Monday 21 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিঅ্যান্ডএফকে ম্যানেজ
মিথ্যা ঘোষণায় ফ্রিজ-এসির ৫০ কোটি টাকার গ্যাস আমদানি

উজ্জল জিসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২১ এপ্রিল ২০২৫ ২২:০০

রিফ্রিজারেন্ট। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই অবৈধভাবে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার গ্যাস (রিফ্রিজারেন্ট) আমদানি করেছে বিভিন্ন কোম্পানি। এসব গ্যাস এসি ও ফ্রিজে ব্যবহার করা হয়। এই গ্যাস বিপজ্জনক হওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। সে কারণে বিস্ফোরক পরিদফতর ও পরিবেশ অধিফতর গ্যাস যাচাই-বাছাই করে থাকে। কিন্তু কোনোরকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই মিথ্যা ঘোষণায় কোম্পানিগুলো বিপুল পরিমাণ গ্যাস আমদানি করেছে। এতে অন্যান্য নিয়ম-নীতি ভঙ্গের পাশাপাশি সরকার রাজস্বও বঞ্চিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে গ্যাস আমদানিকারক ও জড়িত সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচলক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব তরফদার সোহেল রহমান। তিনি বাংলাদেশ রিফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ব্রামার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

রোববার (২০ এপ্রিল) এসংক্রান্ত লিখিত অভিযোগের কপি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, কাস্টমস গোয়েন্দা’র মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে। সেই অভিযোগের কপি সারাবাংলা ডটনেটের হাতেও রয়েছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১২ এপ্রিল পরিবেশ অধিদফতর কর্তৃক ২০২৫ সালের এইচএফসি কোটার অনুকূলে রিফ্রিজারেন্ট আমদানি লাইসেন্স অনুমোদন করা হয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স লাইসেন্স অনুমোদনের আগেই রিফ্রিজারেন্ট আমদানি করে বন্দর হতে পণ্য খালাস করে। একইভাবে আমদানি করা রিফ্রিজারেন্ট কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্তৃক রিফ্রিজারেন্ট পণ্য খালাসের ডকুমেন্টের সঙ্গে পরিবেশ অধিদফতর ইস্যুকৃত প্রতিটি রিফ্রিজারেন্ট আমদানি লাইসেন্সের কপি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। ওই লাইসেন্সে রিফ্রিজারেন্টের ধরণ, অনুমোদনকৃত পরিমাণ, আমদানির মেয়াদকাল উল্লেখ থাকে। যেখানে লাইসেন্সের অনুমোদন করা হয়নি, সেখানে এক্সামিনারসহ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কোন পদ্ধতি অনুসরণে ১০০ ভাগ এক্সামিনের মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারি করা হয়েছে- বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এনবিআর’র ডাটার তথ্যানুসারে, গ্যাস আমদানির জন্য আবেদন জমা পড়েছিল ৪৩০টি। গত ১২ এপ্রিল পরিবেশ অধিদফতর ৩০৮টি প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস লাইসেন্স দেয়। তবে অবৈধভাবে অনেকগুণ বেশি গ্যাস আমদানি করে কিছু কোম্পানি। অনুমোদন ছাড়াই রাফি এন্টারপ্রাইজের (যার কাস্টমস ইনভয়েস নম্বর এসডাব্লিউ৬২৩২৫০১৪৫) মালামাল ‘শতভাগ পরীক্ষণ পূর্বক’ রিলিজ করেন সহকারী রাজম্ব কর্মকর্তা সাইফুল করিম। এতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কোনো অনুমোদন নেই। যা পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি।

বিজ্ঞাপন

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, একটি প্রতিষ্ঠানকে আর-৪০সি গ্যাস ১ হাজার ২৪৪ কেজির অনুমোদন দেয় পরিবেশ অধিদফতর। কিন্তু ওই কোম্পানি অবৈধভাবে আমদানি করেছে ৬ হাহাজার ৭৯৮ কেজি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ডাটা বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ২৩০ দশমিক ২০ টন গ্যাস রিলিজের জন্য অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদকের হাতে তথ্য রয়েছে যে, চারটি কোম্পানির ৪৬ দশমিক ৮০ টন গ্যাস কাস্টমস থেকে রিলিজ করে গোডাউনে সংরক্ষণ করেছে।

এক্ষেত্রে বেশিরভাগ গ্যাস কাস্টমস থেকে অবৈধভাবে রিলিজের ক্ষেত্রে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে চট্টগ্রামের মুজিব রোডের ১৫১ সুলতান সুপার মার্কেটের তাজ এজেন্সিজ। তবে এ বিষয়ে চেষ্টা করেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অবৈধভাবে অর্ধশত কোটি টাকার গ্যাস আমদানিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাফি এন্টারপ্রাইজ, সুপ্রিম এয়ারকন্ডিশনিং কোম্পানি, মাসুম ট্রেডার্স, বিজয় ট্রেডার্স, বিসমিল্লাহ রিফ্রিজারেশন, মেসার্সস তালুকদার ট্রেড সেন্টার, ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডাস্টিজ, আজিজ ট্রেড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, মেসার্স নাবিল ট্রেড করপোরেশনসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে জানতে রাফি এন্টারপ্রাইজের মালিককে ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এছাড়া, মাসুম ট্রেডার্স ও নাবিল ট্রেড করপোরেশনের মালিকদের ফোন করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।

লাইসেন্স পাওয়ার আগেই কীভাবে পণ্য আমদানি করা হলো এবং তা পরিবেশ অধিদফতরের কোনো কর্মকর্তা জানেন কি না? জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কথা বলতে রাজি হননি। তবে পরিবেশ অধিদফতর সূত্র জানায়, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তারা বৈঠকে তুলবেন। এ ছাড়া, এনবিআরকে অবহিত করার জন্য চিঠিও দেওয়া হবে।

সারাবাংলা/ইউজ/পিটিএম

আমদানি গ্যাস ফ্রিজ-এসি মিথ্যা ঘোষণা সিঅ্যান্ডএফ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর