‘হয় মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর, নয় অনশনে মৃত্যু’
২১ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৩২ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৩০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঘোষিত সময়ের মধ্যে মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবি পূরণ না হওয়ায় ‘আমরণ অনশনে’ বসেছেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। ‘হয় মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর, নয় অনশনে মৃত্যু’– অনশনস্থল থেকে এমন ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টায় নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে চারুকলা অনুষদের ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে আমরণ অনশন শুরুর ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে তারা ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে ‘চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজকে’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত করে ২০১০ সালে ‘চারুকলা ইনস্টিটিউট’ করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরীতে ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
২০২৩ সালের ২ নভেম্বর চারুকলার শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়াসহ ২২ দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। টানা ৮২ দিন আন্দোলনের পর ২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরলেও সাত দিনের আলটিমেটাম শেষে ৩১ জানুয়ারি ফের আন্দোলনের নামে। এর মধ্যে ২ ফেব্রুয়ারি চারুকলা ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই বছরের ১০ ডিসেম্বর আবারও আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চারুকলা ইনস্টিটিউটকে ২০২৫ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের ঘোষণা দেয়।
চারুকলা ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেটা ভঙ্গ করেছে। ১ এপ্রিল থেকে আমাদের মূল ক্যাম্পাসে ক্লাস করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। আমরা সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। উনারা বলেছেন, চারুকলা প্রশাসন সহযোগিতা না করায় এ বিষয়ে নাকি উনারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। এখন আমরা আমরণ অনশনে বসেছি। সিন্ডিকেট থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে রেখে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের প্রতি চলে আসছে চরম অবহেলা ও বৈষম্য। শহরের একটি ভাড়া বাড়িতে থাকা-খাওয়ার ব্যয়, যাতায়াতের কষ্ট তো আছেই, এখানে নেই পর্যাপ্ত ক্লাসরুমও। মানসিক বিকাশ বা সংস্কৃতি চর্চার নেই কোনো পরিবেশ।
আন্দোলনের শুরুতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের হামলার শিকার হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, এতে সরাসরি জড়িত ছিলেন তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীন, চারুকলা ইনস্টিটিউটের তৎকালীন পরিচালক সুফিয়া বেগম এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি অংশ।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করতে প্রশাসন যেভাবে দমননীতি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার হস্তক্ষেপ করেছে, তা ফ্যাসিবাদী আচরণের জ্বলন্ত প্রমাণ বলে উল্লেখ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘২০২৪ সালের অভ্যুত্থান পরবর্তী ১৩ ডিসেম্বর নতুন প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দেয়, ১ এপ্রিল থেকে চারুকলা মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হবে এবং সেখানেই ক্লাস শুরু হবে। আমরা সে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছিলাম। ১৭ ডিসেম্বর আবারও জনিয়ে দিয়েছিলাম— প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব। প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি, আশ্বাসের পর আশ্বাস দিয়েছেন প্রশাসন। হয়নি কোনো সিন্ডিকেট মিটিং, জারি হয়নি কোনো প্রজ্ঞাপন। ১ এপ্রিল পেরিয়ে গেছে— স্থানান্তরের ঘোষণা বাতাসে মিলিয়ে গেছে। প্রতিশ্রুতি শুধু মুখে, বাস্তবে শূন্য।’
‘এ প্রেক্ষাপটে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছি— আর কোনো আশ্বাস নয়, এবার বাস্তব পদক্ষেপ চাই। চারুকলাকে তার প্রকৃত জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে— বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে, অবিলম্বে। আমরা অবিচল, একদফা দাবি নিয়ে। আমরা আজ অনশনে বসেছি- হয় মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর, নয় অনশনে মৃত্যু। আমাদের দাবি সহজ, স্পষ্ট এবং অপরিবর্তনীয়। এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অবহেলার বিরুদ্ধে এবং ভবিষ্যতের প্রতি এক নির্মম নীরবতার বিরুদ্ধে।’
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম
চট্টগ্রাম চবি ক্যাম্পাস চারুকলা টপ নিউজ বিশ্ববিদ্যালয় স্থানান্তর