পোপ নির্বাচন ঘিরে জল্পনা, কে হবেন পরবর্তী ধর্মগুরু
২১ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:২৯ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৩০
বিশ্বব্যাপী ১৪০ কোটির বেশি রোমান ক্যাথলিক বিশ্বাসীদের জন্য পোপ হলেন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। যিশুখ্রিষ্টের প্রধান শিষ্য সেন্ট পিটারের উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় পোপের অবস্থান এক অনন্য উচ্চতায়। তিনি শুধুমাত্র ক্যাথলিক গির্জার প্রধান নন, বরং গির্জার ধর্মীয় নীতি, শিক্ষাদান ও অনুশাসনের মূল আধারও।
পোপ বাস করেন ভ্যাটিকান সিটিতে, যা বিশ্বের ক্ষুদ্রতম স্বাধীন রাষ্ট্র। এটি ইতালির রাজধানী রোমে অবস্থিত। যদিও পোপ তার কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেন না, তার সব খরচ বহন করে ভ্যাটিকান।
পোপের মৃত্যু ও তার পরবর্তী প্রক্রিয়া
পোপের মৃত্যু হলে আয়োজিত হয় ‘প্যাপাল ফিউনারেল’। আগে এটি ছিল অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ, যেখানে তিন স্তরের কফিনে (সাইপ্রাস কাঠ, সীসা ও ওক কাঠের) দাফন করা হতো। তবে পোপ ফ্রান্সিস এই প্রথা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বেছে নিয়েছেন দস্তা-রেখাযুক্ত একটি সাধারণ কাঠের কফিন।
তিনি জনসমক্ষে মৃতদেহ প্রদর্শনের প্রচলিত রীতি ‘ক্যাফালক’ বাতিল করেছেন। বরং কফিনের ঢাকনা খোলা রেখে জনসাধারণকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ দেওয়া হবে। সবচেয়ে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত হলো, শত বছরের মধ্যে তিনিই হবেন প্রথম পোপ যিনি ভ্যাটিকানের বাইরে সমাধিস্থ হবেন। তাকে সমাধিস্থ করা হবে রোমের সেন্ট মেরি মেজর বাসিলিকায়।
নতুন পোপ নির্বাচন
৮৮ বছর বয়সে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক সম্প্রদায় নতুন পোপ নির্বাচনের অপেক্ষায়। রোমে সমবেত হয়েছেন কার্ডিনালরা, শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী প্যাপাল কনক্লেভ। নতুন পোপ নির্বাচন করেন ‘কলেজ অব কার্ডিনালস’ নামক একটি গোষ্ঠী, যাদের প্রত্যেককে পূর্ববর্তী পোপই নিযুক্ত করেন। বর্তমানে ২৫২ জন কার্ডিনালের মধ্যে ১৩৮ জন ভোট দিতে পারবেন, যাদের বয়সসীমা ৮০ বছর।
পোপের মৃত্যু বা পদত্যাগের পর কনক্লেভ নামে পরিচিত এক গোপন নির্বাচনি প্রক্রিয়া শুরু হয়। এটি হয় বিখ্যাত সিস্টিন চ্যাপেলে, যেখানে গোপন ব্যালটে ভোট দেওয়া হয়। ব্যর্থ হলে ধোঁয়া হয় কালো, আর পোপ নির্বাচিত হলে সাদা ধোঁয়ার মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হয়।
নতুন পোপ নির্বাচনের পর একজন জ্যেষ্ঠ কার্ডিনাল ব্যালকনিতে এসে ঘোষণা দেন—’হাবেমাস পাপাম’ (অর্থ- আমাদের পোপ হয়েছেন)। এরপর নতুন পোপ নিজের নির্বাচিত নাম নিয়ে হাজির হন, যেমন—পোপ ফ্রান্সিসের আসল নাম ছিল জর্জ মারিও বেরগোলিও।
ইতিহাসে প্রথম লাতিন আমেরিকান পোপ হিসেবে ফ্রান্সিসের নির্বাচন ক্যাথলিক চার্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিল। এবার দেখার বিষয় কে হবেন নতুন পোপ।
সম্ভাব্য প্রার্থীরা-
পিটার টার্কসন (৭৬): পরবর্তী পোপ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আছেন ঘানার এই প্রাক্তন বিশপ, যিনি ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ পোপ হতে পারেন। শান্তি দূত হিসেবে দক্ষিণ সুদানে তার প্রেরণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ নজির। তিনি সমকামী সম্পর্কের বিষয়ে আফ্রিকার কঠোর আইন নিয়ে প্রশ্ন তুললেও আফ্রিকান জনমতের প্রতি সম্মান জানান। ২০১৩ সালের কনক্লেভের সময়, যখন ফ্রান্সিসকে নির্বাচিত করা হয়েছিল, টার্কসন ছিলেন বুকিদের প্রিয়।

পিটার টার্কসন (৭৬)
লুইস আন্তোনিও টাগলে (৬৭): ফিলিপাইনের এই প্রাক্তন আর্চবিশপ হতে পারেন প্রথম এশীয় পোপ। গর্ভপাতবিরোধী মতাদর্শী হলেও, তিনি মনে করেন চার্চ সমকামী ও তালাকপ্রাপ্তদের প্রতি অতি কঠোর হয়ে উঠেছে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, ক্যাথলিক গির্জা সমকামী এবং তালাকপ্রাপ্ত দম্পতিদের প্রতি খুব কঠোর আচরণ করছে এবং এটি তাদের ধর্মপ্রচারের কাজকে ব্যাহত করছে।

লুইস আন্তোনিও টাগলে (৬৭)
পিয়েত্রো পারোলিন (৭০): পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে পিয়েত্রো পারোলিন কাজ করেছেন কার্ডিনাল সেক্রেটারি অব স্টেট হিসেবে। তিনি মধ্যপন্থী হলেও ২০১৫ সালে আয়ারল্যান্ডে সমকামী বিয়ের বৈধতা পাওয়াকে ‘মানবতার পরাজয়’ বলেছেন। চীন-ভ্যাটিকান চুক্তির কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছুটা সমালোচনার মুখেও পড়েছেন তিনি।

পিয়েত্রো পারোলিন (৭০)
পিটার এরদো (৭২): হাঙ্গেরির এস্জটারগম-বুদাপেস্টের আর্চবিশপ পিটার এরদো। পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্ট বিরোধিতায় সক্রিয় ছিলেন তিনি। রক্ষণশীল অবস্থান থেকে বিবাহবিচ্ছিন্নদের পবিত্র কমিউনিয়নে অংশগ্রহণের বিপক্ষে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।

পিটার এরদো (৭২)
হোসে তোলেন্তিনো (৫৯): পর্তুগালের মাডেইরা দ্বীপ থেকে আগত এই তুলনামূলক তরুণ প্রার্থী সংস্কারপন্থী ভাবনায় বিশ্বাসী। তিনি বাইবেলের পণ্ডিতদের আধুনিক চলচ্চিত্র ও সঙ্গীতের মাধ্যমে যুগোপযোগী হবার আহ্বান জানিয়েছেন।

হোসে তোলেন্তিনো (৫৯)
বিশ্ব এখন অপেক্ষা করছে, কে হবেন আগামী পোপ? আফ্রিকা ও এশিয়ার থেকে পোপ নির্বাচন কি বিশ্ব ক্যাথলিক গির্জার মধ্যে নতুন বৈচিত্র্য সৃষ্টি করবে কিনা, সময়ই দেবে তার উত্তর।
সারাবাংলা/এনজে