পুরোনো রাজনৈতিক ধারা ফেরত আসতে দেব না: সামান্তা শারমীন
২১ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৪৭ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৫৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাংলাদেশে পুরোনো রাজনৈতিক ধারা ফেরত আসতে দেবেন না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমীন।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের জুলাই স্মৃতি হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘রাজনীতি এবং নাগরিক হিসেবে নারী’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে এনসিপি, চট্টগ্রাম নারী সেল।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ করাতে এনসিপি কাজ করবে জানিয়ে সামান্তা শারমীন বলেন, ‘বাংলাদেশে মেধা নির্ভর এবং যোগ্যতাভিত্তিক রাজনীতির পট পরিবর্তন আমরা করেছি। আর কোনোদিন পুরোনো রাজনৈতিক ধারা ফেরত আসতে দেব না। এখন বাংলাদেশের মেয়েদের সামনের সারিতে আনা যায়। তাদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার যে উদ্দীপনা আছে সেটা আরও কীভাবে বাড়িয়ে তোলা যায় সেজন্য এনসিপি কাজ করবে।’
‘এনসিপির সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা আছে। প্রধানত আপনারা দেখবেন, নারীরা আন্দোলনে কেনো স্বস্তি অনুভব করেছিল। আন্দোলনে তাদের নিরাপত্তা কেন বেশি ছিল। আন্দোলনে গুলি চলেছে। মেয়েরা শহিদ হয়েছে। কিন্তু তারা ভয় পায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে গেলে তাদের মর্যাদাহানি হতে পারে। তবুও তারা ভয় পায়নি। কারণ সে সুযোগ ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এখনও সে সুযোগটি রয়ে গেছে। এ সুযোগটি তৈরি হওয়ার কারণ, বাংলাদেশের রাজনীতি এখনও অর্থ ও ক্ষমতা নির্ভর। এ রুলস অব দ্যা গেম আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। বাংলাদেশের তরুণরা তারুণ্যনির্ভর যে রাজনীতি বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে আমরা রুলস অব দ্যা গেম চেঞ্জ করে ফেলেছি।’
এনসিপি নেতা সামান্তা শারমীন বলেন, ‘এ অঞ্চলে নারীদের সংগ্রামী ভূমিকা আছে। এ ইতিহাস আমরা বিভিন্ন সময়ে বইপত্রে পড়েছি। আমরা দেখেছি ৪৭, ৫২-তে নারীদের ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধ ও গণঅভ্যুত্থানের সময় নারীদের সংগ্রামের ভূমিকার কথা আমরা জানি। আমরা সেসব পড়েছি। আমরা অনেকদিন দেখিনি নারীদের সামনে। মাত্র কয়েকজন নারীকে আমরা সামনে দেখেছি। তার মানে শেখ হাসিনা নারীদের রাজনীতিতে যেভাবে নিয়ে আসার কথা সে দৃশ্যপটকে পুরোপুরি কলুষিত করেছে। শেখ হাসিনার ভূমিকার কারণে মেয়েরা আর কোনোদিন মনে করে না তাদের রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে হবে।’
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে সামান্তা শারমীন বলেন, ‘নারীদের রাজনীতিতে না আসার পেছনে আরও একটি কারণ আছে। ৩১ দফায় নারীর ক্ষমতায়নের কথা অনেকে বলছেন। কিন্তু সুকৌশলে সংসদে নারীদের জন্য যেসব সিট রাখা আছে সেখানে প্রত্যক্ষ ভোট ৫৩ বছর ধরে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের মেয়েরা প্রত্যেকটি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে। সেসব সংগ্রামে তার রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে পুরো মুভমেন্টকে চেঞ্চ করে দেয়। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের কথা আমি বলতে পারি। অন্তত চারটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের মেয়েরা এ অভ্যুত্থানের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।’
‘কিন্তু সেখান থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি এ দলগুলোর, যারা অভ্যুত্থানের পর তাদের ৩১ দফায় নূন্যতম পরিবর্তন আনেননি। নারীদেরকে দায়িত্বশীলতার জায়গায় নিয়ে আসার জন্য একটি মাত্র দাবি আমাদের। সেটা হচ্ছে প্রত্যক্ষ ভোট। ১০০ আসনে নারীরা নারীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবেন। এ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশে নারীদের নেতৃত্ব তুলে আনার নতুন প্রচেষ্টা দেখতে পাব।’
নারীদের সামনের সারিতে না আনলে রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয় হওয়ার সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে ২৪’র ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নারীরা অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন করে ফেলেছে। শুধু সেটা উপলব্ধি করতে পারছে না রাজনৈতিক দলগুলো। এখানে বাংলাদেশের নারীদের সামনের সারিতে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভূমিকায় রাখা ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দল সক্রিয় হতে পারবে না। এটা ছাড়া জনগুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় হওয়ার সুযোগ তাদের নেই। এ পরিবর্তন বাংলাদেশে ঘটে গেছে। ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ পরিবর্তন বাংলাদেশের মেয়েরা ঘটাতে পেরেছে।’
সামান্তা বলেন, ‘আমাদের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির নতুন পথ চলা শুরু করেছি সেটার মধ্য দিয়ে নারীরা কমফোর্ট জোন পাবেন। আমাদের যে যুব ও ছাত্র শাখা আছে সেখানে বেশি বেশি নারীদের অংশগ্রহণের ওপর জোর দিচ্ছি। সামনে আরও বেশি করব। সব ফোরামেই যাতে নারী নেতৃত্ব ওঠে আসে সেটা নিশ্চিত করব। সামনের দিনের রাজনীতিতে আমরা নারীদেরকে যত বেশি সাহস দিতে পারব তারা তত রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার উদ্দীপনা পাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এনসিপির পক্ষ থেকে আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলেছি। আপনারা দেখেছেন, গণপরিষদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে টালবাহানা এবং নানা ধরনের অসহযোগিতা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে যে পুরোনো সংবিধান, সেটা কোনোভাবেই জনবান্ধব নয়। নারীবান্ধবতো নয়ই। এ সংবিধানকে পরিবর্তন করতে হলে আমাদের গণপরিষদ নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। তারপরে যে সংবিধান প্রণয়ন কমিটি হবে, আমরা সেখানেও নারীদের সর্বোচ্চ ভূমিকা দেখতে চাই।’
‘সেখানে আমরা সব রকমের মত দল পক্ষ নির্বিশেষে সবাই যেন নারী নেতৃত্ব তুলে আনতে পারে, সেটার চাপ আমরা আমাদের পক্ষ থেকে দিতে চাই। সব রাজনৈতিক দলের কাছে আমাদের বক্তব্য থাকবে, আপনারা আপনাদের দলে নারী নেতৃত্ব কেন ৪০ বছর পরেও তুলে আনতে পারছেন না সে জবাবদিহি জনগণের কাছে করেন।’
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার, তাসনুভা জেরিন এবং উত্তরাঞ্চলের সংগঠক রাসেল আহমেদ।
সারাবাংলা/আইসি/এনজে