Monday 21 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সংবিধান সংশোধন হলে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদদের খেলা খতম’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২১ এপ্রিল ২০২৫ ২১:২৩ | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫ ০০:০৪

চট্টগ্রামে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিএনপি নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেছেন, সংবিধান পরিবর্তন করতে হলে গণপরিষদ লাগবে, এটা সবাই বোঝে। শুধু কিছু বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বোঝেন না, কারণ সংবিধান পরিবর্তন হলে তাদের খেলা খতম।’

সোমবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের জুলাই স্মৃতি হলে এনসিপি আয়োজিত ‘রাজনীতি এবং নাগরিক হিসেবে নারী’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

বিএনপি নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে সরোয়ার তুষার বলেন, ‘বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটার পরে আমরা বলছি যে, বিদ্যমান সংবিধান আমাদের কোনো কাজেই আসছে না, এটা বাদ দিতে হবে। কিন্তু তারা বলছে সংবিধান বাদ দেওয়া যাবে না। অথচ তারা কী করেছে জানেন, একজন ব্যক্তিকে সুবিধা দেওয়ার জন্য তারা তিন-তিনবার সংবিধান সংশোধন করেছে। ষষ্ঠ সংশোধনী দেখেন, উপ-রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় আব্দুস সাত্তার, তাকে রাষ্ট্রপতি বানাতে হবে, এজন্য তারা সংবিধান সংশোধন করেছে। একাদশ সংশোধনীতে সাহাবউদ্দিন সাহেবকে প্রধান উপদেষ্টা থেকে প্রধান বিচারপতি বানাবে, এজন্য তারা সংবিধান সংশোধন করেছে। চতুর্দশ সংশোধনী, বিচারপতি কে এম হাসান সাহেবকে প্রধান উপদেষ্টা বানাতে হবে, এজন্য তারা আবার সংবিধান সংশোধন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘এই চতুর্দশ সংশোধনী করতে গিয়েই কিন্তু লগি-বৈঠা ঘটল, লাশের ওপর নৃত্য, এক-এগারো এল এবং আওয়ামী লীগের এই ১৫ বছর। এটার সবচেয়ে বড় ভিকটিম হচ্ছে তারাই যারা চতুর্দশ সংশোধনী করেছে। জনগণের কোনো ধরনের সম্মতি ছাড়া যারা ষষ্ঠ, একাদশ ও চতুর্দশ সংশোধনী করেছে, আজ তারা বলছে আমরা নাকি গণঅভ্যুত্থানের পরে সংবিধান সংশোধন করতে পারবো না, শেইম। সংবিধান আমাদের পরিবর্তন করতে হবে, এটা গণঅভিপ্রায়।’

বিজ্ঞাপন

‘আমাদের বলা হয়েছে, আমরা নাকি গণপরিষদ নির্বাচন বুঝি না। আপনারা কি সংবিধান পরিবর্তন চান না কি চান না- সেটা বলেন। সংবিধান যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে গণপরিষদ লাগবে, এটা আমাদের ভাইয়েরা বোঝে, বোনেরা বোঝে, প্রাপ্তবয়স্ক সকল জনগণ বোঝে, একটা জেনজিও বোঝে। শুধু আপনারা বোঝেন না, কেন বোঝেন না আপনারা, এই যে যারা আমাদের জ্ঞান দিচ্ছেন, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, আপনারা বোঝেন না, কারণ এই সংবিধান পরিবর্তন হলে আপনাদের খেলা খতম। আপনারা এক্সপায়ার্ড হয়ে গেছেন। দ্রুত এটা মেনে নেন যে, আপনারা এক্সপায়ার্ড। এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদদের দিয়ে আর কিছুই হবে না। নতুন সময়ের জন্য নতুন ধরনের রাজনীতি দরকার।’

তিনি বলেন, ‘যে সিরিয়া আমাদের দেখাদেখি তাদের আসাদকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে, আর আমাদের এ সংবিধানটা এখনো রাখতে হচ্ছে তথাকথিত সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার নামে। অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকারের প্রস্তাব ছাত্ররা দিয়েছিল। কারা বিরোধিতা করেছিল, সেটা ইতিহাস একদিন কথা বলবে। আজ যত সংকট দেখতে পাচ্ছেন, সব সংকটের গোড়া হচ্ছে সেখানে। চট্টগ্রামে যদি আপনারা (এনসিপি কর্মী) মনে করেন যে, অমুক-অমুক দলের অনেক বড় বড় নেতা আছেন। আমি বলবো, এগুলোর দিন শেষ। আপনারা যদি রাস্তায় একবার মহড়া শুরু করেন, এসব ভেসে যাবে। এসব হেভিওয়েট নেতাদের আর কোনো দাম নেই। হেভিওয়েট নেতার দিন শেষ, সোনার বাংলাদেশ।’

গণঅভ্যুত্থানের পর লেখা চট্টগ্রামে অনেক দেয়াল লিখন মুছে ফেলার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এটা দেখলে অনেকের অস্বস্তি লাগে। শুধু আওয়ামী লীগের না, আরও অনেক মাঠের খেলোয়াড় আছে, যাদের জন্য এই যে দেয়ালের কথাগুলো, এগুলো খুবই অস্বস্তিকর। তারা চায় এগুলো মুছে যাক।’

সংবিধান সংশোধনের বিরোধিতাকারীদের প্রত্যাখানের আহ্বান জানিয়ে সরোয়ার বলেন, ‘সংবিধান শুধু বিশেষজ্ঞদের বিষয় নয়, এটা আমজনতার, আপনার-আমার আলাপ। এটা নিয়ে আমাদের আলাপ করতে হবে। যারা বলবে তুমি কি বোঝ সংবিধানের, তাকে বলবেন- গেইট লস্ট। কারণ সংবিধানটা হচ্ছে জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের দলিল। জনগণের ইচ্ছা, অভিপ্রায়, দলিল নিয়ে জনগণ কথা বলবে। জনগণের মুখ যারা স্তব্ধ করতে চাইবে, আপনারা তাদের বলবেন, আপনাদের আমাদের দরকার নেই।’

‘সংবিধান সংশোধন করতে হলে অবশ্যই জনগণের কাছে যেতে হবে, গণভোট নিতে হবে। জনগণের মতামত ছাড়া সংশোধন করা যাবে না। বলা হচ্ছে, দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে সংসদে সংবিধান সংশোধন করা যাবে। এখানে একটা বিষয় আছে। ৪০ শতাংশের ভোট কম পায়, কিন্তু আসন বেশি। এটা কিভাবে হয় ? ধরেন চট্টগ্রাম অঞ্চলে, এখানে তাদের ভোট বেশি, তারা এখানে আসন বাড়িয়ে দেবে আর যেখানে ভোট কম সেখানে আসন কমিয়ে দেবে। ভোটের হিসেবে দেখবেন, যে দল দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেয়েছে, সে ভোট পেয়েছে ৪০ পারসেন্টের কম। এত কম ভোট পেয়ে তারা সংবিধানে এমন এমন সংশোধনী করেছে, যার জন্য আমাদের আজ ভুগতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে বলেছি, সংবিধান সংশোধন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে। যারা গণভোটের বিরোধিতা করছে তাদের আপনারা প্রত্যাখান করুন।’

নারীদের জন্য ১০০ আসনে সরাসরি ভোটের জন্য সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কমিশন প্রস্তাব করেছে যে, ১০০ আসনে সরাসরি ভোটের মধ্য দিয়ে নারীরা সংসদে যাবে। এই প্রস্তাবের যারা বিরোধিতা করেছে, আগামী ইলেকশনে আপনারা তাদের প্রত্যাখান করবেন, এটা আমার আপনাদের কাছে প্রত্যাশা। এখন যে সংরক্ষিত মহিলা আসন আছে, এর মধ্যে কোনোভাবেই নারীর ক্ষমতায়ন ঘটে না। এটা হচ্ছে অমুকের খালা, অমুকের চাচী, তমুকের বোনদের সংসদে চলে যাওয়া। সংসদে গিয়ে যারা শেখ হাসিনার প্রশংসা গাইবে, যারা রিডিং পড়তে জানে না- এ ধরনের সংরক্ষিত নারী আসনের আমাদের দরকার নেই। সারাদেশে ১০০ আসনে নারীরা নারীদের সঙ্গে ফাইট করবে, সেখান থেকে নারীরা সরাসরি জনগণের ভোটে সংসদে যাবে।’

‘দেখেন দুজন পুরুষ নেতা বা এমপিকে কনভিন্স করে তারপর কিন্তু সংরক্ষিত নারী আসনে সদস্যপদ পেতে হয়, এটা চরম অবমাননাকর। এটা থাকতে পারে না বাংলাদেশে। সুতরাং ১০০ আসনে নারীদের জন্য সরাসরি ভোটের যে কথাটা কমিশন বলেছে, আমরা সেটাকে সমর্থন করি এনসিপির পক্ষ থেকে। আমরা বলেছি, এটা জরুরি, এটা দরকার। এটার যারা বিরোধিতা করছে, সেটা যে দলই হোক, আপনারা তাদের আগামী ইলেকশনে ভোট বিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রত্যাখান করুন। কারণ, তারা নারীশক্তির বিরোধী। বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক হচ্ছে নারী, সুতরাং তাদের যারা অবজ্ঞা করবে, তাদের যারা পেছনে টেনে ধরতে চাইবে, তাদের বাংলাদেশে কোনো ভবিষ্যত নেই।’

এনসিপির নারী কর্মীদের উদ্দেশে সরোয়ার ‍তুষার বলেন, ‘যে নেতা পদ পাবার পরে আপনাদের ভুলে যাবেন, সেই নেতাকে আপনারা ভুলে যান। যে নেতা আপনাদের ফোন ধরবে না, দূরত্ব মেইনটেইন করবে এবং নেতাসুলভ আচরণ করবে, আপনাকে কর্মী বানিয়ে দেবে, এ ধরনের নেতা আমাদের দরকার নেই। যত বড় নেতাই হোক, ফোন ধরতে হবে। নেতাটা অর্গানিকভাবে আসতে হবে, কর্মীদের বলতে হবে যে উনি আমাদের নেতা। কিন্তু যারা বলবে আমার অমুক পদ, সুতরাং আমি নেতা, তোমরা কর্মী- এভাবে যারা বলবেন, তাদের আপনারা প্রত্যাখান করবেন।’

‘বোনদের বলি, জুলাই মাসে আপনারা দাঁড়িয়েছেন আপনাদের নিজেদের জন্য, আপনাদের যে অমর্যাদাকর জীবন, গণহত্যাকারী পলাতক শেখ হাসিনার সরকার, বাংলাদেশের জনপরিসরকে নারীদের জন্য যে ধরনের অনিরাপদ জনপরিসরে পরিণত করেছিল, শেখ হাসিনার পান্ডারা জয় বাংলা বলে বলে যেভাবে আমাদের নারীদের অপমান করে গেছে, জয় বাংলা বলে বলে তারা যতদূর যেত, ততদূর আমাদের নারীদের অপমান করতে করতে যেত, এটাই ছিল জনপরিসরে তাদের কর্মকাণ্ড, তারা জয় বাংলা স্লোগানকেও অপমান করেছে, বাংলাদেশের নারীদেরও অপমান করেছে।’

তিনি বলেন, ‘১৪ জুলাই রাজাকার বলার পরে আপনারা (নারী) যা করলেন, সেটা আপনারা কোনো ভাইকে রক্ষা করতে আসেননি, ভাইকে রক্ষা পরের ব্যাপার, আসলে আপনারা নিজেদের মর্যাদার জন্য ফাইট করেছেন, সুতরাং এটা মাথায় রেখে বলছি, আমরা হচ্ছি সহযাত্রী। আপনি নিজে কী ধরনের বাংলাদেশ চান, সেটার জন্য লড়েন, সেখানে এখন পুরুষ আপনাকে শক্তি দেবে, প্রেরণা দেবে।’

সভায় আরও বক্তব্য দেন- এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমীন ও তাসনুভা জেরিন এবং উত্তরাঞ্চলের সংগঠক রাসেল আহমেদ।

সারাবাংলা/আরডি/এইচআই

এনসিপি জাতীয় নাগরিক পার্টি সংবিধান সংবিধান পরিবর্তন সরোয়ার তুষার