কুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এনসিপি’র সংহতি
২২ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:১৪
ঢাকা: কুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে এনসিপি। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানান তারা।
লিখিত বক্তব্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দিন শিফাত বলেন, ‘সোমবার থেকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য জনাব মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বহিরাগতরা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ হামলা চালায়। হামলায় প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ আমরা দেখেছি গত ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত বহিস্কৃত শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশ না করলেও, একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বহিস্কৃত শিক্ষার্থীদের মাঝে ৭ জন নিজ দলের কর্মী থাকার কথা বলেছেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।‘
সালেহ উদ্দিন শিফাত বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরে এই ধরনের আচরণ আমরা বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে লক্ষ্য করেছি। এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে, শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা এবং ভিসি মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল থেকে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে অনশনরত ৩ জন শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে এখন পর্যন্ত ২৬ জন শিক্ষার্থী অনশনরত অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।’
এনসিপির এ নেতা বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে হামলার সময় উপাচার্যকে শারিরীকভাবে হেনস্থা করার যে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তারও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদে অধিকার সকলের রয়েছে, তবে শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা হলে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দুই মাস আগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কুয়েট শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি জমা দিলেও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যা চরম দায়িত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ। আগামীকাল বুধবার ইউজিসির একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিনে পরিদর্শনে কুয়েটে যাবেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ধীর পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের প্রতি অবহেলার বহিঃপ্রকাশ, যা হতাশাজনক বলে আমরা মনে করি।’
সালেহ উদ্দিন শিফাত আরও বলেন, ‘ছাত্রদের নেতৃত্বে সংঘটিত জুলাই অভ্যুত্থান থেকে সৃষ্ট রাজনৈতিক দল হিসাবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি-দাওয়ার সঙ্গে একাত্বতা পোষণ করাকে দায়িত্ব মনে করে। এনসিপি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের কাছে দাবি জানায় অনতিবিলম্বে কুয়েটে চলমান অচলাবস্থা নিরসন করে হল খুলে দেওয়া হোক। আমরা দেখেছি এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে ঐক্যমত পোষণ করে আমরা কুয়েটের ভিসি জনাব মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি।’
সার্বিক বিষয়ে ইউজিসির নেতৃত্বে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সালেহ উদ্দিন শিফাত।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন, যুগ্ম সদস্য সচিব ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, নিজাম উদ্দিন, জয়নাল আবেদীন শিশির ও সাইফ মোস্তাফিজ।
সারাবাংলা/এফএন/এইচআই
অনশন এনসিপি এনসিপি’র সংহতি কুয়েট কুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জাতীয় নাগরিক পার্টি ভিসির পদত্যাগ