গাজায় ১৫ চিকিৎসক নিহত: আইডিএফ
২১ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৫৪ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫ ১০:২১
গত মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গাজায় ১৫ জন চিকিৎসক নিহতের ঘটনা নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। অভিযানসংক্রান্ত ভুল বোঝাবুঝি থেকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে বলে উঠে এসেছে তাদের তদন্তে বিষয়টি উঠে এসেছে।
ইসরায়েলি বাহিনী তদন্ত করে বলেছে, তাদের নির্দেশ সংক্রান্ত ভুল বোঝাবুঝি ও আদেশ লঙ্ঘনের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এ ঘটনার তদন্তে অসম্পূর্ণ এবং ভুল প্রতিবেদন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডারকে বরখাস্ত করেছে।
গত ২৩শে মার্চ ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (পিআরসিএস) অ্যাম্বুলেন্স, জাতিসংঘের একটি গাড়ি এবং একটি ফায়ার সার্ভিস ট্রাকের একটি বহরে হামলা করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এতে জাতিসংঘের এক কর্মীসহ ১৫ জন চিকিৎসক নিহত হন।
এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানিয়েছে, তাদের সৈন্যরা শত্রু বাহিনীর হুমকির সম্মুখীন হয়েছে ভেবে গুলি চালিয়েছে। তারা তদন্ত করে দেখেছে, নিহতদের মধ্যে ছয় জন হামাস সদস্য ছিলেন। সেখানে কোনো বাছবিচার ছাড়াই হত্যার বিচারের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
নিহতদের নাম প্রকাশ্যে থাকা সত্ত্বেও, হামাসের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পৃক্ততার প্রমাণ তারা উপস্থাপন করতে পারেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনাটি প্রতিকূল এবং বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে এলাকায় ঘটেছে অভিহিত করা হয়েছে এবং দ্রুতগতিতে যান এগিয়ে আসার পর ঘটনাস্থলে থাকা কমান্ডার তাৎক্ষণিক এবং স্পষ্ট হুমকি অনুভব করেছিলেন।
এছাড়া সেখানে যথেষ্ট আলো ছিল না বলেও আইডিএফ দাবি করেছে। তারা বলেছে, অ্যাম্বুলেন্স শনাক্ত করতে পারেনি তারা।
ইসরায়েল প্রথমে দাবি করেছিল, সন্দেহজনক গাড়ি অন্ধকারে আসতে দেখে সৈন্যরা গুলি চালিয়েছে। গাড়িতে হেডলাইট জ্বালানো ছিল না। এছাড়া গাড়ি চালানোর আগে অনুমতিও নেওয়া হয়নি।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তারা হামলায় নিহত চিকিৎসাকর্মী রিফাত রাদওয়ানের মুঠোফোন থেকে সম্পূর্ণ ভিডিওটি উদ্ধার করেছে। আইডিএফ তাকে হত্যা করে ছোট একটি গর্তে কবর দিয়ে দেয়।
রিফাত রাদওয়ানের ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতে সম্মুখ বাতি ও জরুরি ফ্লাশলাইট জ্বালিয়ে গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন চিকিৎসাকর্মীদের ওই দল। এ সময় হাই-ভিউ জ্যাকেট পরে থাকায় কমপক্ষে একজন কর্মীকে হলেও দেখা যাওয়ার কথা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, গাড়িতে থাকা ওই দলটির গতিবিধি সন্দেহজনক ছিল এবং তাঁরা গাড়ির বাতি নিভিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। কিন্তু রিফাত রাদওয়ানের করা ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পর সেনাবাহিনী তাদের বক্তব্য পরিবর্তন করে স্বীকার করেছে যে তাদের দাবি ভুল ছিল।
১৫ জন নিহত কর্মীর মৃতদেহ বালিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল। ঘটনার এক সপ্তাহ পরেও তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়নি। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ওই এলাকায় নিরাপদে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে পারেনি বা ঘটনাস্থল শনাক্ত করতে পারেনি।
রেড ক্রিসেন্ট এবং আরও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ঘটনার স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
এর আগে বিবিসি জানায়, গাজায় ১৫ জন চিকিৎসাকর্মীকে হত্যার সময় ইসরায়েলি সেনারা ১০০টিরও বেশি গুলি ছুড়েছে। এর মধ্যে কিছু গুলি মাত্র ১২ মিটার (৩৯ ফুট) দূর থেকে করা হয়েছে। একটি মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিওর ফরেনসিক অডিও বিশ্লেষণে এমনটি দেখা গেছে।
একজন কমান্ডারকে বরখাস্ত করা এবং অন্য একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়ার আইডিএফের সিদ্ধান্ত অস্বাভাবিক নয়। গত বছরের এপ্রিলে ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাতজন সাহায্য কর্মী নিহত হওয়ার পর সামরিক বাহিনী দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে এবং অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
সারাবাংলা/এসডব্লিউ