খাতভিত্তিক মজুরি কাঠামোর প্রস্তাব মজুরি কমিশনের
২১ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:৪৮ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২০:২৭
ঢাকা: খাতভিত্তিক মজুরি নিশ্চিতে জাতীয় নিম্নতম মজুরি ও কমিশন ঘোষণা ও ট্রেড ইউনিয়নের শর্ত শিথিলসহ ২৫ দফা সুপারিশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সকালে শ্রম সংস্কার কমিশন তার প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে উপস্থাপন করে। পরে বিকাল শ্রম ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংস্কার কমিশন। আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে কমিশন প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, কমিশন সদস্য কামরান তানভিরুর রহমান, এএনএম সাইফ উদ্দিন, তপন দত্ত, সাকিল আখতার চৌধুরী, আরিফুল ইসলাম আদীব, একেএম নাসিম, ফারুক আহাম্মাদ, ফজলে শামীম এহসান, ড. মাহফুজুল হক, তাসলিমা আখতার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কমিশন প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, শ্রম সংস্কার কমিশন সুপারিশগুলোর মধ্যে সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে উপযুক্ত ২৫টি মূল সুপারিশে গুরুত্বারোপ করেছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় এবং খাতভিত্তিক মজুরি নিশ্চিতে জাতীয় নিম্নতম মজুরি ও কমিশন ঘোষণা, শ্রমিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে ট্রেড ইউনিয়ন শর্ত শিথিল, সুসমন্বিত শিল্প সম্পর্ক ও সামাজিক সংলাপ চর্চা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও পেশাগত স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার বিষয়টি। এছাড়া শ্রম সংক্রান্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহের কার্যকারিতা-স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা, সরকারি শ্রম তথ্যভান্ডার তৈরি, সম-অধিকার নিশ্চিত ও বৈষম্য দূরীকরণে উদ্যোগ, মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা, যৌন হয়রানি মুক্ত কর্ম পরিবেশ, শ্রমিকের দক্ষতার আধুনিকায়ন ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সংসদসহ সর্বত্র শ্রমিকের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নিশ্চিতে নীতি প্রণয়ন, আপদকালীন তহবিল গঠন, শ্রমিক ইতিহাস-ঐতিহাসিক স্থান সুরক্ষা ও স্মৃতিসৌধ গঠন , শহীদ স্বীকৃতি, পুনর্বাসন, চিকিৎসা ও ন্যায় বিচার, ক্ষতিপূরণ ও আহতদের পুনর্বাসন, চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় যথাযথ নীতি গ্রহণ, মর্যাদাপূর্ণ-হয়রানিমুক্ত কর্মপরিবেশ ও আদালতে বাংলাভাষার প্রচলন করা: আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি ও মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ, শিশু-কিশোর ও জবরদস্তিমূলক শ্রম বন্ধ ও নিরাপত্তা: জলবায়ু ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বিবেচনায় কর্মপরিবেশ গঠন, অভিবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা শ্রম বিষয়ক গবেষণা ও জরীপ।একইসাথে ২০২৬ এর আইএলও-তে প্রতিবেদন পেশ লক্ষ্য করে কমিশনের সুপারিশের আলোকে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন। এছাড়া শ্রম খাতের গুরুত্ব বিবেচনায় একটি স্থায়ী শ্রম কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
কমিশন সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, কমিশন প্রস্তাব করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়ের চারটি অধিদফতর, সংবিধান ও শ্রম অধিকার, শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি, জাতীয় ও খাতভিত্তিক মজুরি নিশ্চিতকরণ, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা, সংগঠনের অধিকার, অংশগ্রহণ ও দরকষাকষি অধিকার, জাতীয় শ্রম তথ্যভান্ডার গঠন, অভিবাসী শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ও দক্ষতা উন্নয়ন, কমিশন প্রস্তাব করেছে একটি স্থায়ী শ্রম কমিশন গঠনের এবং সরকারকে ২০০৬ সালের বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন করার।
তিনি বলেন, কমিশন বিশ্বাস করে যে, কমিশনের সুপারিশগুলো শুধু কাগজে বন্দী না হয়ে, শ্রমিক-কৃষকের জীবনযাত্রায় বাস্তবায়িত হবে। কমিশন প্রত্যাশা করছে, এই সুপারিশগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হবে।
এদিকে, সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন, এ তথ্য জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সুপারিশ সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
ওই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিটি শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে। কর্মক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিশেষ সুপারিশ করেছে কমিশন। সেগুলো হলো, শ্রম আইনে মহিলা শব্দের পরিবর্তে নারী শব্দ ব্যবহার এবং কর্মক্ষেত্রে তুই/তুমি সম্বোধন বন্ধ করা। শ্রমিকদের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ও শ্রমিকদের নিবন্ধন থেকে শুরু করে পরিচয়পত্র দেওয়ার সুপারিশও রয়েছে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/আরএস