ফুরিয়ে আসছে প্রাকৃতিক গ্যাস, সংকট মোকাবিলায় নতুন উদ্যোগ
২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০০ | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০৫
ঢাকা: দেশের জ্বালানির অন্যতম প্রধান উৎস প্রাকৃতিক গ্যাস। শিল্প, কল-কারখানা, পরিবহণ, গৃহস্থালির পাশাপাশি গ্যাসের একটা বড় অংশ প্রয়োজন হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনেও। কিন্তু দিন দিন দেশীয় উৎসের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত কমে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে গ্যাস মজুত আছে তা দিয়ে আগামী ১০ বছরের বেশি যাবে না। এটি জ্বালানি নিরাপত্তায় বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন নীতি নির্ধারকরা।
এদিকে দেশীয় উৎসে গ্যাস কমে যাওয়ায় নির্ভরতা বাড়ছে আমদানি করা গ্যাসে। এই পরিস্থিতিতে দুই পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। একদিকে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহে আমদানি ঠিক রাখা, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গ্যাসের মজুত বাড়ানো। সেজন্য কূপ খননের পাশাপাশি বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
জ্বালানি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, দেশে মোট গ্যাসক্ষেত্রের সংখ্যা ২৯টি। এর মধ্যে ২০টি থেকে নিয়মিত গ্যাস উত্তোলন চলছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড-বাপেক্স, পেট্রোবাংলা এবং আন্তজার্তিক কোম্পানির মাধ্যমে এসকল কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হয়। তথ্যানুযায়ী দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। গত কয়েক বছর ধরে ৩০০ কোটি ঘনফুটের মতো উৎপাদন করে সরবরাহ ঠিক রেখে আসছিলো পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে দেশীয় উৎস থেকে আসতো ২২০ কোটি ঘনফুট, বাকিটা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস-এলএনজি আমদানি করে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু তা দিন দিন কমতে কমতে এখন ২০০ কোটি ঘনফুটের নিচে নেমে গেছে।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ করপোরেশন-পেট্রোবাংলার গেল বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের প্রতিবেদন বলছে, দেশে মজুতকৃত গ্যাসের পরিমাণ ৩০ দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন ঘণফুট। এর মধ্যে ১৯ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ঘণফুট ব্যবহৃত হয়েছে। বর্তমান ব্যবহারের হারে যে মজুত আছে তাতে আগামী ১০ বছরের মতো চলবে, যা জ্বালানি নিরাপত্তায় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে বলে আসছি গ্যাস সংকট সমাধানে দেশীয় গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই। কিন্তু সবসময় সরকারকে দেখেছি আমদানির ওপরে বেশি নির্ভর হতে।’ দেশের স্থলের পাশাপাশি সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের জোর তৎপরতা চালানোর তাগিদ দেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, গেল কয়েক বছরে আওয়ামী লীগ সরকার দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে গুরুত্ব না দিয়ে আমদানির দিকে ঝুঁকেছে। ফলে দেশীয় উৎসের গ্যাস উৎপাদন কমে গেছে। অন্যদিকে বাড়ছে আমদানি করা গ্যাসের দাম। এই পরিস্থিতিতে বছর তিনেক আগে ৫০টি কূপ খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়, সেটিও বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গ্যাস উৎপাদনের পাশাপাশি অনুসন্ধানে জোর দেয়। আগের ৫০ কূপ খননের পাশাপাশি আগামী বছর থেকে আরও ১০০ কূপ খননের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে ৫০টি কূপ খনন করা গেলে জাতীয় গ্রিডে দিনে অন্তত ৬৫ কোটি ঘণফুটের মতো গ্যাস যুক্ত হতো। এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস পেতে আগের কিছু পরিকল্পনার সঙ্গে আরও কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। এরই মধ্যে বেশকিছু কূপ সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। সেখান থেকে গ্রিডে গ্যাস যোগ হচ্ছে।’
সুত্রে জানায়, জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ২০২৮ সালের মধ্যে ১০০ নতুন কুপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে। সমুদ্রসীমায় অনুসন্ধান চলছে। আবার তিনশ’ স্থানে গ্যাস পাওয়া যেতে পারে এমন স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এদিকে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে দুটি প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিতাস ও বাখরাবাদ ফিল্ডে দু’টি গভীর অনুসন্ধান কূপ খনন এবং বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের খনন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণ।
এই দুই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০০ কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে তিতাস ও বাখরাবাদ ফিল্ডে দুটি গভীর অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্পের ব্যয় হতে পারে ৭৯৮ কোটি টাকা। এটি ২০২৫ সালে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের মার্চ নাগাদ শেষ হওয়ার কথা। পেট্রোবাংলা বলছে, এটি বাস্তবায়িত হলে এখান থেকে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয গ্রিডে যোগ হবে।
প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছে পেট্রোবাংলা। সে সব বৈঠকে মজুত গ্যাসের সম্ভাবনা দেখা যাবে সেসব স্থানে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেখানে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি কূপ খননে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের কথাও বলেছিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম