে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) চাহিদা ছিল ১১ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট। উৎপাদন করা গেছে ১১ হাজার ৪৪ মেগাওয়াট। এদিন ৭৯৬ মেগাওয়াট ঘাটতি থাকায় ৬৫ মেগাওয়াটের মতো লোডশেড করতে হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। এ ছাড়া, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে নানা ধরনের সমস্যা লেগে থাকে। যেমন- গত ৮ এপ্রিল কারিগরি ত্রুটির কারণে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট এবং ১১ এপ্রিল রাতে দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপরে চাপ পড়ে। যদিও ১৫ এপ্রিল থেকে আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।

এদিকে মহেশখালীর মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন কমে আসে কয়লা সংকটের কারণে। বিপিডিবি বলছে, ওই প্লান্টের জন্য যে কয়লা আমদানি করা হয়েছিল, সেগুলোর মান খারাপ ও ভেজালযুক্ত হওয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। যে কারণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন কমে গেছে। এসব কারণেও লক্ষ্য অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যহত হচ্ছে। বিপিডিবি বলছে, আবহাওয়া, তেল, গ্যাস সরবরাহ সব মিলিয়ে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না করা হলেও ঘাটতি খুব বেশি থাকবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিডিবির আরেক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিদিন যে পরিমাণে উৎপাদন ঘাটতি থাকে তার জন্য খুব বেশি লোডশেড করতে হয় না। কিন্তু প্রতিদিনই কম বেশি লোডশেড করা লাগে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গ্রীষ্ম মৌসুমে চাহিদার চেয়ে বর্তমান উৎপাদন ও সরবরাহ ঘাটতিতে এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং করতে হতে পারে।’

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

১৮ হাজার গ্রীষ্মে মেগাওয়াট লোডশেডিং শঙ্কা

বিজ্ঞাপন

বিশেষ অতিথি অপি করিম
১ মে ২০২৫ ১১:১০

আরো

সম্পর্কিত খবর