Wednesday 23 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মিথ্যা’ মামলার ঘানি টানছেন জুলাই বীর ফাইয়াজ!

রাশেদ মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:০১

হাতকড়া পরিয়ে এভাবেই আদালতে নেওয়া হয়েছিল ফাইয়াজকে। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: কোমরে দড়ি, দুই হাতে হাতকড়া, যেন কোনো দাগি আসামি। জুলাই আন্দোলনে আটকের পর এভাবেই আদালতে নেওয়া হয়েছিল হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে। আটকের একটি ছবি নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফুঁসেছিল দেশ। তবু ‘পুলিশ সদস্য হত্যা’ মামলা কাঁধে নিয়ে যেতে হয়েছিল শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলে জামিনে মুক্তি মিললেও মামলার খাতায় রয়ে গেছে এই কিশোরের নাম।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা সরকার পতনের প্রায় নয় মাস হলেও এখনো আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের এই শিক্ষার্থীকে। হাজিরাও দিচ্ছেন নিয়মিত। সম্প্রতি এ নিয়ে অনেকেই লেখালেখি করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তার জন্য নিখেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনও। গত ১৯ এপ্রিল নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ফাইয়াজের সেই হাতকড়া পরানো ছবি দিয়ে একটি পোস্ট করেন এনসিপির এই নেতা।

বিজ্ঞাপন

আখতার হোসেন লিখেন, ‘ফাইয়াজ আমাদের ভাই। ’২৪-এর বীর যোদ্ধা। তার বিরুদ্ধে জুলাইয়ে হওয়া মামলা প্রত্যাহার বিষয়ে জটিলতার কথা ফেসবুকে লেখালেখি করছেন অনেকে। মামলার বিষয়টা পুরোপুরি জানা প্রয়োজন। আমরা যারা অতীতে মামলার ফাঁদে পড়েছি, আমরা জানি মামলার ঘানি টানা কতটা ভোগান্তির। আর ফাইয়াজ তো অনেক ছোট এখনো।’

এর পরদিনই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হওয়া ‘পুলিশ হত্যা মামলায়’ প্রধান দুই আসামি জবানবন্দি প্রত্যাহার করলে ফাইয়াজকে আদালতে যেতে হতো না। এছাড়া, মামলা তদন্তে থাকলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার অধিকার শুধু পুলিশ বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রয়েছে। যদি কোনো মামলার চার্জশিট হয়, তখন আইন মন্ত্রণালয়ের মামলা প্রত্যাহারের এখতিয়ার বা সুযোগ থাকে।’

তিনি বলেন, ‘ফাইয়াজের মামলা এমন একটি মামলা। যেখানে দুই আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তারা জবানবন্দি প্রত্যাহার না করলে মামলাটির নিষ্পত্তি বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া খুবই দুষ্কর; যা পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন। এখানে আইন মন্ত্রণালয়ের কিছুই করার নেই।’

তথ্যমতে, রাজধানীল মাতুয়াইল মাতৃসদন হাসপাতালের বিপরীতে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন পুলিশের নায়েক গিয়াস উদ্দিন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই রাতে তাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখে অজ্ঞাতরা। এ ঘটনায় ২৪ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন নিহতের বোনজামাই মো. ফজল প্রধান। ওই রাতেই ফাইয়াজকে নিজেদের মাতুয়াইলের বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে নিয়ে যায় সাধারণ পোশাকের একদল পুলিশ।

এর পর পুলিশ সদস্য হত্যা মামলায় ১৬ নম্বর আসামি হিসেবে ২৭ জুলাই তাকে আদালতে তোলা হয়। অন্য আসামিদের সঙ্গে ফাইয়াজকেও ১০ দিনের রিমান্ড চান মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে সবার সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মহানগর হাকিম শান্তা আক্তার। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় ফাইয়াজকে রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে দেশজুড়ে শুরু হয় সমালোচনা।

এছাড়া, ওই কিশোরকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে আনার ঘটনাটি নিয়েও শুরু হয় হৈচৈ। এ নিয়ে রিট হলে রাষ্ট্রপক্ষসহ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। এর পরই কোমরে দড়ি পরানো ভুল ছিল বলে স্বীকার করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরে ২৮ জুলাই রিমান্ড আদেশ বাতিল করে ফাইয়াজকে গাজীপুরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

এ প্রসঙ্গে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জহিরুল ইসলাম মুসা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফাইয়াজের মামলা প্রত্যাহার নিয়ে আইন উপদেষ্টার বক্তব্য কিছুটা ভিত্তিহীন। কেননা এ মামলায় নির্যাতনের মাধ্যমে ছাত্রদলের দুই নেতার কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়েছিল। মূলত জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করলে আদালতে প্রত্যাহারের আবেদন দেওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রায়ের সময় তা বিবেচনায় নিতে পারে আদালত।’

তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে হওয়া মিথ্যা ও হয়রানিমূলক সব মামলা নির্বাহী আদেশে প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মামলার যেকোনো পর্যায়েই এটির প্রয়োগ হতে পারে। ফাইয়াজসহ অনেক জুলাই যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে হওয়া মিথ্যা মামলা এখনো প্রত্যাহার হয়নি। হয়রানিমূলক এসব মামলার তথ্য সংগ্রহ করছে এনিসিপি। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সমন্বয় করছি। যেন দ্রুত এসব প্রত্যাহার করা হয়।’

সারাবাংলা/আরএম/পিটিএম

ঘানি জুলাই বীর ফাইয়াজ মিথ্যা মামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর